UA-199656512-1
top of page

অপপ্রচার :

সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন তত্ত্ব, অবতারতত্ত্ব নিয়ে অপপ্রচার করা হয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, ব্লগ, ইউটিউব ও সোশ্যাল মিডিয়ায়। বহুল প্রচারিত অপপ্রচারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) ই হলেন কল্কি অবতার।



শাস্ত্র রেফারেন্সের বিকৃত ব্যাখ্যা :


অথর্ববেদ ও ঋকবেদে নরাশংস নামক টার্ম আছে যার অর্থ “প্রশংসিত মানব”। তাদের দাবি এই নরাশংস ই হলো মোহাম্মদ।


১.“ইদং জনা উপ শ্রুত নরাশংস স্তবিষ্যতে ।

ষষ্টি সহস্রা নবতি চ কৌরম আরুশমেষু দদ্মহ ’’।। (অথর্ববেদ ২০/০৯/৩১)


এটি “কুন্তাপ সুক্ত” নামে পরিচিত যার উপলক্ষ “রাজধর্মোপদেশ”।

শ্লোকার্থ: হে মানবগণ সংসারে তারাই প্রশংসিত যারা উত্তম কর্মের সাথে যুক্ত। একজন যথার্থ রাজা এটি বিচার করে অনেক ব্যক্তির মধ্যে থেকে প্রকৃত নেতা/বীরকে চয়ন করে বহু দান দেবে।


এই শ্লোকে কোথাও মোহাম্মদ কে খুঁজে পেলেন? অথচ অপপ্রচারকারীরা এখানে মোহাম্মদ, মোহাম্মদের হিজরত, মরুভূমিতে বাস, উটের পিঠে ওঠা আদি নিদর্শন খুঁজে পেয়েছে।


২. “এষ ইষায় মামহে শতং নিষ্কান দশ স্রজঃ।

ত্রীনি শতান্যর্বতাং সহস্রা দশ গোণাম।।’’(অথর্ববেদ ২০/৯/৩১)


অর্থ: তিনি নিজেও পরিশ্রম করেন এবং পরিশ্রমী জনগণের মধ্যে একশত স্বর্ণমুদ্রা, দশটি মালা, তিনশত ঘোড়া আর দশ হাজার গাভী দান করেন।


এই শ্লোকে উল্লেখিত “মামহে” থেকে তারা ট্রান্সলেট করে “মোহাম্মদ” বের করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ”মামহে” অর্থ ”দান করেন” যা একটি ক্রিয়াপদ


এবার আসি ভবিষ্যপুরানে, সেখানে কল্কিদেবের উল্লেখ রয়েছে।


৩. “জিত্বা গান্ধারজান ম্লেচ্ছানকাশ্মীরান্নারবাঞ্ছঠান্

তেষাং প্রাপ্য মহাকোষং দণ্ডয়ো গ্যানকারয়ৎ

এতস্মিন্নন্তরে ম্লেচ্ছঃ আচার্যেণ সমন্বিতঃ ’’(ভবিষ্যপুরাণ, প্রতিসর্গ পর্ব, ৩য় খণ্ড)


অর্থ: তিনি(কল্কিদেব) আচার্য গণের সহিত গান্ধার (আফগানিস্তান), ম্লেচ্ছ(অবৈদিক ধর্ম অনুসরণকারী), কাশ্মীর ইত্যাদি জয় করে তাদেরদণ্ডদানস্বরুপ বহু কোশ প্রাপ্ত হলেন।


মুহাম্মদ আফগানিস্তান বা কাশ্মীর জয় করেননি।


৪. “নৃপশ্চৈব মহাদেবং মরুস্থলনিবাসিনম

গঙ্গাজলৈশ্চ সংস্নাপ্য পঞ্চগব্য সমন্বিতৈ”।।


অর্থ: রাজা ভোজ তখন মরুস্থলনিবাসী মহাদেবকে(শিবকে) গঙ্গাজল, পঞ্চগব্য দ্বারা অর্চনা করে সন্তুষ্ট করলেন।


এখানে স্পষ্ট মহাদেব শিবকে অর্চনা করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অপপ্রচারকারীরা মরুস্থলনিবাসী বলতে আরববাসী মোহাম্মদ কে খুঁজে পেয়েছে।


৫. “তৎ শ্রুত্বা পুণ্ডরীকাক্ষো ব্রহ্মাণমিদমব্রবীৎ।

শম্ভলে বিষ্ণুযশসো গৃহে প্রাদুর্ভবাম্যহম্ ।

সুমত্যাং মাতবি বিভো! -কন্যাযাং ত্বন্নিদেশতঃ ।। (কল্কিপুরাণ ১/২/৪)


অর্থঃ পুণ্ডরীকাক্ষ বিষ্ণু সেই কথা শ্রবণ করিয়া ব্রহ্মাকে কহিলেন, তোমার অনুরোধে আমি শম্ভল গ্রামে বিষ্ণুযশা নামক ব্রাহ্মণের গৃহে সুমতিনামক ব্রাহ্মণকন্যার গর্ভে কল্কিরুপে আবির্ভূত হ‌ইব।


যেখানে স্পষ্ট ব্রাহ্মণ উল্লেখ রয়েছে সেখানে তারা বিষ্ণুযশ কে আবদুল্লাহ এবং সুমতি কে আমেনা; গাঁজাখুরি আরবি ট্রান্সলেট করে দিয়েছে।


কল্কিদেবের জন্মতারিখ নিয়ে ভয়ানক মিথ্যাচার করে এই অপপ্রচারকারীর দল।



৬.“দ্বাদশ্যাং শুক্লপক্ষস্য মাধবে মাসি মাধবঃ।

জাতং দদৃশতুঃ পুত্রং পিতবৌ হৃষ্টমানসৌ।।(কল্কিপুরাণ ১/২/১৫)


অর্থ: বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষীয় দ্বাদশীতে ভগবান বিষ্ণু জন্মগ্রহণ করিলে তাহা দেখিয়া পিতা মাতা হৃষ্টচিত্ত হ‌ইলেন।


তারা বৈশাখ মাসকে বানিয়েছে রবিউল আউয়াল, দ্বাদশীকে বানিয়েছে মাসের ১২তারিখ।

এবার দেখুন হিজরি মাসের সাথে বাংলা মাসের কখনো ম্যাচ হয়না। যাদের বাড়িতে পঞ্জিকা আছে একটু মিলিয়ে দেখুন এবছর(২০২০) হিজরি (১৪৪২) ১২ই রবিউল আউয়াল পড়েছে ১৩ই কার্ত্তিকে আর ঐদিন শুক্লপক্ষের চতুর্দশী।

এবার গভীরে আসুন, তিথি নক্ষত্রের হিসাব সাধারণ দিনের হিসাব থেকে ভিন্ন। দ্বাদশী মানেই যে মাসের ১২তম দিন তা নয়। প্রায়ই দুই তিনটি তিথি একত্র হয়ে যায়। যারা একাদশী করেন তারা জানেন প্রায়‌ই একাদশী দশমী বিদ্ধা অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে দশমী, একাদশী, দ্বাদশী একদিনে পড়ে যাকে আমরা ত্রিস্পর্শা মহাদ্বাদশী বলে থাকি।


এবার ১৫নং শ্লোকে যে শম্ভল গ্রামের উল্লেখ রয়েছে তাকে আরবি ট্রান্সলেট করে মক্কা বানিয়ে দিয়েছে। অথচ ভারতের উত্তর প্রদেশের মোরাদাবাদ জেলায় শম্ভল নামক গ্রাম রয়েছে সেখানে সুপ্রাচীন কল্কি-বিষ্ণু মন্দিরে চতুর্ভুজ কল্কি ও পদ্মাদেবী পূজিতা হন।


৭.“চতুর্ভিভ্রাতৃভিদেব করিষ্যামি কলিক্ষয়ম্”(কল্কিপুরাণ ১/২/৫)


অর্থ: ভ্রাতৃচতুষ্টয়ের সহিত আমি কলিক্ষয় করিব।


৮.“কল্কের্জ্যেষ্ঠাস্ত্রয়ঃ শূবাঃ কবি প্রাজ্ঞ সুমন্ত্রকঃ।“(কল্কিপুরাণ ১/২/৩১)


অর্থ: কল্কির পূর্বে তাহার জ্যেষ্ঠ তিন ভ্রাতা কবি, প্রাজ্ঞ ও সুমন্ত্র জন্মগ্রহণ করেন।


অর্থাৎ তারা চারভাই(নাম সুস্পষ্ট) মিলে কলির বিনাশ করবেন। অথচ অপপ্রচারকারীরা এই চারভাইকে চার সঙ্গী যথাক্রমে আবুবকর, উমর, উসমান ও আলী বানিয়ে দিয়েছে।


