UA-199656512-1
top of page

আজকাল কিছু সংগঠন যারা নকল ভগবান বানিয়ে পূজা করে, তারা কোনভাবে তাদের দলীয় নকল ভগবানের ভগবত্বা শাস্ত্রীয়ভাবে প্রমাণ করতে না পেরে হিংসাপরায়ণ হয়ে গৌড়ীয় বৈষ্ণব সিদ্ধান্তের উপর আঙুল তোলে। এসমস্ত নির্লজ্জ্ব ব্যাক্তিরা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু-কেও অপমান করে।


সম্প্রতি তারা শ্রীমদ্ভাগবতের একটি শ্লোক নিয়ে অপপ্রচার শুরু করেছে। শ্লোকটি হল,


কৃষ্ণবর্ণং ত্বিষাকৃষ্ণং সাঙ্গোপাঙ্গাস্ত্রপার্ষদম্।

যজ্ঞৈঃ সঙ্কীর্তনপ্রায়ৈর্যজন্তি হি সুমেধসঃ।।


কলিযুগে যেসব বুদ্ধিমান মানুষেরা ভগবৎ-আরাধনার উদ্দেশ্যে সঙ্কীর্তন যজ্ঞানুষ্ঠান করেন, তারা অবিরাম শ্রীকৃষ্ণের নামগানের মাধ্যমে ভগবৎ-অবতারের আরাধনা করে থাকেন। যদিও তার দেহ কৃষ্ণবর্ণ নয়, তাহলেও তিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। তার সঙ্গে পার্ষদরূপে রয়েছেন তার অন্তরগ সঙ্গীরা, সেবকগণ, অস্ত্র এবং সহযোগীবৃন্দ। (শ্রীমদ্ভাগবত ১১।৫।৩২)


এই শ্লোকদ্বারা প্রকৃতপক্ষে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যে স্বয়ং ভগবান তা প্রতিপন্ন হয়। কারণ এই শ্লোকে বর্ণিত অবতারের বৈশিষ্ট্যের সাথে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বৈশিষ্ট্যই মিলে।


এখন নকল ভগবানের উপাসকেরা যেহেতু তাদের মতকে শাস্ত্র দ্বারা প্রমাণ করতে পারে না সেহেতু, হিংসাবশত গৌড়ীয় সিদ্ধান্তের উপর আঙুল তুলে শ্রীমন্মহাপ্রভুর অপমান করে। তাদের এসকল অপপ্রচারের জবাব দেয়া হবে এই আর্টিকেলে।


᯽প্রথম শঙ্কা নিবারণ᯽


তারা দাবী করে যে এই শ্লোক দ্বারা নাকি কলির অবতারের কথা বলা হয়নি এবং “যদিও তার দেহ কৃষ্ণবর্ণ নয়, তাহলেও তিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ” এই অর্থ নাকি বৈষ্ণবদের বানানো। চলুন সত্য কী তা দেখে নেয়া যাক।


তো এই শ্লোকের অন্বয় দেখা যাক। বুদ্ধিমান ব্যাক্তি অন্বয় দেখলেই সত্যতা বুঝতে পারবেন।


এই শ্লোকে ত্বিষাকৃষ্ণং পদটির অন্বয় এরূপ

ত্বিষা+অকৃষ্ণং

ত্বিষা শব্দে অঙ্গকান্তি এবং অকৃষ্ণং শব্দে কৃষ্ণ বর্ণ নয় এরূপ অর্থ প্রকাশ করে। এর থেকে ❝যদিও তার দেহ কৃষ্ণবর্ণ নয়, তাহলেও তিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ❞ এই বাক্য সিদ্ধ হয়। এখন পাখন্ডীরা এর বিরোধী করবে সেটিই স্বাভাবিক। তাই এর স্বপক্ষে কিছু প্রমাণ দেয়া যাক।


শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর এই শ্লোকের টীকায় লিখেছেন, “কৃষ্ণেতি নানা-কলিযুগপক্ষে কৃষ্ণ বর্ণ দেহং; রূক্ষত্বং ব্যাবর্ত্তয়তি ত্বিষা কান্ত্যা অকৃষ্ণং ইন্দ্রনিলমণিবদুজ্জ্বলম ইত্যর্থঃ।” যার অর্থ হল ‘কৃষ্ণ’ ইত্যাদি কলিযুগপক্ষে কৃষ্ণবর্ণ দেহরুক্ষ নহে ইহা জানাইবার জন্য ত্বিষা অর্থাৎ কান্তি দ্বারা অকৃষ্ণ- ইন্দ্রনিলমণির ন্যায় উজ্জ্বল।


চক্রবর্তীপাদ এখানে এরূপ বিশ্লেষণই করেছেন যে, অবতারের অঙ্গকান্তি হবে অকৃষ্ণ।


এখন আপনারা হয়তো ধৃষ্টতা প্রদর্শন পূর্বক বলবেন যে বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর বৈষ্ণব ছিলেন তাই এটা আপনারা মানবেন না।


এজন্য আমি আরেকটি টীকা প্রদর্শন করব। আর সেটি হল শ্রীমদ্ভাগবতের সর্বশ্রেষ্ঠ টীকা শ্রীপাদ শ্রীধর স্বামীর ❝ ভাবার্থ- দীপিকা ❞


শ্রীধর স্বামীপাদ এই শ্লোকের টীকায় লিখেছেন,


ত্বিষা কান্ত্যাঽকৃষ্ণমিন্দ্রনীলমণিবদুজ্জ্বলম্- অঙ্গকান্তি অকৃষ্ণ, ইন্দ্রনীলমণি ন্যায় উজ্জ্বল।


