UA-199656512-1
top of page

ree

প্রতি তিন বছরে একবার একটি অতিরিক্ত মাস প্রকট হইয়া থাকে, যাকে অধিকমাস, মাল মাস বা পুরুষোত্তম মাস বলা হইয়া থাকে । সনাতন ধর্মে এই মাসটির বিশেষ তাৎপর্য্য রয়েছে। সম্পূর্ণ ভারতের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই মাসটি জুড়ে ধর্মীয় কর্ম, উপাসনা, ভগবদ্ভক্তি, উপবাস, জপ এবং যোগ ইত্যাদি ধার্মিক কাজে সংলগ্ন থাকেন । এটি বিশ্বাস করা হয় যে অধিকমাসে করা ধর্মীয় অনুষ্ঠান তথা কাজটি অন্য কোনও মাসে করা অনুষ্ঠানের তথা কাজের চেয়ে 10 গুণ বেশি ফলাফল প্রদান করে । এই কারণেই এই মাসে ভক্তরা তাদের পূর্ণ ভক্তি ও শক্তি সহকারে ইশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য এবং তাদের ইহলোক ও পরকালের উন্নতির জন্য ব্রতাদি নিয়ম পালন করে । এখন ভাবার বিষয় হল এই যে, এই মাসটি যদি এতই চিত্তাকর্ষক এবং পবিত্র হয় তবে প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর কেন মাসটি আসে ?। সর্বোপরি, কেন এই মাসটিকে এত পবিত্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়, কেন এই মাসকে তিনটি স্বতন্ত্র নামের সাথে ডাকা হয় ?


এই সমস্ত প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি আগ্রহী ব্যক্তির মনে আসতে পারে । তাই আজ আমরা এই জাতীয় অনেক প্রশ্নের উত্তর জানব এবং আরও গভীরভাবে এই মাস সম্বন্ধে আলোচনা করব ।

প্রতি তিন বছরে কেন অধিকমাস আসে - বশিষ্ঠ সিদ্ধান্ত অনুসারে ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্রে সূর্য মাস এবং চন্দ্র মাস অনুসারে বৎসরের গণনা করা হয়। অধিকমাস চন্দ্র বছরের একটি অতিরিক্ত অংশ, যা প্রতি 32 মাস, 16 দিন এবং 8 ঘন্টার ব্যবধানে আসে। এটি সূর্য বছর এবং চন্দ্র বছরের মধ্যে পার্থক্যের ভারসাম্য রাখার জন্য নির্মিত হয়েছে । ভারতীয় গণনা পদ্ধতি অনুসারে, প্রতিটি সূর্য বছর 365 দিন এবং প্রায় 6 ঘন্টা হয় এবং চন্দ্র বছরটি 354 দিন হিসাবে বিবেচিত হয় । দুই বছরের মধ্যে প্রায় 11 দিনের পার্থক্য রয়েছে, যা প্রতি তিন বছরে প্রায় এক মাসের সমান হয়। এই ব্যবধানটি পূরণ করতে, প্রতি তিন বছরে একটি চন্দ্র মাস অস্তিত্বে আসে, যেটি অতিরিক্ত হওয়ার কারণে তাকে অধিকমাস নাম প্রদান করা হয়েছে ।

এর জন্য এই মাসের নাম দেওয়া হয়েছে মলমাস :---------

হিন্দু ধর্মে, অধিকমাসের সময় সমস্ত পবিত্র কর্ম নিষিদ্ধ হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি বিশ্বাস করা হয় যে অতিরিক্ত হওয়ার কারণে, এই মাসটি মলিন হয়ে থাকে সুতরাং, এই মাসে, হিন্দু ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তিগত আচার সংস্কার যেমন নামকরণ, যজ্ঞোপবীত, বিবাহ এবং সাধারণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেমন ঘরে প্রবেশ, নতুন মূল্যবান জিনিস কেনা ইত্যাদি সাধারণত করা হয় না। মলিন বলে মানার কারণে এই মাসের নামকরণ করা হয়েছে মাল মাস।

এই মাসের নাম কেন পুরুষোত্তম মাস এবং কিভাবে এই মাসের নাম পুরুষোত্তম মাস হল ? :