৯.“অশ্বমাশুগমারুহ্য দেবদত্তং জগৎপতিঃ।

অসিনাসাধুদমনমষ্টৈর্য্যগুণান্বিতঃ।।

বিচরন্নাশুনা ক্ষৌণ্যাং হয়েনাপ্রতিমদ্যুতিঃ।

নৃপলিঙ্গচ্ছদো দস্যুন কোটিশো নিহনিষ্যতি।।“(ভাগবতম ১২/২/১৯-২০)


অর্থ: অষ্টৈশ্বর্য্যসমন্বিত, অতুলনীযয়কান্তি জগদীশ্বর কল্কিদেব দেবদত্তনামক অসাধুদমনকারী দ্রুতগামী অশ্বে ভুমণ্ডল পরিভ্রমণ করিয়া খড়গদ্বারা ছদ্মরাজবেশধারী অসংখ্য দস্যুগণের সংহার সাধন করিবেন।


তারা দাবি করে, মোহাম্মদ ঘোড়ায় চড়ে তরবারি নিয়ে যুদ্ধ করতেন। কিন্তু শুধু ঘোড়ায় চড়ে তরবারি হাতে নিলেই কেউ কল্কিদেব হয়ে যান না। আর তাছাড়া কল্কিদেব তরবারি নয় খড়গ ধারণ করবেন।

শ্লোকের “নৃপলিঙ্গচ্ছদঃ” শব্দের কদর্থ করে তারা বলে “লিঙ্গচ্ছেদকারী”। কিন্তু নৃপ-লিঙ্গ-আচ্ছাদঃ অর্থাৎ যারা রাজার(নৃপ) লিঙ্গ (চিহ্ন/বেশ) আচ্ছাদঃ( আচ্ছাদন/ধারণ করে)। সংস্কৃত না জেনে অর্থ করলে এরকম হয়।


কল্কিদেব মোহাম্মদ নন :

এবার আসুন দেখি কল্কিপুরাণে বর্ণিত কিছু নিদর্শন যা থেকে স্পষ্ট হবে কল্কিদেব কোনোভাবেই মোহাম্মদ নন।


১.“কল্কিদেব জন্মকালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ন্যায় প্রথমে চতুর্ভুজরূপ ও পরবর্তীতে দ্বিভুজ রূপ ধারণ করবেন।“(কল্কিপুরাণ ১/২/১৮-১৯)

২. “পরশুরাম, কৃপাচার্য, ব্যাসদেব ও অশ্বত্থামা তৎকালে ভগবান শ্রীহরির দর্শনে আগমন করেন।“(কল্কিপুরাণ ১/২/২৫)


মুহম্মদের জন্ম ইতিহাসে এধরনের তথ্য পাওয়া যায় না ।


৩. “কুমার কল্কিকে বিদ্যাশিক্ষার উপযুক্ত দেখিয়া বিষ্ণুযশ কহিলেন বৎস, এক্ষণে তোমাকে উপনয়নরূপ ব্রহ্মসংস্কার সম্পাদন করিয়া গায়ত্রী মন্ত্র উপদেশ দিব। তারপর তুমি বেদাধ্যয়ন করিবে।“(কল্কিপুরাণ ১/২/৩৪-৩৫)


অপপ্রচারকারীদের কাছে জিজ্ঞাসা করবেন গায়ত্রী মন্ত্র কি জিনিস? আর মোহাম্মদ বেদাধ্যয়ন করেছিল কবে ? তাছাড়া দেখা যাচ্ছে তৎকালে তার পিতা জীবিত ছিলেন। কিন্তু মোহাম্মদের জন্মের পূর্বেই তার পিতা মারা গিয়েছিলেন।


৪.“সাধুনাথ কল্কি এইরূপ পিতৃবাক্য শ্রবণ করিয়া পিতা ও ব্রাহ্মণ কর্তৃক উপনিত হ‌ইয়া গুরুকুলে গমন করিলেন।“(কল্কিপুরাণ ১/২/৪৭-৪৮)


মোহাম্মদ আজন্ম নিরক্ষর ছিলেন, লিখতে পড়তে পারতেন না, কোরান লিখতো তার সাহাবীরা। সুতরাং গুরুকুলের টপিক ও ম্যাচ করল না।


৫.“অনন্তর কল্কি মহেন্দ্র পর্বতে পরশুরামের আশ্রমে বেদাধ্যয়ন ও শস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা করতে গমন করলেন।“(কল্কিপুরাণ ১/৩/১-৫)


মোহাম্মদ পরশুরামের আশ্রমে যাননি ।


৬. “তিনি মঙ্গলময় মহেশ্বর শিবকে যথাবিধানে পূজান্তে সাষ্টাঙ্গে প্রণিপাত করিলেন ও হৃদয়মধ্যে শিব ধ্যান করিতে লাগিলেন।“(কল্কিপুরাণ ১/৩/১৩)


মোহাম্মদ শিবের ধ্যান করতেন এরকম কিছু জানা যায়না।


৭.“ সিংহলে(শ্রীলঙ্কা) কল্কিরূপী স্বয়ং বিষ্ণু লক্ষ্মীতুল্যা পদ্মার স্বয়ংবরে উপস্থিত হ‌ইয়া তাঁর পাণিগ্রহণ করবেন।“(কল্কিপুরাণ ১/৫/১-৬)


মোহাম্মদের বিবাহ ইতিহাস যারা জানেন তারা ভাবুন স্বয়ংবরে গিয়ে বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব কিনা। তাছাড়া তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ৪০বছর বয়স্কা খাদিজা নামক ব্যাবসায়ী মহিলা। আর তিনি কখনো শ্রীলঙ্কায় যাননি।


৮. “পদ্মা গৌরবর্ণ ও কল্কি কৃষ্ণবর্ণ।“(কল্কিপুরাণ ২/৩/১৯)

কিন্তু মোহাম্মদ কৃষ্ণবর্ণ ছিলেন না, শ্বেতবর্ণের ছিলেন।


৯ “পাপনাশী সর্বজয়ী বিষ্ণু বৌদ্ধ ও ম্লেচ্ছ সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করলেন এবং ধ্বংস করলেন।“(কল্কিপুরাণ ২/৭/১-৫০)


মোহাম্মদ বৌদ্ধদের সাথে যুদ্ধ করেননি। আর ম্লেচ্ছ বলতে অহিন্দু/অবৈদিক অর্থাৎ মুসলিম খ্রিস্টানদের বোঝায়। কিন্তু তারা অস্বীকার করে বলবে না, ম্লেচ্ছ অর্থ যারা মাছ খায়। তবে দেখুন শাস্ত্র কি বলে:

১০“গোমাংসখাদকো বস্তু বিরুদ্ধং বহু ভাষ্যতে।

সদাচারবিহীনশ্চ ম্লেচ্ছ ইত্যভিধীয়তে।।“(প্রায়শ্চিত্ত তত্বধৃত,বৌধায়ন গৃহ্যসূত্র)

অর্থ: যিনি গোমাংস ভক্ষণ করেন, বহু বেদ বিরুদ্ধ বাক্য বলেন ও সদাচার রহিত, তিনিই ম্লেচ্ছ নামে অভিহিত।


১১. “অনন্তর কল্কি ম্লেচ্ছগণকে ছেদন করিয়া যমালয়ে পাঠাইলেন।“(কল্কিপুরাণ ৩/১/১)

১২. “অতঃপর ভীমকর্মা কল্কি মৃত ম্লেচ্ছ ও বৌদ্ধগণকে জ্যোতির্ময় দিব্যলোকে প্রেরণ করিলেন এবং তাদের পত্নীগণকে ভক্তিশিক্ষা প্রদান পূর্বক মুক্তি দিলেন।“(কল্কিপুরাণ ৩/১/৪৩)


যুদ্ধে মৃতদের দিব্যলোকে প্রেরণের ক্ষমতা মোহাম্মদের ছিল ? তাছাড়া যুদ্ধবন্দী মহিলাদের (গণিমতের মাল) কি শোচনীয অবস্থা করা হতো তা আপনারা জেনে নেবেন।


১৩. “কল্কিদেব মুনিগণের প্রার্থনায় সেনাসহ হিমালয়ে গমন করলেন।“(কল্কিপুরাণ ৩/২/১১)

অথচ মোহাম্মদ কখনো হিমালয়ে যাননি।


১৪.“হিমালয়ে যুদ্ধার্থে কল্কিদেব ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করলেন।“(কল্কিপুরাণ ৩/২/৪৩-৪৪, ৩/৯/১০)

ব্রহ্মাস্ত্র হচ্ছে মন্ত্রপুত পারমাণবিক অস্ত্র; যা মোহম্মিদ কখনো ব্যবহার করেননি ।



১৫. “যুদ্ধশেষে কল্কিদেব নারদ, অশ্বত্থামা, পরশুরাম, দুর্বাসা প্রভৃতি সপ্তর্ষিগণের সাথে সাক্ষাৎ করলেন।(কল্কিপুরাণ ৩/৩/৪)