এখানে শ্রীধর স্বামীও এটাই বলছেন যে কলির অবতারের গায়ের রং হবে অকৃষ্ণ।


এখন যারা এর বিরোধিতা করেন তারা কী শ্রীধর স্বামীকে ভুল বলবেন? যদি আপনারা তেমনটি বলেন তাহলে আপনাদেরকেই মূর্খ বলতে হবে। কারণ এই শ্রীধর স্বামী সেই আচার্য যার ভাগবত ভাষ্যে স্বয়ং মহাদেব লিখে দিয়েছিলেন,


অহং বেত্তি শুকো বেত্তি ব্যাসো বেত্তি ন বেত্তি বা।

শ্রীধরঃ সকলং বেত্তি শ্রীনৃসিংহ প্রসাদতঃ।।


মহাদেব বলছেন, “আমি যা জানি, শুক যা জানে, ব্যাস যা জানতেও পারে কিবা নাও জানতে পারে। কিন্ত নৃসিংহদেবের কৃপায় শ্রীধর সেই সকলই জানেন।”


কাজেই শ্রীধর স্বামীর বাক্য অবশ্যই অব্যার্থ।


এছাড়া ভাগবতমে আরও বলা হয়েছে,


আসন্ বর্ণাস্ত্রয়ো হ্যস্য গৃহ্ণতোঽনুযুগং তনুঃ।

শুক্লো রক্তস্তথা পীত ইদানীং কৃষ্ণতাং গতঃ।।


তোমার পুত্র কৃষ্ণ প্রতিযুগে তার শ্রীমূর্তি প্রকাশ করেন। পূর্বে ইনি শুক্ল, রক্ত ও পীতবর্ণ ধারণ করে প্রকাশিত হয়েছিলেন। সম্প্রতি কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে প্রকট হয়েছেন। (শ্রীমদ্ভাগবত ১০।৮।১৩)


এখানে শুক্ল, রক্ত, কৃষ্ণ ও পীত বর্ণের অবতারের কথা বলা হয়েছে। আমরা জানি যে শ্বেতবরাহকল্পের অষ্টবিংশতি চতুর্যুগের দ্বাপরে কৃষ্ণ আবির্ভূত হন। সত্য ও ত্রেতাযুগে শুক্ল ও রক্ত বর্ণের অবতার হয়েছেন (শ্রীমদ্ভাগবত ১১।৫।২১ ও ১১।৫।২৪ দ্রষ্টব্য) । তাহলে বুঝতে হবে অবশিষ্ট কলিযুগে ভগবদ অবতারের অঙ্গকান্তি হবে পীতবর্ণ। অন্য কোন শ্বেতবরাহকল্পের অষ্টবিংশতি চতুর্যুগেও কৃষ্ণ দ্বাপরে আবির্ভূত হয়েছেন এবং সেই চতুর্যুগের কলিতে পীতবর্ণ অবতার এসেছেন। তাই শ্লোকে বলা হয়েছে পূর্বে পীতবর্ণ ধারণ করে অবতীর্ণ হয়েছেন। কাজেই এই শ্লোকেও এটা প্রতিপন্ন হয় যে কলিযুগ অবতারের অঙ্গকান্তি অকৃষ্ণ, অর্থাৎ “যদিও তার দেহ কৃষ্ণবর্ণ নয়, তাহলেও তিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ।”


᯽দ্বিতীয় শঙ্কা নিবারণ᯽


তারা দাবী করেন এখানে নাকি অবতার সংশ্লিষ্ট কিছু বলাই হয়নি।


তাদের এই দাবীও ভুল। এই শ্লোকের টীকায় শ্রীধর স্বামীপাদ লিখেছেন, ত্বিষা কৃষ্ণং কৃষ্ণাবতারম। অনেন কলৌ কৃষ্ণাবতারস্য প্রাধান্যং দর্শয়তি।


শ্রীধর স্বামী নিশ্চয়ই অজ্ঞতাবশত এখানে অবতার কথা লিখেননি! তাছাড়া যারা এরকম দাবী করেন তারা কখনো ভাগবতম পড়ে দেখেননি এটা নিশ্চিত। কেবল গৌড়ীয় বৈষ্ণবের সমালোচনা করার জন্য কোন একটি ভাষ্যর উদ্ভট অনুবাদ প্রদর্শন করে জ্ঞানী সাজার চেষ্টা করেন। শ্রীমদ্ভাগবতের উক্ত অধ্যায় অর্থাৎ একাদশ স্কন্ধের পঞ্চম অধ্যায়ের ২১-৩০ নং শ্লোক পর্যন্ত নারদমুনি বসুদেব কে সত্য, ত্রেতা ও দ্বাপর যুগের ভগবদ আরাধনা পদ্ধতি এবং অবতার সম্পর্কে বলেছেন এবং ৩১ নং শ্লোকে বলছেন,


ইতি দ্বাপর উর্বীশ স্তবন্তি জগদীশ্বরম্।

নানাতন্ত্রবিধানেন কলাবপি তথা শৃণু।।


হে, রাজন এইভাবে দ্বাপর যুগের মানুষেরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধিপতির বন্দনা করতেন।কলিযুগেও মানুষ দিব্য শাস্ত্রাদির বিবিধ বিধিনিয়মাদি অনুসরণের মাধ্যমে ভগবানের আরাধনা করে থাকেন। এখন আমার কাছে এই বিষয়ে শ্রবণ করুন। (শ্রীমদ্ভাগবত ১১।৫।৩১)


