- চাণক্য পণ্ডিত ।। चाणक्य पण्डित
- May 4, 2020
- 3 min read
Updated: Jun 25, 2020

শ্রী নৃসিংহ চতুর্দশী ব্রত মা
হাত্ম্যঃ
বৃহন্নারসিংহ পুরানে ভগবান শ্রী নৃসিংহ দেব ভক্ত প্রহ্লাদ কে উপদেশ প্রদান করলো যে,
বর্ষে বর্ষে তু কর্তব্যং মম সন্তুষ্টি কারণম্।
মহা গুহ্যমিদং শ্রেষ্ঠং মান বৈভবভীরুভিঃ ।।
প্রতি বছর আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে চতুর্দশী ব্রত কর্তব্য।জন্ম-মৃত্যুময় সংসার ভয়ে ভীত মানুষ এই পরম গোপনীয় ও শ্রেষ্ঠ ব্রত পালন করবে।
বৈশাখ মাসের শুক্লা চতুর্দশীতে শ্রী নৃসিংহ দেব আবির্ভূত হয়েছিলেন তাই এই তিথিতে ব্রত পালন করে ভগবান শ্রী নৃসিংহ দেবের পূজা করা হয়।
ভগবান শ্রী নৃসিংহ দেব বললেন,আমার ব্রত দিন জেনেও যে ব্যক্তি তা পালন করে না সূর্য চন্দ্র যতদিন থাকবে ততদিন সেই ব্যক্তিকে নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। যদিও আমার ভক্তরা এই ব্রত করে থাকে তবুও প্রত্যেকের এই ব্রতে অধিকার রয়েছে। এবং এই ব্রত প্রত্যেক ভক্তকে অবশ্যই পালন করতে হবে।
ভক্ত বৎসল প্রহ্লাদ বললেন, হে ভগবান হে নরহরি নৃসিংহ দেব হে সকলের দেবগনের আরাধ্য প্রভু আপনাকে নমস্কার জানাই। আমি জিজ্ঞাসা করছি হে প্রভু তোমার প্রতি আমার ভক্তি কিরূপে জাগ্রত হলো আমি তোমার প্রিয় ভক্ত হয়ে উঠলাম?
ভগবান শ্রী নৃসিংহ দেব বললেন, হে বুদ্ধিমান প্রহ্লাদ একান্ত মনে শ্রবণ করো আমি তা বলছি।প্রাচীন কালে তুমি ব্রাহ্মণ ঘরে জন্মগ্রহণ করে ছিলেন কিন্তু ব্রাহ্মণ ঘরে জন্মগ্রহণ করেও তুমি বেদ পাঠ করনি। তখন তোমার নাম ছিল শ্রী বাসুদেব এবং তুমি ছিলে পতিতা আসক্ত।তোমার কোন ভাল কর্ম তখন ছিল না কেবল একটি মাত্র আমার ব্রত তুমি করেছিলে। সেই ব্রত প্রভাবে তোমার এরকম আমার প্রতি ভক্তি জন্মিয়েছে।
প্রহ্লাদ বললেন-হে নরহরি আমি কার পুত্র হয়ে ছিলাম এবং কি করতাম পতিতা শক্ত অবস্থায় কিভাবে তোমার এই মহা পুণ্যব্রত করলাম? দয়া করে তা আমাকে বলুন কৃপা করে তা আমাকে বলুন আমি শ্রবণ করতে চাই।
ভগবান শ্রী নৃসিংহ দেব বললেন,প্রাচীন কালে অবন্তীপুর নামক এর বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ ছিল তার নাম ছিল বসু শর্মা। ধর্ম পরায়ন ও বৈদিক ক্রিয়া অনুষ্ঠান সে করতো। তার ভারসা জগত প্রসিদ্ধা সুশীলা পতিব্রতা সদাচারীনি। তাদের পাঁচ পুত্র হয়েছিল চারজন ছিল সদাচারী, বিদ্বান, পিতৃভক্ত । কিন্তু ছোট ছেলে ছিল অসদাচারণ সর্বদা, পতিতা সক্ত ও মদ গ্রহণ করত। সেই ছোট পুত্র ছিলে তুমি স্বয়ং। নিত্য পতিতা গৃহে তুমি বাস করতে।
একদিন এক জঙ্গল এর মধ্যে তুমি ও তোমার সেই বান্ধবী ঘুরতে গিয়েছিলে। তোমরা মনে করছিলে যে দিনটা ভালো যাবে।কিন্তু তোমাদের নিজেদের মধ্যে চরিত্র বিষয়ে রকমে ও বেধে যায় এবং তোমাদের মন মালিন্য ও ঝগড়া বাধে এতে করে তোমরা আলাদা আলাদা স্থানে চলে যাও। বনো মধ্যে তুমি যেখানে গিয়েছিলে সেটা ছিল অতি পুরনো ধ্বংসাবশেষ গৃহ নির্দশন স্বরূপ কিছু ইট-পাথর দেখেছিলে। সেই নির্জন স্থানে আলাদা ভাবে বসে তোমরা দুইজন ঝগড়া করছিলে আপন আপন ভাবে। সারাদিন তোমরা না খেয়ে ছিলে এমনকি তোমরা ঝগড়ার কারণে জল পর্যন্ত স্পর্শ বা গ্রহণ করোনি। মন মালিন্যওর কারনে তোমরা সেদিন সারা রাত জাগ্রত ছিলে ঘুমাতে পারোনি।