মোহাম্মদ এঁনাদের সাথে সাক্ষাৎ করেননি ।


গুরুগৃহে বিদ্যার্জন শেষে কল্কিদেব যখন পরশুরাম কে দক্ষিণা চাইতে বললেন, তখন গুরু পরশুরাম এই দক্ষিণা চাইলেন:


১৬. ‘‘তুমি দিগ্বিজয়ে বহির্গত হ‌ইয়া ধর্মহীন ম্লেচ্ছ ও বৌদ্ধ গণকে সংহার করিয়া দেবাপি ও মরু নামক ধার্মিক নৃপতিকে রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করবে এবং সনাতন মোক্ষ ধর্ম সংস্থাপন করবে।(কল্কিপুরাণ ১/৩/৯-১০)

মোহাম্মদ কি সনাতন ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? নিজেরাই বিচার করুন এবার মোহাম্মদ আর কল্কিদেব এক কিনা।


অথচ ইতোপূর্বে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এরূপ আশ্বাস দিয়েছেন:

১৭. “পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্৷ ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভাবামি যুগে যুগে৷৷’’(ভগবদগীতা ৪/৮)

অর্থ: সাধুদের পরিত্রাণ করার জন্য এবং দুস্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।

অপপ্রচারকারীরা ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়ের “কল্কি অবতার ও মোহাম্মদ সাহেব” নামক ব‌ইকে রেফারেন্স হিসেবে ধরে এবং সেখান থেকে কিছু বানোয়াট শ্লোক নিয়ে অপপ্রচার করে। কিন্তু কোনো ব্যক্তির নিজস্ব জল্পনা কল্পনা প্রামাণিক হতে পারেনা।

তারা আপনাকে বিভিন্ন বানোয়াট শ্লোক শোনাবে “মোহাম্মদ পরমব্রহ্ম” এই টাইপের। এসব ফাঁদে কান দেবেন না। কল্কিদেব কে নিয়ে প্রকৃত‌ই কিছু জানতে চাইলে প্রামাণিক গ্রন্থ “কল্কিপুরাণ” পড়ুন, শ্রীমদ্ভাগবতমের দ্বাদশ স্কন্দ পড়ুন। সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে। সকলের কল্যাণ হোক।


পরিশেষে শ্রীজয়দেব গোস্বামীর “দশাবতার স্তোত্রম” থেকে:

১৮“ম্লেচ্ছ নিবহ নিধনে কলয়সি করবালং

ধুমকেতুমিব কিমপি করালং।

কেশবধৃত কল্কি শরীর

জয় জগদীশ হরে।।"



অর্থ: যিনি ম্লেচ্ছদের নাশ করবার জন্য ধূমকেতুর ন্যায় ভয়ঙ্করভাবে তরবারি চালনা করেন, সেই কল্কিরূপধারী জগৎপতি ভগবান কেশবের জয় হোক ।

অর্থাৎ কল্কিরূপটি কেশব(শ্রীকৃষ্ণ) ধৃত, মোহাম্মদধৃত নয় ।

“জয় জগদীশ হরে”


ree


 
 
 

শ্রীশ্রীকৃষ্ণচৈতন্যচন্দ্রায় নমঃ


ধার্ম্মিকের শ্রেণীভেদ


বিশ্ববিধাতার সৃষ্টিতে অসংখ্যজাতীয় (দেহধারী ) জীব বর্তমান আছে । তন্মধ্যে মানবজাতিই সৰ্বশ্রেষ্ঠ। কারণ, আহার, নিদ্রা, ভয় ও মৈথুনাদি সাধারণ ধৰ্ম্ম প্রাণিমাত্রে বিদ্যমান থাকিলেও, মানবগণে জ্ঞান বা বিচারশক্তি অসাধারণরূপে বিদ্যমান আছে। মানবজাতির মধ্যে যাহারা জ্ঞান বা বিচারবুদ্ধিরহিত, তাহারা পশ্বাদির সহিত তুলিত। বিচারবুদ্ধিবিশিষ্ট মানবগণের মধ্যে বিচারবুদ্ধির তারতম্যানুসারে স্থূলতঃ চারিশ্রেণীর সদভিমানী বা ধাৰ্মিকাভিমানী মানব দৃষ্ট হয়েন।



একশ্রেণীর মানব রুচিবাদী, দ্বিতীয় যুক্তিবাদী, তৃতীয় শাস্ত্রবাদী এবং চতুর্থ

শাস্ত্রবুক্তি উভয়বাদী। ক্রমশঃ ইহাদের সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলােচনা হইতেছে।



ree

১...রুচিবাদী


প্রথমত, যাহারা রুচিবাদী, তাহাদিগকে দেহারামী, চিত্তসুখবাদী বা স্বেচ্ছাচারী বলা সঙ্গত। কারণ, ইহাদের আপন আপন চিত্তের রুচিমতে যাহা ভালবােধ হয়, যাহা যাহা দেহ ও মনের সুখপ্রদ বিবেচিত হয়, ইহার তত্তদাচরণ করিয়াই তৃপ্তিলাভ করেন। ইহারা ধৰ্ম্মশাস্ত্রোক্ত ধর্ম্মার্ধৰ্ম্ম বা পাপপুণ্য স্বীকার করেন না। অধিকন্তু যাঁহারা ধর্ম্ম শাস্ত্রের আনুগতা বা তদুক্ত পাপপুণ্য স্বীকার করেন, তাঁহাদিগকে

ইহারা অন্ধবিশ্বাসী বলিয়া ঘৃণা করেন। ইহাদিগের মতে যাহাতে মনের শাস্তি হয়, দেহ ও মন সুস্থ ও প্রফুল্ল থাকে, তাহাই আচরণ করা উচিত এবং তাহাই ধর্ম। আর যাহাতে দেহ ও মনের অশান্তি বা ক্লেশ হয়, তাহাই ( দেহ ও মনকে কষ্ট দেওয়াই) পাপ। ইহার মনের সুখকেই আত্মপ্রসাদ বিবেচনা করেন ।

ইহাদের মতে দেহ ও মনই ‘আত্মা’ বা ‘আমি'। এই জন্যই ইহারা সদা দেহ ও মনের সুখশান্তিকর কাৰ্যানুষ্ঠান করিয়া আপনাদিগকে সৎ বা ধার্মিক বলিয়া অভিমান করিয়া থাকেন। ইহার পরমেশ্বর বা পরকাল বিশ্বাস করেন না। মানবমাত্রেরই স্বাতন্ত্র্যাচার বা স্বেচ্ছাচারিতা হারা সংসার ও সমাজের বিশৃঙ্খলা ও পরিণামে ভীষণ অনর্থ সংঘটনের আশঙ্কা করিয়া ইহারা সমাজ ও সংসার সুশৃঙ্খলে চালাইয়া নিজেদের সুখশান্তিভােগের জন্য কতকগুলি মনঃকল্পিত (মনগড়া )

বিধিনিষেধ নিজে নিজে সৃষ্টি করিয়া লয়েন। এইটকুই ইহাদের পশ্বাদি অপেক্ষা অধিক বিচারবুদ্ধি বা জ্ঞান। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, ইহারা স্বেচ্ছাচারী, ও সেচ্ছাচারিতা কেই আত্মপ্রসাদ বলিয়া থাকেন ।



এখন বিচার করা উচিত যে, যদি মনের অভিরুচিমত আচরণ বা স্বেচ্ছাচারিতা আত্মপ্রসাদ বা ধৰ্ম্ম হয়, তাহা হইলে যাঁহারা পরস্ত্রীলাম্পট্য, দস্যুবৃত্তি ও প্রতিহিংসা বশে অন্যের প্রাণবধ প্রভৃতি করিয়া থাকে, তাহাদিগকে দোষী করা যায় না। কারণ, এই সকল কার্য দ্বারা তাহাদেরও মনের সুখ বা ঐ শ্রোণীর আত্মপ্রসাদ নিশ্চয়ই লাভ হয় । সুতরাং তাহাদিগকেও কি সৎ বা ধার্মিক বলিয়া গণ্য করা যাইবে ?