যেহেতু পূর্ববর্তী শ্লোকসমূহে অন্য তিনযুগের অবতার এবং আরাধনা পদ্ধতি বর্ণণা করেছেন এবং এই শ্লোকে কলিযুগের আরাধনা পদ্ধতি বর্ণণা করার কথা বলছেন সেহেতু তৎপরবর্তী শ্লোকে অর্থাৎ “কৃষ্ণবর্ণং ত্বিষাকৃষ্ণং........” এই শ্লোকে যে কলিযুগাবতারের কথা বলবেন তাতে সন্দেহ নেই।


𖣔সাদৃশ্য নিরূপণ ও শ্রীমন্মহাপ্রভুর ভগবত্বা প্রমাণ𖣔


গৌড়ীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে বিশ্লেষণ


কৃষ্ণ বর্ণং: কৃষ্ণেতি বর্ণদ্বয়কীর্ত্তনপরং কৃষ্ণোপদেষ্টারং কৃষ্ণ কৃষ্ণেতি বর্ণদ্বয় কীর্তনেন সদা কৃষ্ণানুসন্ধানতৎপরমিতি যাবৎ


অর্থাৎ, যিনি ‘কৃষ্ণ’ এই বর্ণদ্বয় কীর্তনপর কৃষ্ণোপদেষ্টা অথবা ‘কৃষ্ণ’ এই বর্ণদ্বয় কীর্তনের দ্বারা কৃষ্ণানুসন্ধান তৎপর।


শ্রীমন্মহাপ্রভু সর্বদা কৃষ্ণনাম কীর্তন করতেন এবং তদ্বারা কৃষ্ণানুসন্ধান অর্থাৎ কৃষ্ণকে পাওয়ার চেষ্টা করতেন। যেহেতু তিনি ছিলেন ভক্ত রূপে ভগবদা অবতার।


সাঙ্গোপাঙ্গাস্ত্রপার্ষদম: অঙ্গে শ্রীমন্নিত্যানন্দাদ্বৈত- প্রভুবরৌ উপাঙ্গানি তয়োরাশ্রিতাঃ শ্রীবাসাদিশুদ্ধভক্তাঃ অস্ত্রানি হরিনাম শব্দাদীনি পার্ষদাঃ গদাধরদামোদরস্বরূপ- রামানন্দ- সনাতন- রূপাদয়ঃ তৈঃ সহ নিত্যবর্তমানঃ যঃ ত্বং


অর্থাৎ, যাহার ‘অঙ্গ’ শ্রীমন্নিত্যানন্দাদ্বৈত প্রভুদয় এবং উপাঙ্গ তদাশ্রিত শ্রীবাসাদি শুদ্ধভক্তগণ যাহার অস্ত্র হরিনাম শব্দ এ পার্ষদ শ্রী গদাধর- দামোদরস্বরূপ- রামানন্দ- সনাতন- রূপাদি।


ত্বিষা অকৃষ্ণং: কান্ত্যা পীতং গৌরং বা অন্তঃকৃষ্ণং বহির্গৌরং রাধাভাবদ্যুতিসুবলিতং কৃষ্ণস্বরূপং শ্রীমদগৌরসুন্দরমিত্যর্থঃ


অর্থাৎ, সেই অন্তঃকৃষ্ণ বহির্গৌর রাধাভাবদ্যুতিসুবলিত শ্রীমদগৌরসুন্দরকে


যজ্ঞৈঃ সঙ্কীর্তনৈঃ : পূজাসম্ভারৈঃ সঙ্কীর্তনং সম্যক্ কীর্তনং বহুভির্মিলিত্বাঃ উচ্চৈঃ গৌরকৃষ্ণ নাম-কথা-গান প্রচারাদি তৎপ্রধানৈঃ


যজন্তি সুমেধসঃ : আরাধয়ন্তি সু সুষ্ঠু মেধা যেষাং তে শুক্ল রক্তস্তথা পীত ইদানীং কৃষ্ণতাং গতঃ ইতি ‘কলাবপি তথা শৃণু’ ইত্যাদীনাং তাৎপর্য্যার্থ ধারণাবতি যেষাং বুদ্ধিঃ শুভমানা ভবেৎ তে এব নান্যে


অর্থাৎ, গৌরসুন্দরকে কলিযুগে সুমেধাগণ সঙ্কীর্তন যজ্ঞের দ্বারা আরাধনা করিয়া থাকেন।


শ্রীধরী টীকা অনুসারে বিশ্লেষণ


শ্রীধর স্বামী লিখেছেন,

রূক্ষতাং ব্যাবর্ত্তয়তি, ত্বিষা কান্ত্যাঽকৃষ্ণমিন্দ্রনীলমণিবদুজ্জ্বলম্;


অর্থাৎ, কলিযুগাবতারে কৃষ্ণবর্ণ দেহরুক্ষ নয়, অঙ্গকান্তি অকৃষ্ণ, ইন্দ্রনীলমণির ন্যায় উজ্জ্বল।


শ্রীমন্মহাপ্রভুর গায়ের রং ছিল অকৃষ্ণ এবং ইন্দ্রনীলমণির ন্যায় উজ্জ্বল। কাজেই শ্রীধর স্বামীর টীকায় বর্ণিত বৈশিষ্ট্যের সাথে সদৃশ।