ভগবান বিষ্ণুকে অধিকমাসের অধিপতি হিসাবে বিবেচনা করা হয় । পুরুষোত্তম হল ভগবান বিষ্ণুর একটি নাম। এজন্য অধিকমাসকে পুরুষোত্তম মাস হিসাবেও ডাকা হয় । এই বিষয় সম্পর্কে একটি ঐতিহাসিক কাহিনী পুরাণে বর্ণিত আছে । বলা হয়ে থাকে যে ভারতীয় মুনিঋষিরা তাদের গণনা পদ্ধতি অনুসারে প্রতিটি চন্দ্র মাসের জন্য একটি দেবতাকে নির্ধারণ করেছিলেন। অধিকমাস সূর্য ও চন্দ্র মাসের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য নির্মিত হওয়ার কারণে, কোনও দেবতা এই অতিরিক্ত মাসের শাসক হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে ঋষিগণ এবং মুনিগণ ভগবান বিষ্ণুকে এই মাসের ভার নিজের উপর নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। ভগবান বিষ্ণু এই অনুরোধ স্বীকার করেছিলেন এবং এভাবেই মাল মাসের সাথে সাথে এটি পুরুষোত্তম মাসে পরিণত হয়েছিল এবং পরবর্তীতে পুরুষোত্তম মাস নাম খ্যাতি লাভ করেছিল।

প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য এই মাসটি কেন বিশেষ:--------

অধিকমাসকে পুরুষোত্তম মাস বলার একটি সাংকেতিক অর্থও আছে । এটি বিশ্বাস করা হয় যে এই মাসটি প্রতিটি ব্যক্তির শরীর এবং মন দিয়ে শুদ্ধ হওয়ার সময়। এই সময়ে, ভক্তরা উপবাস, উপবাস, ধ্যান, যোগ ও ভজন-কীর্তন-ধ্যানে নিযুক্ত হন এবং ইশ্বরের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেন। এইভাবে এই সময়ে নিজের মনের ময়লাকে ধুয়ে সাধারণ মানুষ হতে উত্তম মানুষ হওয়ার প্রচেষ্টা করতে হয় । এই কারণেই এর নামকরণ করা হয়েছে পুরুষোত্তম মাস।

অধিকমাসের পৌরাণিক ভিত্তি কী: ------------


পুরাণে অধিকমাস সম্বন্ধে একটি কাহিনী বর্ণিত রয়েছে। এই কাহিনীটি রাক্ষস রাজা হিরণ্যকশিপুর বধের সাথে সম্পর্কিত । পুরাণ অনুসারে, হিরণ্যকশিপু একবার তাঁর কঠোর তপস্যার দ্বারা করে ব্রহ্মাকে সন্তুষ্ট করেছিলেন এবং তাঁর নিকট অমরত্বের বর প্রার্থনা করেছিলেন । যেহেতু অমরত্বের বর দেওয়া নিষেধ, তাই ব্রহ্মা জী তাকে অন্য একটি বর প্রার্থনা করতে বলেছিলেন। তখন হিরণ্যকশ্যপ বলেছিলেন পৃথিবীর কোনও পুরুষ, স্ত্রী, প্রাণী, দেবতা বা রাক্ষস তাকে হত্যা করতে পারবে না। 12 মাসের মধ্যে কোন মাসে তিনি মারা যাবেন না বা তাকে হত্যা করা যাবেনা, দিন বা রাতে কেউ তাকে হত্যা করতে পারবে না। কোনও অস্ত্র বা কোনও শস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যা করতে পারবে না । তাকে বাড়ির ভিতরে বা বাড়ির বাইরেও করতে পারবে না। এই প্রকারে ঘুরিয়ে পেচিয়ে তিনি অমরত্বের বরই প্রার্থনা করলেন । বর পেয়ে হিরণ্যকশিপু নিজেকে অমর বলে বিবেচনা করেছিলেন এবং নিজেকে ঈশ্বর হিসাবে ঘোষণা করেলেন। তার অত্যাচারে যখন সকলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠল, দেবগণ যখন বিষ্ণুর নিকট প্রার্থনা করলেন তখন বিষ্ণু বললেন আমি হিরণ্যকশিপুর বধ করতে শীঘ্রই অবতীর্ণ হব । সময়ের সাথে সাথে, ভগবান বিষ্ণু অধিকমাসে নরসিংহ অবতার রূপে আবির্ভূত হন । গোধূলিলগ্নে