যদি বল, ঐরূপ ( দস্যুতা ও পরস্ত্রীলাম্পট্যাদি) স্বাতন্ত্র্য আচরণে সংসার বা সমাজ উচ্ছৃঙ্খলে যাইবে তজ্জন্য (সমাজাদি সুশৃঙ্খলে চালাইবার জন্য ) কতকগুলি বিধিনিষেধের আনুগত্য স্বীকার করা কর্তব্য। কিন্তু সমাজ বা সংসার সুশঙ্গালে চালাইবার জন্য তােমাদের মনঃকল্পিত বিধিনিষেধের আনুগত্যই বা তাহারা স্বীকার করিবে কেন ? কারণ, তাহাও তত মনঃকল্পিত ! যেহেতু, তােমরাই তাে ধর্মশাস্ত্রোক্ত পাপপুণ্য বা বিধিনিষেধক ব্যক্তিবিশেষের মনঃকল্পিত বলিয়া ত্যাগ করার পথপ্রদর্শক |

সুতরাং, ধীরভাবে এই সব বিবেচনা করিলে দেখিতে বা বুঝিতে পারা যায় , মনে যাহা ভাল বোধ হইবে, তাহাকে আত্মপ্রসাদ ভাব বা তাঁহা আচরণ করা অনুচিত ও অসমীচীন ।




২….যুক্তিবাদী


দ্বিতীয় শ্রেণী বা যাঁহারা যুক্তিবাদী মানব, তাঁহারা প্রথম শেণীর লোকদের মত সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারী না হইয়া প্রকৃতিক জগতের কার্যাবলী পর্যবেক্ষণ করতঃ তৎ- প্রাকৃত দৃষ্টান্তের অনুসরণ করিয়া বুদ্ধি দ্বারা কতকগুলি যুক্তিগঠন ও তত্তদ্‌যুক্তিরলপ্রাধান্য স্বীকারপূর্বক সেইসকল যুক্তির আনুগত্যে যাবতীয় আচারানুষ্ঠান করিয়া থাকেন।


এই দ্বিতীয় শ্রেণীর লােকগণও শাস্ত্রানুগত্য স্বীকার করেন না। ইহারাও জগৎ-স্রষ্টা বিধাতা, পরমেশ্বর ও পরকালাদির অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। ইহাদের মতে “সমস্ত জগতই আপন আপন প্রকৃতি বা স্বভাবানুযায়ী সৃষ্ট ও চালিত হইতেছে। স্বভাব বা প্রকৃতিই জগতের স্রষ্টা ও চালক ; পৃথক্‌ স্রষ্টা বা চালক কেহই নাই। প্রাকৃতিক জগৎ যে সব স্বাভাবিক নিয়মে সুশৃঙ্খলে পরিচালিত হইতেছে, মানব-

সমাজও সেই সব দৃষ্টান্তের অনুসরণে সুশৃঙ্খলে চালিত হইবে। ইহাই ধর্ম এবং ইহার বিপরীতাচরণই পাপ”।



কিন্তু ধর্মশাস্ত্র ও পরমেশ্বরের আনুগত্য ব্যতীত কেবল যুক্তি যে অতি হেয়,অকিঞ্চিৎকর ও অস্থায়ী, তাহা বিজ্ঞ ও বহুদর্শী মানবমাত্রেরই সহজে অনুমেয় । কেবল যুক্তির স্থিত্ব কিছুই নাই । কেন না, একজন যুক্তিবিদ একটি প্রাকৃত দৃষ্টান্তের অনুশীলনপূর্বক একটি যুক্তি স্থির করেন, পরে তদপেক্ষা বুদ্ধিমান্ ও চতুর অন্য ব্যক্তি স্বীয় প্রতিভাবলে সেই যুক্তি খণ্ডিত বিখণ্ডিত করিয়া নিজের

যুক্তি স্থাপন করেন। আবার তাহা অপেক্ষাও সুবুদ্ধিমান অতিযুক্তিবিদ আর একজন তাহার যুক্তিকে খণ্ডন করিয়া উচ্চযুক্তিবলে স্বমত স্থাপন করিয়া থাকেন ।

এই কারণে যুক্তির স্থিরত্ব কিছুই নাই। বুদ্ধিমান ও তার্কিক হইলেই একজন অন্যের

যুক্তিকে স্বীয় প্রতিভাবলে অনায়াসে খণ্ডন করিতে পারেন এবং করিয়া থাকেন।

ইহা বিচিত্র বা আশ্চর্য্য নহে।


অনাদিকাল হইতেই এইরূপে যুক্তিবাদী তার্কিগণের গঠিত সিদ্ধান্তসমুহের খণ্ডন স্থাপন চলিয়া আসিতেছে । এই প্রাকৃতিক জগতই যখন অস্থির, ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তনশীল, তখন প্রাকৃতিক দৃষ্টান্তানুসরণে ব্যক্তি স্থিরত্ব কোথায় ?


সুতরাং ঐরূপ অস্থির যুক্তির আনুগত্য স্বীকার করিয়া চলিলে পরিণামে যে কুশল

লাভ হইবে, তাহার স্থিরতা কি ?

বিচার করিয়া দেখিলে যুক্তিও মনঃকল্পিতাচার বা স্বেচ্ছাচারিতার প্রকারভেদ অথবা রূপান্তরমাত্র। কারণ, যুক্তিবাদীদের যাঁহার মনে যাহা ভাল বােধ হয়, তিনি স্বমত প্রতিপোষিণী অনুকূল যুক্তি গঠনপূৰ্ব্বক তাহা স্থাপন করেন । এইরূপে ভিন্ন ভিন্ন রুচিশালী বুদ্ধিমান তার্কিক মানবগণ স্ব স্ব প্রতিভাবলে ভিন্ন ভিন্ন যুক্তি স্থাপনপূর্বক ধর্ম্ম ও আচার বিষয়ে কেবল তর্কমূলক সংশয়, পরিণামে ইহ-সংসার ও সমাজের বিশৃঙ্খলতা, সর্বোপরি আত্মার অকুশল সংঘটন করিতেছেন মাত্র ।


তর্কের দ্বারা ধর্মের মীমাংসা হয় না। কেন না, তর্ক অপ্রতিষ্ঠিত। সুতরাং, ধর্মশাস্ত্র ও পমেশ্বরের আনুগত্য ব্যতীত কেবল যুক্তি স্বেচ্ছাচারী মানবগণের স্বেচ্ছাচারের পোষক ও পরিণামে অকুশলজনক।








৩….শাস্ত্রবাদী


তৃতীয়তঃ, জগতে শাস্ত্রবাদী একশ্রেণীর মানব আছেন। তাঁহারা স্ব স্ব জ্ঞান ও অধিকারমতে ধর্মশাস্ত্রসমূহে অগাধ বিশ্বাস করত শাস্ত্রোক্ত আচারসমূহ পালন করেন। ইহার শাস্ত্রোপদেশের সহিত যুক্তিমিশ্রণের আবশ্যকতা অনুভব করেন না।

অবিচারে শাস্ত্রোক্ত উপদেশসমুহ পালন করিতে ভালবাসেন । শাস্ত্রবিশ্বাসিগণ পরমেশ্বর, পরকাল, স্বর্গ, নরক ও মৃত্যু আদি সমুদয়ই অল্পবিস্তর স্বীকার করেন।

শাস্ত্রবিশ্বাস সমীচীন পন্থা; কারণ, জগতে যত মানব আছেন, তন্মধ্যে হিন্দু, খ্রীষ্টান ও মুসলমানগণই বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমান বলিয়া পরিচিত। এই তিন মহাসম্প্রদায়ই আপনাদের জ্ঞান ও অধিকার মতে ধর্মশাস্ত্র বিশ্বাসী। ইহাদের সকলেরই ধর্মশাস্ত্র আছে এবং সকলেই স্ব স্ব সম্প্রদায়ের ধর্মশাস্ত্রানুমোদিত কৰ্তব্যানুষ্ঠান করিয়া থাকেন। ইহারা পূর্বোক্তরূপ স্বেচ্ছাচারী বা যুক্তিবাদী নহেন। সকলেই শাস্ত্রানুগত্য স্বীকার করিয়া থাকেন। সুতরাং শাস্ত্রবিশ্বাস অন্ধতা নহে, সমীচীন পন্থা।


শাস্ত্র শব্দের মুখ্য অর্থ এই যে, প্রাচীন পরমেশ্বরবিশ্বাসী মত | জন মহাত্মা সাধুগণের (যাঁহার ভগবানের প্রিয় ও অতি নিকটস্থ তাঁহাদের ) আচার ব্যবহার সম্বন্ধে বর্ণনা ও ( ভগবত্তত্ব বা ভগবত্তজনতত্ব সম্বন্ধে ) তাঁহাদের উপদেশপূর্ণ গ্রন্থ অথবা পুস্তক। পরমেশ্বর ও পরলােক আদি আমাদের দৃষ্ট বা প্রত্যক্ষ নহেন। সুতরাং যাঁহারা পরমেশ্বরের কৃপাপাত্র, মহাত্মা, মহাজন বা সাধু বলিয়া প্রসিদ্ধিলাভ করিয়াছেন, (পরমেশ্বরের কৃপাপ্রাপ্তির উপায় সম্বন্ধে ) সেই সব মহানুভবগণের উপদেশপূর্ণ গ্রন্থানুসারে আপনাদিগকে চালিত করাই যে ( পরিণামে কুশলাকাঙ্ক্ষী মানবগণের ) অবশ্য কর্তব্য

তাহাতে আর সন্দেহ কি আছে ?