অঙ্গানি হৃদয়াদিনী, অর্থাৎ হৃদয় আদি অঙ্গ থাকবে।


এই বৈশিষ্ট্য শ্রীমন্মহাপ্রভুর সাথে মেলে।


উপাঙ্গানি কৌস্তভাদীনি, অর্থাৎ কৌস্তভ আদি উপাঙ্গ* ধারণ করবেন।


মহাপ্রভুর বাল্যকালে তার মাতামহ নীলাম্বর চক্রবর্তী যিনি ছিলেন তৎকালীন মহান পন্ডিত এবং প্রসিদ্ধ জ্যোতিষ তিনি মহাপ্রুভর শ্রীঅঙ্গে এসকল চিহ্ন শণাক্ত করেন।


অস্ত্রাণি সুদর্শনাদীনি, অর্থাৎ সুদর্শন আদি অস্ত্র ধারণ করবেন।


ছন্ন অবতার হওয়ায় মহাপ্রভু সরাসরি অস্ত্র প্রদর্শন করেননি। কিন্তু বহুবার পার্ষদবর্গকে অস্ত্রধারী রূপ দেখিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ সার্বভৌম ভট্টাচার্য-কে চতুর্ভূজ ও ষড়ভূজ রূপ দেখান।


আত্মনিন্দা করি লৈল প্রভুর শরণ।

কৃপা করিবারে তবে প্রভুর হৈল মন।।

নিজ-রূপ প্রভু তারে করাইল দর্শন।

চতুর্ভুজ-রূপ প্রভু হৈলা তখন।।

দেখাইল আগে তারে চতুর্ভুজ-রূপ।

পাছে শ্যাম-বংশীমুখ স্বকীয় স্বরূপ।।

দেখি সার্বভৌম দন্ডবৎ করি পড়ি।

পুনঃ উঠি স্তুতি করে দুই কর যুড়ি।।

(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত মধ্যলীলা ৬।২০১-২০৪)


পার্ষদা সুনন্দাদয়ঃ তৎসহিতম্, অর্থাৎ সুনন্দ আদি পার্ষদের সহিত।


ভগবান যখন আবির্ভূত হন তখন সকল পার্ষদও বিভিন্নরূপে আবির্ভূত হন। গৌরলীলায়ও সকল পার্ষদবৃন্দ চিন্নয় জগৎ হতে আবির্ভূত হয়েছিলেন।


যজ্ঞৈর্চনৈঃ, সঙ্কীর্ত্তনং নামোচ্চারণং স্তুতিশ্চ তৎপ্রধানৈঃ, সুমেধসো বিবেকিনঃ - অর্থাৎ সুমেধাসম্পন্ন বিবেকবান মানুষেরা সঙ্কীর্তন তথা নামোচ্চারণ দ্বারা তার স্তুতি করার মাধ্যমে যজ্ঞানুষ্ঠান করবেন।


আজ সমস্ত পৃথিবীতে নামযজ্ঞের দ্বারা শ্রীমন্মহাপ্রভুরই উপাসনা হচ্ছে।


কাজেই উক্ত বিশ্লেষণ হতে এটা স্পষ্ট যে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু স্বয়ং ভগবান।


᯽তৃতীয় শঙ্কা নিবারণ᯽


এখন গৌড়ীয় বৈষ্ণব- বিদ্বেষীরা প্রশ্ন তুলতে পারে যে ভগবান গীতায় বলেছেন তিনি সাধুদের পরিত্রাণ ও দুষ্কৃতিকারীদের বিনাশ করেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তো কখনো অস্ত্র ধরে দুষ্টদমন করেননি। তাহলে তিনি ভগবান কীভাবে হলেন?


দেখুন এর সমাধান


শ্রীমদ্ভাগবতে কলিযুগাবতার সম্বন্ধে বলা হয়েছে,


ইত্থং নৃতির্যগৃষিদেবঝষাবতারৈ-

র্লোকান বিভাবয়সি হংসি জগৎপ্রতীপান।

ধমং মহাপুরুষ পাসি যুগানুবৃত্তং

ছন্নঃ কলৌ যদভবোস্ত্রীযুগোঽথ স ত্বম্।।


হে ভগবান্, এইভাবে আপনি নর, পশু, ঋষি, দেবতা, মৎস্য অথবা কূর্মরূপে অবতরণ করে সমগ্র জগৎ পালন করেন এবং অসুরদের সংহার করেন। হে ভগবান, আপনি যুগ অনুসারে ধর্মকে রক্ষা করেন। কিন্তু কলিযুগে আপনি আপনার ভগবত্তা প্রকাশ করেন না, তাই আপনাকে ত্রিযুগ বলা হয়। (শ্রীমদ্ভাগবত ৭।৯।৩৮)


এখানে স্পষ্টত বলা হয়েছে যে কলিযুগের অবতার নিজের ভগবত্বা প্রদর্শন করবেন না। কাজেই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যে অস্ত্র দ্বারা সর্বসমক্ষে দুষ্ট সংহার করবেন না সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুষ্ট সংহার না করলে তো গীতার বাণী মিথ্যা হয়ে গেল। এই শঙ্কার সমাধান হল মহাপ্রভু যে দুষ্টের দমন করেননি তেমনটি নয়।


জগাই-মাধাই নামক মহাপাতকী কে ভগবদপ্রেম প্রদান করে উদ্ধার করেছিলেন। এখানে কিন্তু তাদের অভ্যন্তরীণ আসুরিক প্রবৃত্তিকে ধ্বংস করেছিলেন। অর্থাৎ, প্রচ্ছন্ন ভাবে দুষ্টের দমনপূর্বক সাধুদের পরিত্রাণ করেছিলেন। অনুরূপে চাঁদকাজি, গোপাল চাঁপাল আদি-কেও প্রেম দান করেছিলেন। কাজেই গীতা এবং ভাগবত উভয়ের বাণীর সামঞ্জস্যতা সাধিত করেছেন মহাপ্রভু।


উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টই বোঝা যায় যে, শ্রীমন্মহাপ্রভুই স্বয়ং ভগবান এবং কলিযুগ পতিতপাবন অবতারী।


গৌরাঙ্গ!