ভগবান বিষ্ণু হরিণ্যকশিপুকে তাঁর উরুর উপর রেখে নখ দ্বারা ছেদন করে বধ করেন এবং তার উদ্ধার করেন ।

অধিকমাসের গুরুত্ব কী ? :------------

হিন্দু ধর্ম অনুসারে, প্রতিটি জীব পাঁচটি তত্ত্ব দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। এই পাঁচটি তত্ত্বের মধ্যে রয়েছে জল, আগুন, আকাশ, বাতাস এবং পৃথিবী। এই পাঁচটি তত্ত্ব তাদের প্রকৃতি অনুসারে প্রত্যেক জীবের প্রকৃতিকে ন্যূনতম উপায়ে নির্ধারণ করে। ইহা ছাড়াও সমস্ত ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপ, ধ্যান ও যোগের মাধ্যমে ভক্ত তাঁর দেহের পাঁচটি তত্ত্বকে ভারসাম্যপূর্ণ করার চেষ্টা করেন । এই মাস জুড়ে ভক্তরা ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক অগ্রগতি এবং পবিত্রতা অর্জনে জন্য দৃঢ় প্রচেষ্টা করেন। সুতরাং, এই প্রকার শাসনকালের প্রচেষ্টায় প্রতি তিন বছরে কর্মাদিকে ব্যক্তি বাইরে থেকে পরিষ্কার করে এবং নিজেক পরিচ্ছন্নতা তথা পাপমুক্ত করে তথা নতুন রূপে ভক্তিমার্গে প্রয়াসী হন । ইহা বিশ্বাস করা হয় যে এই সময়কালে করা প্রচেষ্টা দ্বারা সমস্ত রাশিগত দোষাদিরও সমাধান হইয়া যায় ।


অধিকমাসে কি করণীয় ?: ----------


সাধারণত অধিকমাসে হিন্দু ভক্তরা উপবাস, উপাসনা, আবৃত্তি, ধ্যান, স্তবগান, কীর্তন, মনন করিয়া থাকেন। পৌরাণিক সিদ্ধান্ত অনুসারে, এই মাসে যজ্ঞ-হবন বাদে দেবী ভাগবত, শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ, শ্রীবিষ্ণু পুরাণ, ভবিষ্য পুরাণ ইত্যাদি শ্রবণ, পাঠ, মনন করিলে বিশে ফল লাভ হইয়া থাকে । ভগবান বিষ্ণু অধিকমাসের অধিষ্ঠাতা দেবতা, অতএব এই সময়ে বিষ্ণু মন্ত্র জপ করিলে বিশেষভাবে উপকার হইয়া থাকে । ইহা মানা হয় যে যারা এই অধিকমাসগুলিতে বিষ্ণু মন্ত্র জপ করেন ভগবান বিষ্ণু নিজেই সেই সমস্ত ভক্তদের আশীর্বাদ করেন, তাদের পাপ প্রশমিত করেন এবং তাদের সমস্ত বাসনা পূর্ণ করেন ।

 
 
 