স্বেচ্ছাচারী উচ্ছল লােকগণই শাস্ত্র, পরলােক বা পরমেশ্বরাদি স্বীকার করেন না। তাহাতে অর্থাৎ শাস্ত্রাদি স্বীকার ও তাহাদের আনুগত্য করিলে তাহাদের স্বেচ্ছাচারের ও স্বাতন্ত্রের বিশেষ হানি হইবে ; তাহা হইলে “যাবজীবেৎ সুখং জীবেৎ ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ” অথবা “কামোপভােগিতা স্বর্গং পাপমাত্মগ্রপীড়নং” ইত্যাদি স্বার্থে ব্যাঘাত হইবে; সংযমের ক্লেশ সহিত হইবে ; তজ্জন্য শাস্ত্রাদি না মানিয়া ইহারা নিজেদের স্বেচ্ছামত যুক্তিতর্ক স্থাপন করেন।

শাস্ত্রবিশ্বাসী ব্যক্তিগণের মত যে সমীচীন, তাহাতে সন্দেহ নাই। তবে তৎসম্বন্ধে একটি কথা আছে। মানবগণের স্বভাব ও অবস্থাভেদ ও দেশকালাদির অবস্থাভেদের জন্য শাস্ত্রসমুহেভিন্ন ভিন্ন উপদেশ দেখিতে পাওয়া যায়। ইহা অযুক্তও নহে। কারণ, একই চিকিৎসক ভিন্ন ভিন্ন রােগে বা একই রােগের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন ঔষধ ও পথ্যের ব্যবস্থা দিয়া থাকেন, ইহা চিরপ্রসিদ্ধ। শাস্ত্রও সেইরূপ জীবগণের ভবরােগের চিকিৎসক। সুতরাং ভবরোগী জীবগণের স্বভাব ও অবস্থাভেদে ভিন্ন

ভিন্ন অধিকারীর জন্য ভিন্ন ভিন্ন উপদেশ দিয়াছেন।

এই জন্য শাস্ত্ৰবৰ্ণিত কোন্ উপদেশ কাহার পক্ষে অনুকূল, কোন্ উপদেশ প্রতিকূল, তাহা বিচার করা অবশ্য কর্তব্য।

বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যক্তির জন্য শাস্ত্র অধিকার-অনুযায়ী যে সকল ভিন্ন ভিন্ন উপদেশ দিয়াছেন, তন্মধ্যে কাহার পক্ষে কোনটী গ্রহণীয়, কোন্‌টি বর্জনীয়, তাহা যুক্তি দ্বারা বিচার না করিয়া শাস্ত্রের যাবতীয় উপদেশগুলি তােতা-পাখীর মত শিক্ষা করিয়া, একই ব্যক্তি যদি সবগুলি শিক্ষা, পালন বা আচরণ করিতে প্রয়াস পান, তবে তাহা অনুচিত, অস্বাভাবিক ও উপহাসের বিষয় তাে হইবেই, 'পরন্তু তাহাতে প্রকৃতধৰ্ম নির্ণীত ও আচরিত হইবে না। বরং স্থলবিশেষে অনর্থ ঘটিবারই সম্ভাবনা।

এই জন্য কেবল শাস্ত্র অবলম্বনপূৰ্ব্বক ধৰ্ম্মাচার পালন না করিয়া শাস্ত্রের সহিত সদ্‌যুক্তিসমূহ মিলাইয়া ধৰ্ম্মনির্ণয় ও ধর্মাচার পালন করাই বিজ্ঞগণের কর্তব্য। শাস্ত্র

বলিয়াছেনঃ---


কেবলং শাস্ত্রমাশ্ৰিত্য ন বিচার্য্য কদাচন ।

যুক্তিহীনবিচারেণ ধৰ্ম্ম হানিঃ প্ৰজায়তে ।।


আর একটি বিশেষ কথা এই যে, শাস্ত্ৰবাক্যে যাঁহার যত অধিক বিশ্বাস উৎপন্ন হয়, তিনি তত দৃঢ়তার সহিত ভজন করতঃ গন্তব্য পথে দ্রুত অগ্রসর হইয়া থাকেন ।

কিন্তু কেবল শাস্ত্ৰবাক্যে অদৃষ্ট বা অপ্রত্যক্ষ তত্ত্ববস্তুতে সুদৃঢ় শ্রদ্ধা হওয়া অসম্ভব। তজ্জন্য প্রাণিগণের দৃষ্ট বা প্রত্যক্ষীভূত বস্তু দ্বারা যদি শাস্ত্রবাক্যের যথার্থ বুঝাইয়া বা দেখাইয়া দিতে পারা যায়, তাহা হইলে শাস্ত্রবাক্যে সাধকগণের যে শ্রদ্ধা বা বিশ্বাস সুদৃঢ় হইবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। মনে কর, শাস্ত্র বলিয়াছেন -

‘যং যং বাপি স্মরণং ভাবং ত্যজত্যন্তে কলেবরং।

তং তমেবৈতি কৌন্তেয় ! সদা তদ্ভাবভাবিতঃ ॥”


অর্থাৎ যাঁহা নিরন্তর চিন্তা করা যায়, তাহাই চিত্তকে তন্ময় করে, আবার মৃত্যু কালে যাহা স্মৃতিপথে উদিত হয়, প্রাণিগণের গতিও তদনুরূপ হইয়া থাকে।

বিষয়ে মহাজনেরও প্রতিধ্বনি এইপ্রকার ?


“সাধনে ভাবিবে যাহা, সিদ্ধদেহে পাবে তাহা” ইত্যাদি।


কিন্তু এই শাস্ত্র বা মহাজনবাক্যে, সকলের তেমন শ্রদ্ধা বা বিশ্বাস উৎপন্ন হয় না। যাহাদিগের ইহাতে সন্দেহ থাকে, তাহাদিগকে নিম্নোক্ত প্রত্যক্ষীভূত বিষয়টি দেখাইয়া যুক্তি দ্বারা বুঝাইয়া দিলে, উল্লিখিত শাস্ত্র বা মহাজনবাক্যে তাঁহাদের কোনও সন্দেহ থাকিতে পারে না।



প্রায় সকলেই জানেন, পেশষ্কৃৎ বিবিধবর্ণের ও বিবিধকারের কীটসকলকে ধরিয়া আনিয়া নিজগর্ভে আবদ্ধ রাখে । ঐ সকল কীট উক্ত পেশষ্কৃৎকে সভয়ে নিরন্তর ধ্যান বা ভাবনা করিয়া, ভাবনার তীব্রতাবশতঃ পূর্বদেহত্যাগ না করিয়াই অল্পকাল মধ্যে পেশষ্কৃতের তুল্য অর্থাৎ ভাবনানুযায়ী দেহবর্ণাদি লাভ করে। জীবিতাবস্থায় যদি পূৰ্বরূপ পরিবন্তিত হইয়া ভাবনানুযায়ী স্বরূপ প্রাপ্তি ঘটতে পারে, তবে যাহারা আপনাদিগকে ভগবানের সেবক ভাবিয়া ইহজীবনে সতত তাঁহার সেবায় নিমগ্ন,

থাকেন, দেহত্যাগের পরে তাঁহারা স্ব স্ব ভাবনানুযায়ী স্বরূপ যে নিশ্চয় প্রাপ্ত হইবেন, এই শাস্ত্ৰবাক্যে আর কি সন্দেহ থাকিতে পারে ?