জয় শ্রী রাধে!

হরে কৃষ্ণ!

 
 
 





ree




অতিপূণ্যৈরতিসুকৃতৈঃ কৃতার্থীকৃতঃ কোऽপি পূর্ব্বৈঃ ৷

এবং কৈরবি ন কৃতং যৎ প্রেমাব্ধৌ নিমজ্জিতং বিশ্বম্ ৷৷

( চৈঃচন্দ্রোদয়)


বিশ্বের সদাচারী ও পরমধার্ম্মিক প্রাচীন মহাপুরুষগণের দ্বারা কোন তোন ব্যক্তি গোলকাদি-লোক প্রাপ্ত হইয়া কৃতকৃতার্থ হইয়াছেন কিন্তু শ্রীচৈতন্যচন্দ্র যেরূপ সমগ্রবিশ্বকে প্রেমসমুদ্রে নিমজ্জিত করিয়াছেন, এমনটি শ্রীভগবান্ পূর্বে অন্যলীলাদিতে কখনও করেন নাই তাই শ্রীমন্মহাপ্রভু হইতে আর কোন অবতারই শ্রেষ্ঠ হইতে পারেনা ৷


শ্রুতিছান্দোগ্যাখ্যা বদতি পরমং ব্রহ্মপুরকং,

স্মৃতিবৈকুন্ঠাখ্যং বদতি কিল যদ্বিষ্ণুসদনম্ ৷

সিতদ্বীপঞ্চান্যে বিরলরসিকোऽয়ং ব্রজবনং,

নবদ্বীপং বন্দে পরম সুখদং তম চিদুদিতম্ ৷৷

( নবদ্বীপ শতকম্ )


ছান্দোগ্য উপনিষদে যাহাকে পরব্রহ্মপুর নামে উক্ত করা হয়েছে, স্মৃতি যাহাকো বিষ্ণুসদন বলিয়াছেন, অপরাপর মহাজন যাহাকে শেতদ্বীপ এবং বিরল রসিক ভক্ত যাহাকে ব্রজবন নামে অভিহিত করেন সেই চিচ্ছক্তি প্রকটিত পরম সুখদ শ্রীনবদ্বীপ ধামই হইল সর্বোশ্রেষ্ঠতম ৷ আমি সেই শ্রীধামের বন্দনা করি ৷



যে গৌর স্থলবাসিনিন্দনরতা যে বা ন মায়াপুরং,

শ্লাঘন্তে তুলয়ন্তি যে চ কুধিয়ঃ কেনাপি তং গোদ্রুমম্ ৷

যে মোদদ্রুমমত্র নিত্যসুখচিদ্রূপং সহন্তেন বা,

তৈঃ পাপিষ্ঠনরাধমৈ র্ন ভবতু স্বপ্নেऽপি মে সঙ্গতিঃ ৷৷

( নবদ্বীপ শতকম্ )


যাহার গৌরস্থলবাসিজনগনের নিন্দায় রত থাকে, অথবা যাহারা মায়াপুরের প্রতি সন্মান প্রদর্শন করেনা,কিম্বা যে সকল দুর্ব্বুদ্ধিজন গোদ্রুম তথা নবদ্বীপ সহিত অন্যস্থানের তুলনা করে এবং মোদদ্রুমকে এই প্রপঞ্চে প্রকটিত নিত্য চিৎসুখস্বরূপ মনে করে না অর্থাত্ তথা অন্যস্থান হইতে ছোট মনে করে সেই সকল পাপিষ্ঠ নরাধমের সহিত স্বপ্নেও যেন আমার সঙ্গ না ঘটে ৷৷ অর্থাত্ সেই সমস্ত নরাধমের সঙ্গ কদাপি করিবে না ৷


যত্তজ্জল্পন্তু শাস্ত্রাণ্যহহ! জনতয় গৃহত্যাং যত্তদেব,

স্বং স্বং যত্তন্মতং স্থাপয়তু লঘুমতিস্তর্কমাত্রে প্রবীণঃ ৷

অস্মাকস্তূজ্জ্বলৈকোন্মদ-বিমলরসপ্রেমপীযূষমূর্ত্তে,

রাধাভাবাপ্তিলীলাটবিমিহ ন বিনান্যত্র নির্য্যাতি চেতঃ ৷৷

( নবদ্বীপ শতকম্ )


অহো শাস্ত্রসমূহ নানাবিধ জল্পনাই করুক্ ( অতাত্ত্বিক) জনসমূহ সেই সকল গ্রহণই করুক,শুষ্কতর্কমাত্রে প্রবীণ ক্ষুদ্র-বুদ্ধি ( হৈতুক ) তার্কিককুল নিজ নিজ মত স্থাপনই করুক্ আমাদের চিত্ত কিন্তু উন্নতোজ্জ্বল হর্য গর্ব্বাদি অপ্রাকৃতভাব-সমন্বিত বিমল প্রেম রসামৃতমূর্ত্তি শ্রীভগবানের রাধাভাবসম্বন্ধি এই নবদ্বীপ ধাম ব্যতীত অন্যতে যাইতে চাহে না অর্থাত্ গৌরাঙ্গমহাপ্রভু প্রকটিত রাধাভাবসম্বন্ধি ভজনাদি নবদ্বীপ ব্যতীত অন্যত্র সুলভ নয় ৷