ক্লান্ত শরীরে দুঃখিত আন্তরিকভাবে তুমি যেখানে শুয়ে প্রার্থনা করছিলে ভগবানকে ডাকছি হে ভগবান হে বিষ্ণুদেব এই জগতের কত সুন্দর আমার মা বাবা কত সুন্দর ধার্মিক আমার ভাইয়েরা কত সুন্দর বাবা মায়ের মতো তারা সৎ চরিত্রবান ও খুব ভালো কিন্তু আমি নিম্ন কেন।আমি খারাপ। আমার চরিত্র ভালনা পথের পাগল এর চেয়েও আমি নিকৃষ্ট। হে ভগবান বিষ্ণু ভালো লোকেরা তোমার শরণাগত হয় মূর্খ ব্যক্তি কখনো তোমার পাদপদ্মে আশ্রয় গ্রহণ করে না।আমি অতি নিঃসঙ্গ আমি বড় অসহায় অবস্থায় তোমার কাছে প্রার্থনা করছি যে হে হে ভগবান আমাকে বিশুদ্ধ ও সুন্দর জীবন কৃপা করে দান করুন। এভাবে তুমি প্রার্থনা করছিলে। আর তোমার বান্ধবী ও সেই একই ভাবে ভগবানকে ডাকছিল।সে বলছিল যদি তোমার অহৈতুকি কৃপা দৃষ্টি আমার প্রতি থাকে তবে দয়া করে আমার এই জীবন পরিবর্তন করে সুন্দর ও সমাজ কেন্দ্রিক জীবন দান করো এভাবে সেও আকুল প্রার্থনা করছিল।
ভগবান শ্রী নৃসিংহ দেব বললেন, সেই স্থানটি ছিল আমার প্রাচীন এক মন্দির। সেই দিনটি ছিল বৈশাখ মাসের শুক্লা চতুর্দশী আমার আবির্ভাবের দিন আর সেই দিনই তুমি আমাকে দেখেছিলে এবং অজান্তে উপবাস করেছিলে।অর্থাৎ অজ্ঞাতসারেই তোমরা আমার পরম মঙ্গলময় এই চতুর্দশী ব্রত পালন করেছিলেন সেই প্রভাবে তুমি এ জন্মে আমার অতি প্রিয় ভক্ত রূপে জন্ম গ্রহণ করেছ। আর সেই পতিতা স্বর্গলোকে অপ্সরা জীবন লাভ করে ত্রিভুবনে চারিনী হয়েছেন।
সে ভক্ত প্রহ্লাদ আমার ব্রথের প্রভাব শোনো আমি তোমাকে অতি গোপনীয় কথা বলব।সৃষ্টি শক্তি লাভের উদ্দেশ্যে আমার এই মহা চতুর্দশী ব্রত পালন করেছিলেন কিন্তু।ত্রিপুরাঅসুরকে বধ করার উদ্দেশ্যে স্বয়ং দেবাদিদেব শিব এই ব্রত পালন করেছিলেন।স্বর্গ সুখ লাভের জন্যই দেবতারা আগের জন্মে আমার এই ব্রত করেছিলেন। পতিতা ও এই ব্রত প্রভাবে সুখ ভোগ করে থাকে।যে সমস্ত মানুষ আমার এই গোপন শ্রেষ্ঠ ব্রত পালন করবে শতকোটি জন্মে তাদের সংসারে আসতে হবে না আমার ব্রত প্রভাবে ও পুত্র নারী ভক্ত লাভ করবে, দরিদ্র ব্যক্তি ধন সম্পদের মালিক হবে, তেজসকামি তেজ লাভ করবে, রাজ্য কামি ব্যক্তি রাজ্য পায়,দীর্ঘ আয়ু যে প্রার্থনা করে তার দীর্ঘ আয়ু লাভ হয়। স্ত্রী লোকেরা আমার এই মহা ব্রত পালন করলে ভাগ্যবতী হয়, এই ব্রত সৎ পুত্র প্রদত্ত পুত্রশোক বিনাশক দিব্য সুখ প্রদ। নর নারী যারা এই শ্রেষ্ঠ ব্রত পালন করে তাদের আমি সুখ ও ভক্তি মুক্তি ফল প্রদান করি।
হে ভক্ত রাজ প্রহ্লাদ, পাপী ব্যক্তিদের আমার এই ব্রত পালনে সুমতি হয় না। পাপ কর্ম তাদের প্রধান কর্ম হয়ে থাকে এবং তারা জন্মে জন্মে পাপ করে নরকে পতিত হয় ।
লিখেছেনঃ--- শ্রীসৈকত কুমার,বরগুনা,বরিশাল