এই জন্য সযৌক্তিক শাস্ত্রবাক্যই বিশেষ উপকারী। যাঁহারা বুক্তির অনাদর করিয়া কেবল শাস্ত্র বাক্যেরই আদর করেন, তাঁহাদের শ্রদ্ধাও তেমন সুদৃঢ় হয় না।


৪….শাস্ত্র যুক্তি উভয়বাদী


চতুর্থত, আর একশ্রেণীর অতি সারগ্রাহী ধৰ্ম্মানুরাগী ব্যক্তি আছেন, যাঁহারা প্রথমশ্রেণীর ন্যায় কেবল স্বেচ্ছাচারী, দ্বিতীয়শ্রেণীর ন্যায় যুক্তিবাদী-স্বেচ্ছাচারী বা তৃতীয়শ্রেণীর ন্যায় যুক্তিবিচার ত্যাগপূৰ্ব্বক কেবল শাস্ত্রে অন্ধবিশ্বাসী নহেন। ইহারা শাস্ত্র ও যুক্তি উভয় পন্থা অবলম্বনপূৰ্ব্বত্ব স্বীয় স্বীয় রুচি বা মনকে শাস্ত্রযুক্তির অনুগতভাবে পরিচালনপূর্বক ধম্মাচার পালন করেন।



এইরূপ সযৌক্তিক শাস্ত্রাচার প্রতিপালন করিয়া চলেন বলিয়া এই শ্রেণীর সাধকগণ পতিত বা ভ্রষ্ট না হইয়া (দৃঢ় শ্রদ্ধার ফলে) সাধনরাজ্যে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হইয়া থাকেন। ধর্ম বিষয়ে মূলতঃ ও মুখ্যতঃ শাস্ত্রই প্রধান অবলম্বন বটে, কিন্তু যুক্তি তাঁহার সহকারিণীরূপে যথেষ্ট সাহায্য করিয়া থাকে ।


COPY NOT ALLOWED . DON'T DOING COPY ONLY SHARE

 
 
 


ree



শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যনিত্যানন্দচন্দ্রৌ বিজয়েতেতমাম্ ।।

শ্রীধামবৃন্দাবননিবাসীপণ্ডিতশ্রীরঘুনাথদাসেন লিখিতম্ ।।


যত্র ধর্মঃ তত্র বিজয়ঃ


শাস্ত্রবিধি কেন মানিতে হয় ? না মানিলে কি হয় ?

যঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ ৷ ন স সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতি ৷৷ ( গীতা 16:23 )


ভগবান্ গীতায় বলেছেন যে ব্যক্তি বিধি ত্যাগ করিয়া নিজ ইচ্ছামত যে কোন কর্ম করিয়া থাকে অর্থাৎ ধর্ম্মাদি কর্ম্ম করিয়া থাকে তার কখনই সিদ্ধি প্রাপ্তি হয়না তথা সুখ ( ভক্তি আদি পরমা গতি অর্থাৎ ভগবানের চরণলাভ ) কখনই করিতে পারে না ৷


#শংকরাচার্য্য এবং আনন্দগিরি এই শ্লোকের টীকায় বলিতেছেন---

সর্বস্যৈতস্যাঽঽসুরসম্পৎবিবর্জ্জনস্য শ্রেয় আচরণস্য শাস্ত্রং কারণং । শাস্ত্রং প্রমাণাদুভয়ং শক্যং কর্তুং, নান্যথা অতঃ যঃ শাস্ত্রবিধিং শাস্ত্রং বেদঃ তস্য বিধিং কর্তব্যাকর্তব্য জ্ঞানকরণং বিধিপ্রতিষেধাখ্যমুৎসৃজ্য ত্যক্ত্বা বর্ত্ততে কামকারতঃ কামপ্রযুক্তঃ সন্ ন স সিদ্ধি ন পুরুষার্থযোগ্যতামবাপ্নোতি, নাপ্যস্মিন্লোকে সুখং, ন পরাং প্রকৃষ্টাং গতিং স্বর্গং মোক্ষং বা ।



#আনন্দগিরি ----- আসুর্য্যাঃ সম্পদো বর্জ্জনে শ্রেয়সঞ্চ করণে কিং কারণাৎ ? তদাহ- সর্বস্যেতি । তস্য কারণত্বং -- শাস্ত্রেতি উক্তমুপজীব্যানন্তর শ্লোকʼ প্রবর্ত্তয়তি অত ইতি । শিষ্যতেঽনুশিষ্যতে বোধ্যন্তেঽনেনপূর্বোঽর্থ ইতি শাস্ত্রং, তচ্চ বিধিনিষেধাত্মকমিত্যুচ্চতে ব্যাচষ্টে--কর্তব্যেতি । কামস্য কারণ কামকারস্তস্মাদ্ধেতুরিত্যুপেত্য কামাধিনা শাস্ত্রবিমুখস্য প্রবৃত্তিরিত্যাহ । কামাধীনপ্রবৃত্তেঃ সদা পুরুষার্থযোগস্য সর্বপুরুষার্থসিদ্ধিরিত্যাহ -নাপীতি ।


সকলপ্রকারের অসুরাদিমার্গ বিবর্জ্জন করিয়া শাস্ত্রাদি মানিয়া শেষ্ঠ আচরণ করিতে হয় । কোনটি আসুরিক মত এবং কোনটি সঠিক মার্গ ইহাকে জানিবার একমাত্র উপায় হইতেছে শাস্ত্র । শাস্ত্রই একমাত্র প্রমাণ ...


দ্বে ব্রহ্মণী বেদীতব্যে শব্দব্রহ্ম পরং ত যৎ । শব্দব্রহ্মণি নিষ্ণাতঃ পরং ব্রহ্মাধিগচ্ছতি ।। ( মৈত্রায়ণ্যুপনিষদ্ ষষ্ঠঃ প্রপাঠকঃ শ্লোকঃ ২২ )


দুই প্রকারের ব্রহ্ম জানা যাইতেছে একটি শব্দ ব্রহ্ম অন্যটি পরম ব্রহ্ম । যিনি শব্দব্রহ্মে নিষ্ণাত হইয়াছেন তিনিই একমাত্র পরমব্রহ্মকে প্রাপ্ত করিয়া থাকেন ।

ফলিতার্থ যিনি শাস্ত্র বিধিনিষেধকে মানেন তিনিই শাস্ত্রনিষ্ণাত তিনিই পরমব্রহ্মকে লাভ করেন এখানে পরমব্রহ্মবলিতে শ্রীকৃষ্ণকেই বুঝিতে হইবে কারণ শ্রীভক্তিরসামৃতসিন্ধুতে শ্রীরূপগোস্বামী, তদ্ টীকায় জীবগোস্বামী ,মুকুন্দদাসগোস্বামী ও বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলিয়াছেন ....


অতঃ শ্রীবৈষ্ণবৈঃ সর্বশ্রুতিস্মৃতিনিদর্শনৈঃ । তদ্ব্রহ্ম শ্রীভগবতো বিভূতিরিতি কীর্ত্ত্যতে ।।

ঐ পরম ব্রহ্মকেই ভগবান বলিয়া জানিবে , ।।


#বিশ্বনাথ চক্রবর্তী---শ্রীবৈষ্ণবৈঃ শ্রীরামনুজাচার্য্যগণৈঃ সর্বশ্রুতিস্মৃতি-শাস্ত্রাণাং নিতরাং দর্শন-কর্ত্তৃভিঃ কীর্ত্ত্যতে ---শ্রীসম্প্রদায়ের শ্রীরামনুজাচার্য্যাদি আচার্য্যগণ সকলেই ব্রহ্ম শব্দকে ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণবলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন ।



#জীবগোস্বামী ----- অত--ইতি যদ্যতৈর্ব্রহ্মশব্দেনাপি ভগবানেব বাচ্যতে,নির্বিশেষং ব্রহ্ম তু পৃথক্ নাঙ্গীক্রিয়তে । অতএব ব্রহ্মশব্দমাত্রই ভগবান বাচ্য বলিয়া জানিবে, নির্বিশেষ ব্রহ্ম বলিয়া পৃথক করিয়া কখনই মানিবে না ।


অর্থাৎ শব্দ প্রমাণই হইল সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমাণ-- গৌড়ীয়দিগের সমস্তগোস্বামীগণ শব্দ প্রমাণকেই শ্রেষ্ঠ প্রমাণ বলিয়াছেন । শব্দপ্রমাণকে কখনই প্রত্যক্ষ, অনুমানাদি অন্য কোন প্রমাণদ্বারা খণ্ডন করা যায় না অর্থাৎ শাস্ত্রে যাহা নিষিদ্ধ হইয়াছে তাহাকে জগতের কোন দৃষ্টান্ত দ্বারা খন্ডন করা যায় না । যিনি এগুলি করিয়া থাকেন জানিবেন তিনি এখনও শাস্ত্রবিষয়ে অনভিজ্ঞ । শাস্ত্র প্রমাণের দ্বারাই ঐহীক ও পারমার্থিক এই দুই সাধনই করিতে হইবে এর অন্যথা কখনও করিবে না । শাস্ত্রবিধি অর্থাৎ শাস্ত্রই বেদ এবং তার বিধি কর্তব্য ও অকর্তব্যকে জানিয়া বিধি প্রতিষেধ কে মানিতে হইবে যিনি বিধি প্রতিষেধকে ত্যাগ করিয়া অর্থাৎ না মানিয়া কার্যকরে , কাম্যকার্য করে তার কখনই সিদ্ধিলাভ হয় না সে পুরুষার্থকেও লাভ করিতে পারেনা, সে এই লোকেও কাম্য কার্যের দ্বারা সুখ লাভ করিতে পারেনা, সে পরাং গতি অর্থাৎ ভগবানের চরণলাভ তথা দাস্যতা তথা প্রকৃষ্টাং গতি অর্থাৎ উত্তমগতি (ভগবানের চরণলাভ হইতে আর কোন গতিই উত্তম নয় ) লাভ করিতে পারে না ।