ইহ সকলসুখেভ্যঃ সূত্তমং ভক্তিসৌখ্যং,

তদপি চরমকাষ্ঠাং সম্যগাপ্নোতি যত্র ৷

তদপি পরমপুংসঃ শ্রীনবদ্বীপধাম,

নিখিল নিগম গূঢ়ং মূঢ়বুদ্ধির্ন বেদ ৷৷

( নবদ্বীপ শতকম্ )


এই সংসারে সর্বপ্রকার সুখ হইতে ভক্তিসুখই শ্রেষ্ঠতম, তাহাও আবার শ্রীধাম নবদ্বীপেই চরমোৎকর্ষতা প্রাপ্ত হইয়াছে ৷ মূঢ়বুদ্ধি ব্যক্তি পরমপুরুষ শ্রীভগবানের এই নিখিল বেদগুহ্য নবদ্বীপধাম তত্ত্ব সম্বন্ধে অবগত হইতে পারেন ৷


যৎ কোট্যংশমপি স্পৃশেন্ন নিগমো যন্ন বিদুর্যোগিনঃ,

শ্রীশ-ব্রহ্ম-শুকার্জ্জুনোদ্ধবমুখাঃ পশ্যন্তি যন্ন ক্বচিৎ ৷

অন্যৎ কিং ব্রজবানিনামপি ন যদ্দৃশ্যং কদা লোকয়ে,

তচ্ছ্রীগোদ্রুমরূপমদ্ভূতমহং রাধাপদৈকাশ্রয় ৷৷

( নঃ মহিমা প্রবোধানন্দকৃত শতকমে)


বেদ যাঁহার কোটি অংশের একাংশও স্পর্শও করিতে পারেনা, যোগিগণও যাহা অবগত হইতে পারে না, লক্ষ্মী,শিব,ব্রহ্মা,শুকদেব,অর্জ্জুন ও উদ্ধব প্রমুখ ভক্তগণও কখনও যাহা দর্শন করিতে পারে নাই অথবা অন্যের কথা তো বাদই দিলাম, ব্রজবাসীগণের জন্যেও যাহা নয়নগোচর হয় নাই, ব্রজবাসীগণও যাহা লাভ করে নাই তাহা এই অদ্ভুত শ্রীধামনবদ্বীপের স্বরূপ একমাত্র রাধাচরণযুগল আশ্রয় করিয়া আমি দর্শন করিব তথা লাভ করবি ৷



জাতিপ্রাণধমানি যাস্তু সুযশোরাশিঃ পরিক্ষীয়তাং,

সদ্ধর্ম্মা বিলয়ং প্রয়ান্তু সততং সর্বৈশ্চ নির্ভৎস্যতাম্ ৷

আধিব্যধিশতেন জীর্য্যতু বপুর্ল্লুপ্ত প্রতীকারতঃ,

শ্রৌগৌরাঙ্গপুরং তথাপি ন মনাক্ ত্যক্তুং মমাস্তাং মতিঃ ৷

( নঃ শতকম্ )


আমার জাতি, প্রাণ ও ধনসমূহ নষ্ট হউক, সুযশোরাশি সম্পূর্ণরূপে ক্ষয়প্রাপ্ত হউক্ আমার আচরিত সদ্ধর্ম্মসমূহ বিলয় প্রাপ্ত হউক, সকলে আমাকে নিরন্তর তিরস্কার করুক্ এবং শত শচ মানসিক ও শারীরিক পীড়ায় প্রতিকারাভাবে আমার দেহ জীর্ণ হউক তথাপি যেন কদাপি শ্রীগৌরাঙ্গপুর শ্রীধামনবদ্বীপকে ত্যাগ করিবার মতি আমার কখনই না জন্মায় ৷


গৌরারণ্যাদন্যাৎ প্রকৃতেরন্তর্ব্বহির্ব্বাপি ৷

নৈবাস্তি মধুরাবস্থিত্যবকলিতং যৈর্নমস্তেভ্যঃ ৷৷

( নবদ্বীপ শতকম্ )


প্রকৃতির অন্তরে ও বাহিরে নবদ্বীপ ব্যতিত আর অন্য কোন মধুর বসতি স্থল নাই ইহাই সুনিশ্চিত ৷৷ ইহাস সকল গৌরপ্রেমীগণের সিদ্ধান্ত ৷৷



নিন্দন্তি যাবন্নবখণ্ড বাসং বৃন্দাবনে প্রেমবিলাস কন্দে ৷

তাবন্ন গোবিন্দ পদারবিন্দে স্বচ্ছন্দ সদ্ভক্তি রহস্যলাভঃ ৷৷

( নবদ্বীপ শতকম্ )


যে ব্যক্তি যতদিন শ্রীধাননবদ্বীপধামকে তথা তন্নিবাসীগণের নিন্দা করিবে তথা তাহাকে ব্রজ হইতে ন্যুন করিয়া দেখিবে ততদিন পর্য্যন্ত তাহাদের শ্রীধাম বৃন্দাবনে প্রেমবিলাস মূল শ্রীরাধাগোবিন্দচরণার বৃন্দে সুষ্ঠুপ্রেমভক্তিলাভ হইবে না ৷৷


