UA-199656512-1
top of page

স্ত্রী ও শূদ্রের বেদাধিকার প্রসঙ্গে


কিছুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা বিষয় নিয়ে খুব তোলপাড় হচ্ছে যে শুদ্র ও নারীগণের বেদাধিকার আছে কী না? তো এই আর্টিকেলটিতে এবিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব।


মূলত পূর্বাচার্য্যগণ এবিষয়ে যে মতামত দিয়েছেন তা হল, “স্ত্রী ও শুদ্রকে কেউ সরাসরি বেদমন্ত্র প্রদান করবেন না। অর্থাৎ, তারা সদগুরুর নিকট হতে বেদজ্ঞান শ্রবণ করবে। কিন্ত গুরুদেব তাদের সরাসরি বেদমন্ত্র প্রদান করবেন না।” এই হল বিধান। কিন্তু নব্য আর্যরা দাবী করে যে শাস্ত্রে স্ত্রী এবং শুদ্রকেও সমান বেদাধিকার দেয়া হয়েছে। স্বভাবতই আধুনিক সভ্যতায় নারীবাদী মানসিকতার বৃদ্ধি ঘটায় আর্য-সমাজের মতবাদটি মানুষ সাদরে গ্রহণ করছে এবং কেউ এর বিরোধিতা করলে তাকে ভন্ড, পৌরাণিক, ধর্ম-ব্যাবসায়ী ইত্যাদি ট্যাগ লাগাতেও কসুর করা হচ্ছে না। কিন্তু প্রকৃত সত্য এই যে নব্যার্যদের এই দাবী সম্পূর্ণ ভুল। চলুন দেখে নেয়া যাক। সকলের প্রতি অনুরোধ সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনযোগ সহকারে পড়বেন।


প্রথমত এই সকল নব্যার্যরা যজুর্বেদ ২৬/২ রেফারেন্স দেখিয়ে বলে যে, সেখানে নারীদের বেদাধিকার দেয়া হয়েছে। তাদের এই কথা সম্পূর্ণ বানোয়াট। দেখুন কী বলছে যজুর্বেদ ২৬/২



এখানে মূল মন্ত্রে কিংবা অনুবাদে কোথাও নারী শব্দটিই নেই। কিন্তু আর্যসমাজীরা লোকের মধ্যে সিম্প্যাথি সৃষ্টি করে তাদের ব্যাবসা রমরমা করার জন্য মন্ত্রটিকে টানা-হ্যাচড়া করে এর মধ্যে নারী কথাটি ঢুকিয়ে দেয়।


তবে এই শ্লোক দেখে অনেকে বলতে পারেন যে এখানে তো ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,বৈশ্য, শূদ্র সকলের বেদবিষয়ে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে,  তাহলে নিশ্চয়ই শুদ্রগণ বেদপাঠ করতে পারবেন? উত্তর হল না। কারণ এই শ্লোকে বেদজ্ঞানের বিষয়ে সমানধিকার বলা হয়েছে, বেদমন্ত্রের অধিকার দেয়া হয়নি। এবিষয়ে আমরা একটু পরে আলোচনা করব।


তার আগে দেখে নিই যে স্ত্রী এবং শুদ্রগণ বেদপাঠ করবেন না কেন?


আমাদের শাস্ত্রে বিধান হল উপনয়ন সংস্কারের আগে কেউ বেদপাঠের অনুমোদন লাভ করেনা। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য উপনয়ন লাভের পর গুরুকূলে বেদশিক্ষা লাভ করবেন। কিন্তু শাস্ত্রে শুদ্র এবং স্ত্রীলোকের জন্য কোন উপনয়ন সংস্কার দেখা যায়না। মনু-সংহিতা হতে বিষয়টি পরিষ্কার হয়।


গর্ভাষ্টমেঽব্দে কুর্ব্বীত ব্রাহ্মণস্যোপনায়নম্।

গর্ভাদেকাদশে রাজ্ঞো গর্ভাত্ত দ্বাদশে বিশঃ।।


গর্ভ হওয়াবধি অষ্টম বৎসরে অর্থাৎ ভূমিষ্ঠ হওয়াবধি ছয় বছর তিন মাসের পর সাত বৎসর তওন মাস পর্যন্ত ব্রাহ্মণের উপনয়ন দেওয়া উচিৎ। গর্ভের সময় লইয়া একাদশ বৎসরে অর্থাৎ ভূমিষ্ঠ হওয়াবধি নয় বৎসর তিন মাসের পর দশ বৎসর তিন মাস পর্যন্ত ক্ষত্রিয়ের উপনয়ন এবং দ্বাদশ বৎসর অর্থাৎ দশ বৎসর তিন মাসের পর এগার বৎসর তিন মাস পর্যন্ত বৈশ্যের উপনয়ন দেয়া বিধেয় (মনুসংহিতা ২।৩৬)


দেখুন এই শ্লোকে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের উপনয়ন সম্বন্ধে বলা হয়েছে কিন্তু শুদ্রের উপনয়ন সম্বন্ধে কিছু বলা হয়নি। আর স্ত্রীলোকের উপনয়নাদি সম্পর্কে মনুসংহিতায় বলা হয়েছে।


বৈবাহিকো বিধিঃ স্ত্রীণাং সংস্কারো বৈদিকঃ স্মৃতঃ।

পতিসেবা গুরৌ বাসো গৃহার্থোঽগ্নিপরিক্রিয়া।।


বিবাহ সংস্কারই স্ত্রীলোকের উপনয়ন নামক বৈদিক সংস্কার, তাহাতে স্বামীর সেবাই গুরুকূলে বাস। (মনুসংহিতা ২।৬৭)