#বেদান্তদেশিকাচার্য্য এই শ্লোকের টীকায় বলিতেছেন---

আসুরস্বভাবেষু মূলতয়া প্রধানভূতাস্ত্রয়া উক্তাঃ তেভ্যোঽপি পরিহার্য্যো হেতুরনন্তরমুচ্চত ইত্যাহ শাস্ত্রানাদর-- ইতি । সর্বাবস্থসমস্তপুরুষহিতানুশাসনচ্ছাস্ত্রশব্দো বেদেষ্বেব প্রথমং প্রাপ্তঃ তদনুবন্ধ্যাদন্যেষ্বিত্যেভিপ্রায়েণাঽঽহ শাস্ত্রং বেদা ইতি । বিধায়কবাক্যস্য শস্ত্রশব্দেনোপাত্তত্বাৎ তদ্ব্যাপারোঽত্র বিধিশব্দবিবক্ষিত ইত্যাহ-বিধিরনুশাসনমিতি । ফলিতামাহ- বেদাখ্যাং মদনুশাসনমিতি । শাস্ত্র বিধিরিতি সামানাধিকরণ্যং বা বিবক্ষিতং । মদনুশাসনং ইত্যনেন শ্রুতিঃ স্মৃতির্মমৈবাজ্ঞা ইত্যাদি স্মারণম্ । এতানান্যেথা লিঙ্গাদ্যর্থে বর্ণযত্নেঽপি প্রত্যুক্তাঃ । লিঙ্গাদয়ো হি প্রশাসিতুরভিপ্রায়মাক্ষে পাদভিধানতো বা ব্যঞ্জয়তি । শাস্ত্রপ্রতিপক্ষভূতঃ কামকারোঽত্র ন শাস্ত্রীয়বৈকল্পকাদিবিষয়ে ইত্যাভিপ্রায়েণঽহ সচ্ছন্দানুগুণমার্গেতি । অথ কেন প্রযুক্তোঽয়ম্ ।

শাস্ত্রাদি যাহারা মানেনা তাহারাই অসুর বলিয়া কথিত হইয়াছে অর্থাৎ মদ্বিপরীতঃ যাহারা শাস্ত্রাদির বিপরীত কর্ম্ম করিয়া থাকে তাঁহারাই অসুর সেই সমস্ত অসুরেরা তিন প্রকারের তাহা পূর্ব্বেই উক্ত হইয়াছে সেই সমস্ত আসুরিক মতাদর্শকে ত্যাগ করিবে , প্রশ্ন কেন ত্যাগ করিবে ? কারণ তাহারা শাস্ত্রকে মানেন তথা তাহার অনাদর করিয়া নিজেচ্ছানুযায়ী কার্য্য করিয়া থাকে । সর্বাবস্থাসমস্তপুরুষ সকলের হিতসাধনের জন্য তথা অনুশাসনের জন্য শাস্ত্র নির্মাণ করিয়াছেন এবং এই শব্দ বেদে লক্ষিত হইয়াছে এবং তাহা হইতে সমস্ত শাস্ত্রের উৎপত্তি হইয়াছে তাই শাস্ত্রকেও বেদ তথা বেদের জ্ঞান বলিয়া কথিত হইয়াছে । বিধায়ক বাক্যের শস্ত্র শব্দের উপাত্ত এবং তার ব্যাপার এখানে বিধি শব্দ বিবক্ষিত হইয়াছে অর্থাৎ--- বিধি তথা অনুশাসনই হল শাস্ত্র । ফলিতার্থ-- বেদপুরুশ ভগবানের অনুশাসনই হল শাস্ত্র । শাস্ত্রবিধি ইতি সামানিধিকরণ । মদনুশাসন অর্থাৎ শ্রীভগবানের দ্বারা নির্মিত অনুশাসন অর্থাৎ শ্রুতিস্মৃতিপুরাণাদি আমার আজ্ঞা বলিয়া জানিবে । যে এই সকল আজ্ঞা না মানে সে ঐকান্তিক ভক্ত হইলেও তাঁহার মার্গকে কদাপি অনুসরণ করিবে না …. প্রমাণ


শ্রুতিস্মৃতিপুরাণাণি পাঞ্চরাত্রং বিধিং বিনা ৷ ঐকান্তিক হরির্ভক্তি উৎপাতায় বৈ কল্পতে ৷৷ ( পুরাণ বচন )



শ্রুতি,স্মৃতি,পুরাণ তথা পাঞ্চরাত্র বিধি কে যিনি বা যাহারা স্বীকার করেনা তথা তাঁহার পালন করেনা সে বা তাঁহারা কখনই হরিভক্তি লাভ তথা সিদ্ধি প্রাপ্ত হইতে পারে না ৷ যদি কোন ব্যক্তি এই শ্রুতিস্মৃতিপুরাণাণি পাঞ্চরাত্রাদি শাস্ত্রবিধিকে না মানিয়া ঐকান্তিক হরিভক্তিতেও নিমগ্ন হইয়া থাকে তথা হরিভক্তি করিয়া থাকে তথাপি তাহাকে উৎপাত বলিয়া জানিবে অর্থাৎ সেই উৎপাতীয় মার্গ কখনই অনুসরণ করিবে না বা তাঁহাকে আদর্শ বলিয়া স্বীকার করিবে না এবং তদ্ মার্গের অনুসরন করিয়া হরিভক্তিতে প্রবৃত্ত হইবে না । ৷


#রামানুচার্য্য এই শ্লোকের টীকায় বলিতেছেন---

য শাস্ত্রানদরোঽস্য নরকস্য প্রধানহেতুরিত্যাহ-- শাস্ত্রং বেদাঃ বিধিং অনুশাসনং বেদাখ্যাং মদনুশাসনমুৎসৃজ্য যঃ কামকারতো বর্রতে সচ্ছন্দানুগুণমার্গেণ বর্ততে , ন স সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন কামপ্যামুষ্মিকীং সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন সুখং ন ঐহীকমপি কিঞ্চিদবাপ্নোতি, ন পরাম্ গতিম্ ।

য ইতি অর্থাৎ যিনি শাস্ত্রের অনাদর করিয়া থাকেন তার গতি নরকই হইয়া থাকে । শাস্ত্রং বেদাঃ, বিধিং অনুশাসনং অর্থাৎ শাস্ত্রই বেদ অর্থাৎ শাস্ত্রই জ্ঞানাদি ভক্তিতত্ত্ব জানিবার সুলভ মার্গ , জীবগোস্বামীপাদও ইহাই সন্দর্ভে লিখিয়াছেন । বিধিং অর্থাৎ শাস্ত্রনির্দেশই হইতেছে অনুশাসন । এখন প্রশ্ন হইতে পারে কার অনুশাসন ? উত্তর মদনুশাসন অর্থাৎ ভগবান নিজেই বলিতেছেন ইহা আমার সৃষ্টিকৃত অনুশাসন , আমার এই অনুশাসন না মানিয়া যিনি সেচ্ছাচার করিয়া অর্থাৎ নিজইচ্ছানুযায়ী কার্য্য করিয়া থাকে তার কার্যসিদ্ধি হইয়া না এবং ইহলোকের কোন কর্ম শাস্ত্র না মানিয়া করিলে তাহাতে সুখ প্রাপ্তি হইয়া থাকে না এবং পরাম্ গতি অর্থাৎ ভগবানের শ্রীচরণ লাভের জন্য ভজনসাধনাদি ক্রিয়া করিয়া থাকেন তার সিদ্ধি লাভ হইয়া থাকেনা অর্থাৎ আমাকে প্রাপ্ত হইতে পারে না ।


#শ্রীবিশ্বনাথ চক্রবর্ত্তীপাদ বলিতেছেন----- আস্তিক্যবত এব শ্রেয় ইত্যাহ--- য ইতি । কামচারতঃ ।।


আস্তিকা এব বিন্দতি সদ্গতিং সন্ত এব তে । নাস্তিকা নরকং যান্তীত্যধ্যায়ার্থো নিরুপিতঃ ।। ইতি সারার্থবর্ষিণ্যাং হর্ষিণ্যাং ভক্তচেতসাম্ । গীতাসু ষোডশোঽধ্যায়ঃ সঙ্গতঃ সঙ্গতঃ সতাম্ ।।