পূর্ণোজ্জ্বলৎ প্রেমরসৈক মূর্ত্তি র্যত্রৈব রাধাবলিতো হরির্মে ৷

তদেব গৌরস্থলমাশ্রিতানাং ভবেৎ পরং ভক্তি রহস্যলাভঃ ৷৷

( নবদ্বীপ শতকম্ )


পূর্ণোজ্জ্বল প্রেমরসের অখণ্ড মূর্ত্তি স্বরূপ শ্রীহরি আমার যে স্থানে রাধাভাববিভাবিত হইয়া বিরাজ করেন সেই গৌরস্থল যাহারা আশ্রয় করিয়াছেন তাহারাই একমাত্র সেই গৌরপ্রেমামৃত পরম নিগূঢ় ভক্তিলাভ করিয়া থাকেন ৷৷ অর্থাত্ যাহারা নবদ্বীপ ধামকে হেয় তথা ব্রজ হইতে ন্যুন করিয়া থাকেন তাহারা কখনই প্রকৃত প্রেমভক্তি লাভ তো দূরে থাকুক তাহা অবগতও হইতে পারেন না ৷


কারণ----


যদি গৌর না হইত' তবে কি হইতকেমনে ধরিতাম দে ।

রাধার মহিমা প্রেমরসসীমা জগতে জানাত কে ? ॥

মধুর বৃন্দাবিপিনমাধুরী

প্রবেশ চাতুরী সার ।

বরজযুবতীভাবের আরতি শকতি হইত কার ? ॥

গাও পুনঃ পুনঃগৌরাঙ্গের গুণসরল করিয়া মন ।

এ তিন ভূবনে এমন দয়াল,

আর নাহি কোন জন॥

গৌরাঙ্গ বলিয়া না গেনু গলিয়া,কেমনে সাধিব সিদ্ধি ।বাসুঘোষ হিয়া পাষাণে মিশাইয়া গড়িয়াছে কোন বিধি ॥

 

তাই যাহা আমার গৌরবিলাস করিয়াছেন , যে গৌরই রাধা প্রেম মহিমা প্রকট করিলেন তাহার স্থান ব্যতিত অন্যকিছু কখনই শ্রেষ্ঠ হইতে পারেনা



সকলবিভব সারং সর্ব্বধর্ম্মৈক সারং,

সকল ভজন সারং সর্ব্বসিদ্ধ্যৈক সারম্ ৷

সকল মহিমাসারং বস্তুখণ্ডে নবাখ্যে,

সকল মধুরিমাম্ভোরাশি সারং বিহারঃ ৷৷

( নবদ্বীপ শতকম্ )


এই নবখণ্ড নবদ্বীপে বিচরণ সকল বিভবের সার, সর্বধর্ম্মের একমাত্র সার, সকল ভজনের সার, সকল সিদ্ধির একমাত্র সার,সকল মহত্ত্বের সার এবং সকল মাধুর্য্যে সমুদ্রের সার ৷৷



অচৈতন্যপ্রায়ং জগদিদমহো সর্ব্ববিদপি,

নবদ্বীপস্যাস্য প্রভবতি ন বৈ তত্ত্বকথনে ৷

হরৌ সুপ্রচ্ছন্নে হরিপুরমহো গুপ্তমভবৎ,

সুভক্তস্তত্তত্ত্বং স্বগুরুকৃপয়া কর্ষতি কিল ৷৷

( নবদ্বীপ শতকম্ )


অহো! এই জগদবাসিলোকসমূহ ( স্বরূপানুভূতি রহিত হইয়া তথা গুরুবৈষ্ণবের কৃপাশূণ্য যিনি বা যাহারা হইয়াছেন তথা বিদ্বান হইয়াও অহংকারে পর্যবসিত হইয়াছেন সেই অচৈকন্যপ্রায় এবং প্রাকৃত বুদ্ধিসম্পন্ন সর্বজ্ঞ ব্যক্তিও কখনই অপ্রাকৃত ধাম নবদ্বীপের মহিমা জানিতে পারেনা ৷ শ্রীমন্মহাপ্রভু যদিও অত্যন্ত প্রচ্ছন্ন স্বরূপ প্রকট করিলে তাহার ধামও প্রচ্ছন্নরূপে উদিত ( অর্থাত্ ছন্ন যদভবঃ - এই শাস্ত্রীয় বাক্যানুসারে ছন্নাবতারী গৌরসুন্দরের ন্যায় তদ্ধামও প্রচ্ছন্ন অর্থাত্ প্রাকৃত,মূঢ় ভক্তিহীন,অভিমানীর নিকট প্রচ্ছন্ন রূপেই প্রকাশিত হইয়াছেন অর্থাত্ তাহাদের নিকট প্রকাশিতই হন নাই ৷ কেবলমাত্র শুদ্ধভক্ত,গুরুবৈষ্ণবকৃপাপ্রাপ্ত ব্যক্তিই সেই গুপ্তধামের মহিমাকে জানিতে পারেন তথা হৃদয়ঙ্গম করিতে পারেন ৷


মাধুর্য্যময় শ্রীধাম বৃন্দাবন হতে ঔদার্য্যময় শ্রীধাম নবদ্বীপই অধিক কৃপাময়


অহো বৃন্দারণ্যে হরি হরি হরীতি প্রজপতাং,

ব্রজদ্বন্দ্বাবাপ্তির্ঘটত অপরাধাত্যয় ইহ ।

নবদ্বীপে গৌরঃ কলুষনিচয়ং ক্ষাম্যতি সদা,

ব্রজানন্দং সাক্ষাৎ পরমরসদং হন্ত! তনুতে ।।

( নবদ্বীপ শতকম্ )