ree

সনাতন ধর্ম মতে শ্রেষ্ঠত্ব ব্রত বলা হয়েছে একাদশীকে। কারণ ভগবান বিষ্ণু একাদশী ব্রত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। আজ আলোচনা অপরা একাদশী সম্বন্ধে। জৈষ্ঠ্য মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম অপরা একাদশী। মহারাজ যুধিষ্ঠির ভগবান পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ কে বললেন হে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জৈষ্ঠ্য মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম ও মাহাত্ম্য আমাকে বলুন। উত্তরে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেনঃ হে মহারাজ মানুষের মঙ্গলের জন্য আপনি খুব ভালো একটি প্রশ্ন আমার কাছে উত্থাপন করেছেন।বহু পূর্ণ প্রদানকারী মহাপাপ বিনাশকারী ও পুত্র দানকারী একাদশী অপরা একাদশী নামে খ্যাত।এই ব্রত পালনকারী ব্যক্তি জগতে প্রসিদ্ধি লাভ করে নাম যশ খ্যাতি অর্জন করে। ব্রম্ম হত্যা, গোহত্যা, ভ্রূণহত্যা ,পরনিন্দা, পতিতাবৃত্তি ,মিথ্যা ভাষন, ছলনা ও বিভিন্ন গুরুতর হত্যার এই ব্রত পালনের ফলে নষ্ট হয়।যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দান করে ওজন বিষয়ে ছলনা করে শাস্ত্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা ব্যাখ্যা প্রদান করে যেতে গণনার ফলে মিথ্যার আশ্রয় নেয় মিথ্যা চিকিৎসা করে এবং চিকিৎসার জন্য অধিক অর্থ দাবি করে তারা সকলেই যাতনা ভোগ করে। এ সমস্ত ব্যক্তিরা যদি এই মহাপুণ্য ব্রত পালন করে তারাও এই পাপ থেকে মুক্তি পাবে।ক্ষত্রিয় যদি যুদ্ধ ত্যাগ করে পলায়ন করে তবে সে ঘোরতর নরকগামী হয় ইহাই শাস্ত্র সিদ্ধান্ত। যদি কেউ এই ব্রত পালন করে তবে সে স্বর্গ গতি লাভ করবে।মকর রাশিতে সূর্য অবস্থানকালে মাসে প্রয়োগ স্নানে ফল লাভ হয় ,শিবরাত্রি উপবাস করলে যে পূর্ণ লাভ অর্জিত হয়, পবিত্র গয়াধামে বিষ্ণুপদ পিন্ডদান ,সিংহ রাশিতে বৃহস্পতির স্থানে গৌতম নামক নদীতে স্নান, কেদারনাথ ভগবান দর্শন, বদ্রিকাশ্রম যাত্রা , ভগবান বদ্রি নারায়ন সেবা, সূর্য গ্রহণের ক্ষেত্রে স্নান, হাতি, ঘোড়া, স্বর্ণ, দক্ষিণা সহ যজ্ঞ করলে যে পূর্ণ অর্জিত হয় কাহা মাত্র এই একটি ব্রতের ফলে অর্জিত হয়। এই অপরাধ ব্রত বৃক্ষের কুঠার স্বরূপ , পাপ রুপ কাঠের আগুনের মত, পাপ রূপ আধারের সূর্য সম হয়ে থাকে এই ব্রত। কোন ব্যক্তি যদি এই ব্রত পালন না করে তাহলে তার জন্ম বৃথা ও জলে বুদবুদের মতো জন্ম মৃত্যু কে বলল সার হয়ে থাকবে।অপরা একাদশী উপবাস করে বিষ্ণু পূজা করলে সর্ব পাপ মুক্ত হয় বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হয়।এই ব্রত কথা পাঠ ও শ্রবণের ফলে সহস্রগুণ এর ফল লাভ হল ইহা ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে বর্ণিত হয়েছে।



লিখেছেঃ- শ্রীসৈকত কর্মকার

ree

 
 
 