অর্থঃ- আস্তিক্যই একমাত্র শ্রেয় মার্গ অর্থাৎ কল্যাণজনক ফলিতার্থ শাস্ত্রবিধি মানিয়া কাম্যকর্ম করিলে সুখ প্রাপ্তি হয় এবং পারমার্থিক ক্রিয়া করিলে তাহার দ্বারাই ভগবানের চরণলাভ হইয়া থাকে । ইহার জন্য যঃ ইত্যাদি বাক্য বলা হইয়াছে । কামচারতঃ-- অর্থাৎ সেচ্ছাচারিতা , অর্থাৎ নিজের মনমত ভাব তথা মনগড়া সিদ্ধান্তের দ্বারা যে ভজনাদি ক্রিয়া করে তাহার গতি একমাত্র নরক । যিনি আস্তিক তথা শাস্ত্র বিধি নিষেধ মানিয়া চলেন, শাস্ত্রবিরুদ্ধ কথা বলেন না তিনিই হলেন সাধু তাহাকেই সৎপুরুষ,বৈষ্ণব বলিয়া জানিবে এবং ইহারাই সদ্গতি অর্থাৎ শ্রীভগবানের চরণ লাভ করিয়া থাকেন । আর যাহারা শাস্ত্রবিরুদ্ধ কার্য্য করে তথা শাস্ত্রবিধিনিষেধ কে গ্রাহ্য করেন না তাহাদিগকে অসুর বলিয়া জানিবে তাহাদিগের গতি একমাত্র নরকই ।.. ইহাই এই শ্লোকের তাৎপর্য্য ।



#শ্রীবলদেব বিদ্যাভূষণপাদ বলিতেছেন------

কামাদিত্যাগঃ স্বধর্ম্মাদ্বিনা ন ভবেৎ. স্বধর্ম্মশ্চ শাস্ত্রাদ্বিনা ন সিধ্যেদতঃ শাস্ত্রমেবাস্থেয়ং সুধিয়েত্যাহ--য ইতি । কামচারতঃ স্বাচ্ছন্দ্যেন যো বর্ত্ততে--বিহিতমপি ন করোতি , নিষিদ্ধমপি করোতীত্যর্থঃ , স সিদ্ধিং পুমর্থোপায়ভূতাং হৃদিশুদ্ধিং নৈবাপ্নোতি,সুখমুপশমাত্মকং চ পরাং গতিং মুক্তিং কুতো বাপ্নুয়াৎ ।

কামাদিরত্যাগও স্বধর্ম্মাচরণ ভিন্ন হইবে না এবং স্বধর্ম্মাচরণও শাস্ত্রভিন্ন সম্ভব নয় । অতএব শাস্ত্রকেই সুধীবৃন্দ তথা মহৎগণ অবলম্বন করিবেন ইহাই কর্তব্য । নিজের ইচ্ছামত যাহারা চলে এবং বেদ ও স্বধর্ম্ম বিহিত কোন কর্ম্ম করেনা , তথা শাস্ত্রনিষিদ্ধকার্য্য করেনা সেই হৃদয়ের বিশুদ্ধিদায়িকা পরমপুরুষার্থোপায়ভূত সিদ্ধি অর্থাৎ শ্রীভগবানকে লাভ করিতে পারেনা । সেই মনুষ্য শান্তিসুখ অর্থাৎ পরাগতি অর্থাৎ শ্রীভগবানকে লাভ করিতেই পারিবে না ।


#শ্রীধরস্বামীপাদও এরূপই বলিয়াছেন ।

সমস্ত আচার্য্যবর্গেরও ইহাই মত । তাহা হইলে যাঁহারা বৈষ্ণব,সাধু হইয়া শাস্ত্রবিধিকে তথা আচার্যদিগের সিদ্ধান্তকে মানিতে চাহেনা তাহারা কি প্রকৃতই সাধু ? অবশ্যই না তাঁহারা হইল কপট ,কেবল ধর্ম্মের নাম নিয়ে তাহারা ব্যবসায় করিয়া চলিতেছে ।

এছাড়া ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং বলিতেছেন----


জ্ঞাত্বা শাস্ত্রবিধানোক্তং কর্তকর্তুমিহার্হসি ৷


গীতায় ভগবান্ বলেছেন শাস্ত্র বিধিকে মানিয়াই কর্ম ও অকর্ম তথা ধর্মাদি তথা ভজনসাধনাদি করিতে হইবে ৷ অর্থাৎ শাস্ত্রবিধি অনুসারই একমাত্র কার্য্য করিবে ৷


মতয়ো যত্র গচ্ছন্তি তত্রগচ্ছন্তি বানরা: ৷ শাস্ত্রাণি যত্র গচ্ছন্তি তত্র গচ্ছন্তি তে নরা: ৷৷

( শ্রুতিবচন )


যে ব্যক্তি শাস্ত্র বিধিকে না মানিয়ে নিজের ইচ্ছমত অর্থাত্ মনপুত কার্য করে তথা ভজনসাধনাদি করে সে পরজন্মে বানর হইয়া জন্ম গ্রহণ করিয়া থাকে ৷ আর যিনি শাস্ত্রাদি মানিয়ে ভজনসাধনাদি কর্ম করিয়া থাকেন তিনি পুনরায় মনুষ্য জন্ম লাভ করিয়া ভজন করিবার সুযোগ পাইয়া থাকেন ৷

অতএব যারা শাস্ত্রবিধি মানেনা তারা বানর হইয়া জন্মিবে, অর্থাত্ জানিয়া শুনিয়া যদি কেহ বানর হইতে চাহেন তবে আর আমার কিছুই বলার নেই ৷৷


ভগবান্ আরও বলিতেছেন যে,


প্রবৃত্তিং চ নিবৃত্তিং চ জনা ন বিদুরাসুরাঃ ৷


যারা শাস্ত্রাদি কে মানেনা তথা নিজ ইচ্ছামত মন স্থাপন করিয়া থাকে তথা নিজমতানুসার ভজন প্রক্রিয়া বলে থাকে থাকে তাহাকে অসুর বলিয়া জানিব ইহা ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণের বাক্য অতএব বর্তমানে যাহারা শাস্ত্রবিধি কে একদমই গুরুত্ব দিচ্ছেনা তাদের গতি কি হবে এবং তারা কি সেটা ভগবান্ স্পষ্টই করে দিয়েছেন ।

অতএব যে বা যাহারা শাস্ত্রবিধিকে মানেনা বা অস্বীকার করিয়া থাকে তাহারা ভগবানের কথানুসারে অসুর প্রবৃত্তি তথা আসুরিক মতাদর্শী অতএব সেই সমস্ত ব্যক্তিদের বুঝিয়ে কোন লাভ নেই কারণ চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী ।



অতএব কে বা কাহার শাস্ত্রবিধি মানিতেছে আর না মানিতেছে তাহা আপনারাই বিচার করুন , কাহারও নাম উল্লেখ করিয়া বলার প্রয়োজন নাই । বাকি আরও প্রচুর শাস্ত্রসিদ্ধান্ত এ বিষয়ে উল্লেখিত রহিয়াছে কিন্তু তাহা আর উল্লেখ করিলাম না । যাহারা জ্ঞানী তাঁহারা নিশ্চই আমার সংকেত মাত্রেই সমস্তবিষয় বুঝিতে পারিবেন এখানে বিভিন্ন আচার্য্যের টীকা প্রকাশ করা হইয়াছে তাই ইহার দ্বারা বোঝাই যাইতেছে ভগবান্ কি বলিতেছেন । আর যাহাদিগের বুদ্ধিনাশ হইয়াছে তাহাদিগের কথা বলিয়া লাভ নাই কারণ তাহারা নিজমত ভিন্ন স্বয়ং ভগবানের বাক্যকেও মানতে রাজি নন ।ভগবানের বাক্যকেও তাহারা নিজমতানুসারে তথা নিজের মত করিয়া বলিয়া থাকে তথা আচার্য্যের বাক্যও তাহারা স্বীকার করেন না অতএব ইহাদিগের উদ্দেশ্যে একটি বাক্যই বলিব যে ( ভাগবত পড়িয়া কাহারও বুদ্ধিনাশ ) ।

জয় শ্রীমন্মহাপ্রভু ।। জয় শ্রীগোস্বামীপাদবৃন্দ ।। জয় ব্রহ্মমধ্বগৌড়ীয়সম্প্রদায়ের সকলাচার্য্যের ।।

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যনিত্যনন্দচন্দ্রৌ বিজয়েতেতমাম্ ।। শ্রীধামবৃন্দাবননিবাসীপণ্ডিতশ্রীরঘুনাথদাসেন লিখিতম্ ।।

যত্র ধর্মঃ তত্র বিজয়ঃ

#Copy Paste Not Allowed ...Only

 
 
 
Be Inspired
International Mula Gaudiya Sampraday Trust 

Write Us

For Any Assistance Or  Query Please Email Or Call To Us

Imgaudiyas@gmail.com

+918439217878

Vrindavan,Uttar Pradesh, India

  • Facebook
  • Facebook
  • YouTube Social  Icon
  • Whatsapp social icon
  • YouTube Social  Icon
  • Twitter Social Icon
  • instagram social icon
  • Facebook Social Icon

Success! Message received.

bottom of page