অহো ! বৃন্দাবন হরি, হরি, হরি,- এই নাম যাঁহারা প্রকৃষ্টরূপে ( অর্থাৎ অপরাধ নির্ম্মুক্ত হইয়া ) জপ করেন, তাঁহাদের অপরাধ অপগত হইলে শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের চরণসেবা প্রাপ্তি ঘটে, কিন্তু আহা ! এই নবদ্বীপে শ্রীগৌরীঙ্গদেব কলুষরাশি অপনোদন করিয়া সাক্ষাৎ পরমরসদ ব্রজের আনন্দ সর্ব্বদা বিস্তার করিতেছেন ।



গৌরনগরমিচ্ছসি পরিত্যক্তং যদিকোऽপি ৷

স তু সুনিশ্চিতং মূর্খং ভক্তিধর্ম্মবিবর্জ্জিতম্ ৷৷

( কেনচিন্মহানুভবেন কৃত শ্লোক ও টিপ্পনী )


টীকা:- যে জনাঃ গৌরনগরম্ অর্থাৎ শ্রীধামনবদ্বীপং পরিত্যক্তং অর্থাৎ পরিত্যজ্যং তথা তদ্ ধামস্য মহিমা ব্রজধামতঃ ন্যুনং বদতি তথা ত্যক্তং পরিত্যক্তং ইচ্ছসি স: সুনিশ্চিতং মূঢ় অর্থাৎ কোऽপি দ্বিধা নাস্তি এতদ্বিষয়ে , স সুনিশ্চিতং মূঢ় অর্থাৎ বুদ্ধিভ্রষ্টং তথা মূর্খাস্তি এবং ভক্তিধর্ম্মবিবর্জ্জিতং অর্থাৎ ভক্ত্যাদি তথা মহাপ্রভো: প্রচারিত রাগানুগাভজনাদৌ বিষয়ে স কিঞ্চিৎ ন জ্ঞাতবান্ তথা গৌররূপী মহাপ্রেমভক্তি ভক্তিদেবী তদ্ হৃদয়াকাশে প্রকাশিতবতী নাস্তি স নিশ্চিতং ভক্তিধর্ম্মং বিবর্জ্জিতং এতদ্ কারণে তে জনা: শ্রীধামনবদ্বীপাপেক্ষা ব্রজধামস্য মহিমা অধিকং বদতি তথা নবদ্বীপধামস্য মহিমা ব্রজধামতঃ সামান্যং চিন্তয়তি ৷ অতঃ এতদ্ পণ্ডিতমন্যমানস্য বাক্য কদাপি ন গৃহ্নতি স্বীকার্য্যং এতদ্ শ্লোকস্য অর্থ গ্রহণীয়ম্ ৷৷


শ্লোকার্থ-- যিনি বা যাহারা গৌরনগর অর্থাৎ শ্রীনবদ্বীপ ধামকে ত্যাগ করিবার কথা বলেন তথা তাহার মহিমাকে ক্ষুন্ন করিতে চাহেন সে নিশ্চয় ভক্তিধর্ম হইতে বিচ্যুত হইয়াছেন এবং সে সুনিশ্চয় মূঢ় ৷


টীকার্থ:-- যে ব্যক্তি/ ব্যক্তিবর্গ গৌরনগর অর্থাত্ শ্রীধামনবদ্বীপধীমকে পরিত্যক্ত অর্থাৎ পরিত্যজ্য করেন তথা শ্রীধামকে তথা তার মহিমাকে ব্রজধাম হইতে কমবলিয়া থাকেন বা শ্রীনবদ্বীপকে ব্রজ হইতে ন্যুন ( ছোট ) বলিয়া প্রকাশ করেন , তথা যিনি শ্রীধাম নবদ্বীপকে পরিত্যাগ করার কথা চিন্তা করেন সেই ব্যক্তি তথা ব্যক্তিবর্গ সুনিশ্চিতভাবে অর্থাত্ এই বিষয়ে কোন দ্বিমতই হইতে পারেনা যে তিনি মুঢ় ভিন্ন কিছুই নহে, তাহাকে সুনিশ্চিতরূপে বুদ্ধিভ্রষ্ট, মূর্খবলিয়া জানিবে এবং তিনি বা তাহারা নিশ্চয় ভক্তিধর্ম্ম হইতে বিচ্যুত হইয়াছেন অর্থাৎ নববিধাভক্তি তথা মহাপ্রভুর প্রকটিত রাগানুগা ভজন বিষয়েও তিনি যে অনভিজ্ঞ ইহাই জানিবে ৷৷ সে বা তাহাদিগের হৃদয়াকাশে এখনও গৌররূপী মহাপ্রেমভক্তি এখনও প্রকাশিত হয় নাই বলিয়াই তাহারা শ্রীধাম নবদ্বীপকে ব্রজ হইতে সামান্য বলে মনে করিয়া থাকে ৷৷ অতএব এই সমস্ত ব্যক্তিবর্গের বাক্য কদাপি স্বীকার্য্য নয় ইহাই শ্লোকের তাৎপর্য্য ৷৷

 
 
 
Be Inspired
International Mula Gaudiya Sampraday Trust 

Write Us

For Any Assistance Or  Query Please Email Or Call To Us

Imgaudiyas@gmail.com

+918439217878

Vrindavan,Uttar Pradesh, India

  • Facebook
  • Facebook
  • YouTube Social  Icon
  • Whatsapp social icon
  • YouTube Social  Icon
  • Twitter Social Icon
  • instagram social icon
  • Facebook Social Icon

Success! Message received.

bottom of page