বৈশাখ শুক্লপক্ষীয়া ‘শ্রীমােহিনী একাদশী

বৈশাখ শুক্লপক্ষের ‘মােহিনী একাদশী-ব্রতমাহাত্ম্য সূৰ্য্য-পুরাণে বর্ণিত আছে ।। মহারাজ যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণকে বলিলেন, হে জনার্দন! বৈশাখ শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম এবং ব্রত-মাহাত্ম্য আমাকে সবিস্তারে অবগত করান । শ্রীকৃষ্ণ কহিলেন, হে ধৰ্ম্মপুত্র! প্রথমে রামচন্দ্রজীকে বশিষ্ঠ মুনি যাহা বলিয়াছেন, তাহা শ্রবণ কর । শ্রীরামচন্দ্রজী মুনিবর বশিষ্ঠজীর নিকট কহিলেন, হে মুনিবর, আমি জনক নন্দিনী সীতার বিরতেন দুঃখ পাইতেছি আপনি কৃপা করিয়া আমাকে এমন কোন ব্রতের কথা বলেন যাহা পালনে জীবের সমস্ত পাপ ও দুঃখ নিবৃত্তি হইয়া যায়। তচ্ছবনে গুরুদেব শ্রীবশিষ্ঠজী কহিলেন, হে রাম! আপনার বুদ্ধি শ্রদ্ধাযুক্ত, আপনি অতি উত্তম প্রশ্ন করিয়াছেন, আপনার পরমমঙ্গলময় নাম গ্রহণে ও স্মরণেই মনুষ্য পবিত্র হয়— সকল মঙ্গলের অধিকারী হয় তথাপি লােকহিতকামনায় আপনাকে আমি একটি উত্তম ব্রতের কথা বলিতেছি । হে রাম! বৈশাখ শুক্লপক্ষের একাদশী ‘মােহিনী নামে প্রসিদ্ধা । এই একাদশী ব্রতােত্তম, পালনে মনুষ্যের সকল পাপ—সকল দুঃখ— সকল মােহজাল নিবৃত্ত হইয়া যায় । ইহার পরম পণ্যদায়িনী শুভ কথা আমি আপনাকে বলিতেছি, আপনি একমন চিত্তে শ্রবণ করুন । সুপবিত্র সরস্বতী নদী তটে ‘ভদ্রাবতী’ নাম্নী এক সুশােভনা নগরী ছিল । তথায় ‘দ্যুতিমান্ নামক এক রাজা রাজ্য পরিচালনা করিতেন । হে রাম! ঐ ধৈৰ্যশালী সত্যপ্রতিজ্ঞ নরপতি চন্দ্রবংশে উৎপন্ন হইয়াছিলেন । এই নগরীতে ধনধান্যে মহাসমৃদ্ধিশালী এক ধর্মাত্মা পুণ্যবান্ বিষ্ণুভক্ত বৈশ্য বাস করিতেন। তাহার নাম ছিল—ধনপাল। এই মহাত্মা লােকহিতকল্পে নগরে বহু জলসত্র,অন্নসত্ৰ, পান্থনিবাস বা ধৰ্ম্মশালা, সুপেয় সুগন্ধি পানীয় জলপূর্ণ কূপ, স্বচ্ছ সরােবর, পুষ্পেদ্যান, ফলােদ্যান, প্রশস্ত সরণি, দাতব্য-চিকিৎসালয়, পণ্যবীথিকা, বিদ্যালয়, শ্রী বিষ্ণুমন্দির প্রভৃতি নির্মাণের দ্বারা অর্থের প্রকৃত সদ্ব্যবহার পূর্বক তাহার নামের সার্থকতা সম্পাদন করিয়াছিলেন। পরহিতব্রতী শান্তভাব বিষ্ণুভক্তিপরায়ণ এই পুণ্যাত্মা বৈশ্যের সমান, দ্যুতিমান, মেধাবী, সুকৃতি ধৃষ্টবুদ্ধি নামক পাঁচটি পুত্র ছিল। তন্মধ্যে পঞ্চমপুত্র ধৃষ্টবুদ্ধি ছিল মহাপাপে নিমগ্ন। সে অত্যন্ত দুষ্ট প্রকৃতি, অসৎসঙ্গরত, অসতীবারনারী, ন্যূতক্রীড়া, আসবপানাদিতে আসক্ত, তথা জীবহিংসন, পরপীড়নাদি যাবতীয় অধৰ্ম্মাচারে লিপ্ত হইয়া এমন পরমধাৰ্মিক পিতার কুল-কলঙ্কস্বরূপ অতীব শােচ্য কুলাঙ্গার পুত্ররূপে পরিণত হইল। দেবতা, অতিথি, বৃদ্ধ-পিতৃপুরুষ ও ব্ৰহ্মণগণকে সে কিছুমাত্র সম্মান করিত না। সৰ্ব্বদাই পাপচিন্তারত, পাপাসক্ত ও পাপকর্মে লিপ্ত থাকিয়া অত্যন্ত ঘৃণা।জীবন যাপন করিত।

ree

এই মহাপাপিষ্ঠ দুরাত্মা পিতার ধনসম্পদ সকল নানা অসৎকার্য্যে অপব্যয় করিতে লাগিল। নানা অভক্ষ্য ভক্ষণ করিত ও সৰ্ব্বদা মদিরাপানে বিভাের হইয়া থাকিত। পিতা ধনপাল একদিন ঐ পুত্রকে পতিতার  গলদেশে হস্তাপর্ণপূৰ্ব্বক প্রকাশ্যে চৌরাস্তায় ভ্রমণ করিতে দেখিয়া অত্যন্ত মর্মাহত হইলেন। সেই দিনই তিনি তাহার ঐ উৎপথগামী পুত্রকে গৃহ হইতে বহিস্কৃত করিয়া দিলেন। পিতৃমাতৃস্নেহ-ভ্রাতৃস্নেহ—আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু-বান্ধব—সকলের স্নেহ হইতেই সে বঞ্চিত হইল। জাতিচ্যুত— সমাজচ্যুত অপাংক্তেয় হইয়া সজ্জন-সমাজে সে অত্যন্ত ঘৃণিত হইয়া পড়িল ।  পিতৃগৃহ হইতে বহিস্কৃত হইয়া সে কিছুদিন যাবৎ নিজ ব্যবহাৰ্য্য বস্ত্র-অলঙ্কারাদি বিক্রয় করতঃ তল্লব্ধ অর্থদ্বারা তাহার পাপপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করিতে লাগিল। কিন্তু তাহাও শেষ হইলে ক্রমশঃ ভাবে, সুতরাং যথােচিত খাদ্যাদির অভাবে তাহার শরীর অত্যন্ত।জীর্ণ শীর্ণ হইয়া পড়িল। তাহাকে ধনহীন দেখিয়া কপট প্রণয়-প্রদর্শনকারিনী বারবনিতা ও তথাকথিত বন্ধু বান্ধব গণও নানা ছলে নিন্দা করিতে করিতে তাহাকে ত্যাগ করিল। এক্ষণে অন্নবস্ত্রহীন,অত্যন্ত ক্ষুধা-প্রপীড়িত ধৃষ্টবুদ্ধি চিন্তা করিতে লাগিল, “আমি এখন কি করি, কোথায় যাই, কি উপায় অবলম্বন করিতে পারিলে আমার জীবন রক্ষিত হইতে পারে ? এইরূপ নানাচিন্তার পর সে স্থির সম্ভব হতে পারে; অদ্যাবধি বহু পাপ করার ফলে আমি ধনহীন—গৃহহীন আত্মীয়-স্বজন-স্নেহহীন হইয়া অত্যন্ত মনােদুঃখে কালাতিপাত করিতেছি । তখন পরদুঃখ-কাতর মুনিবর কহিলেন, যাহাতে তােমার অতীব গুরুতর পাপও অনায়াসে অল্পক্ষণে নিঃশেষে ক্ষয় হইয়া যাইতে পারে, তাহার একটি সহজ উপায় আমি তােমাকে বলিতেছি, তুমি একাগ্রচিত্তে তাহা শ্রবণ কর। বৈশাখ মাসে শুক্লপক্ষের। ‘মােহিনী’ নামী একাদশী মনুষ্যের বহুজন্মসঞ্চিত সুমেরুপৰ্বতপ্রমাণ পাপরাশি নিঃশেষে ধ্বংস করিয়া থাকে। অতএব তুমি এই একাদশী-ব্রত বিশেষ শ্রদ্ধাসহকারে পালন কর। মুনিবরের বাক্য-শ্রবণে ধৃষ্টবুদ্ধি প্রসন্ন হইল এবং তাহার উপাদিষ্ট বিধি অনুসারে যথাযথভাবে সেই ব্রত পালন করিল। হে নৃপশ্রেষ্ঠ! এই ‘মােহিনী’বত-পালনে মহাপাপিষ্ঠ। ধৃষ্ঠবুদ্ধি অচিরেই সৰ্ব্বপাপ রহিত হইয়া দিব্যদেহ ধারণপূর্বক গরুড়ারােহণে সৰ্ব্বাপদরহিত বিষ্ণুলােকে চলিয়া গেল। হে রামচন্দ্র... এই ব্রত অজ্ঞানকৃত গাঢ় অন্ধকাররূপী যাবতীয় মহামােহ নষ্ট করিয়া থাকে। তীর্থস্নান, দান, যজ্ঞাদিজনিত কোন পুণ্যই ইহার সমতুল্য নহে।


লিখেছেনঃ শ্রীমান সৈকত কুমার ( বরগুনা, বরিশাল, বাংলাদেশ )

ree

 
 
 
Be Inspired
International Mula Gaudiya Sampraday Trust 

Write Us

For Any Assistance Or  Query Please Email Or Call To Us

Imgaudiyas@gmail.com

+918439217878

Vrindavan,Uttar Pradesh, India

  • Facebook
  • Facebook
  • YouTube Social  Icon
  • Whatsapp social icon
  • YouTube Social  Icon
  • Twitter Social Icon
  • instagram social icon
  • Facebook Social Icon

Success! Message received.

bottom of page