এখানে স্পষ্টভাবেই বলে দেয়া হয়েছে যে বিবাহই হলো স্ত্রীলোকের উপনয়ন সংস্কার, আর গৃহকর্মই তার ধর্ম,


এরপর শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে,


সংস্কারা যত্রাবিচ্ছিন্নাঃ স দ্বিজোঽজো জগাদ যম্।

ইজ্যধ্যয়নদানানি বিহিতানি দ্বিজন্মনাম্।

জন্মকর্মাবদাতানাং ক্রিয়াশ্চাশ্রমচোদিতাঃ।।


যাঁরা অবিচ্ছিন্নরূপে বৈদিক মন্ত্রের দ্বারা সম্পাদিত গর্ভাধান এবং অন্যান্য সংস্কারের দ্বারা শুদ্ধ হয়েছেন, এবং ব্রহ্মা যাঁদের অনুমােদন করেছেন, তারা দ্বিজ। এই প্রকার ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য, যাঁরা তাঁদের কুল- পরম্পরা এবং আচরণের দ্বারা শুদ্ধ হয়েছেন, তাদের কর্তব্য ভগবানের পূজা করা, বেদ অধ্যয়ন করা, এবং দান করা। এই পদ্ধতিতে তাদের চতুরাশ্রমের (ব্রহ্মচর্য, গৃহস্থ, বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস) নিয়ম পালন করা কর্তব্য।


এই শ্লোকেও ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যের জন্য সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শুদ্রের জন্য কোনপ্রকার সংস্কারের কথা উল্লেখ করা হয়নি।


তাহলে স্ত্রী ও শুদ্রের কর্তব্যকর্ম কী? সেবিষয়ে ভাগবতমে বলা হয়েছে,


শূদ্রস্য সন্নতিঃ শৌচং সেবা স্বামিন্যমায়য়া।

অমন্ত্রযজ্ঞো হ্যস্তেয়াং সত্যং গোবিপ্ররক্ষণম্।।


সমাজের উচ্চ বর্ণের মানুষদের (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যদের) প্রণতি নিবেদন করা, শৌচ, নিষ্কপটতা, প্রভুর সেবা, মন্ত্রবিহীন যজ্ঞ অনুষ্ঠান করা, চুরি না করা, সর্বদা সত্যভাষণ এবং গাভী ও ব্রাহ্মণদের রক্ষা- এইগুলি শূদ্রের লক্ষণ। (শ্রীমদ্ভাগবত ৭/১১/২৪)


স্ত্রীণাং চ পতিদেবানাং তচ্ছুশ্রূষানুকূলতা।

তদ্বন্ধুষুনুবৃত্তিশ্চ নিত্যং তচ্ছ্রতধারণম্।।


পতির সেবা করা, সর্বদা পতির প্রতি অনুকূল থাকা, পতির আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবদের প্রতিও সমানভাবে অনুকূল থাকা এবং পতির ব্রত পালন করা- এই চারটি পতিব্রতা স্ত্রীর লক্ষণ। (শ্রীমদ্ভাগবত ৭/১১/২৫)


তাহলে স্ত্রী এবং শুদ্র বেদপাঠ না করলে তারা কীভাবে মুক্তি লাভ করবে? উত্তর হলো ভগদসেবার মাধ্যমে। উপনয়নাদি সংস্কার না থাকায় নারী ও শুদ্রের স্বভাবজাত কর্ম হল সেবা। আর এদিক থেকে তারা সবচেয়ে ভাগ্যবান। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যগণ বেদাদি শাস্ত্র অধ্যয়ন করেও হয়তো ভগবানকে নাও জানতে পারে  কিন্তু একজন সেবক নিষ্ঠাবান হয়ে সেবার ফলে অচিরেই ভগবানের কৃপা লাভ করতে পারেন। যার দৃষ্টান্ত আমরা বৃন্দাবনের যাজ্ঞিক ব্রাহ্মণ-পত্নীদের ক্ষেত্রে  দেখতে পাই। তারা গুরুকূলে শাস্ত্রধ্যয়ন না করেও তপশ্চর্যা না করেও ভগবানকে পেয়েছিলেন।


নাসাং দ্বিজাতিসংস্কারো ন নিবাসো গুরাবপি।

ন তপো নাত্মমীমাংসা ন শৌচং ন ক্রিয়াঃ শুভাঃ।।

তথাপি হ্যুত্তমঃশ্লোকে কৃষ্ণে যোগেশ্বরেশ্বরে।

ভক্তিরদৃঢ়া ন চাস্মাকং সংস্কারাদিমতামাপি।।


অর্থাৎ, এই নারীগণের কখনো উপনয়নাদি সংস্কার হয়নি, তারা ব্রহ্মচারীরূপে গুরুর আশ্রমে বাস করেনি, তারা কোনও তপশ্চর্যার অনুষ্ঠান করেনি, তারা আত্মার বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে বিচার-বিশ্লেষণ করেনি, শৌচাচার অথবা পূণ্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানেও যুক্ত নয়, তবুও উত্তম শ্লোক এবং যোগেশ্বরেরও ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণের প্রতি তাদের দৃঢ়ভক্তি রয়েছে। পক্ষান্তরে, এই সমস্ত প্রক্রিয়ার অনুষ্ঠান করেও ভগবানের প্রতি আমাদের এরূপ ভক্তি নেই। (শ্রীমদ্ভাগবত ১১.২৩.৪৩-৪৪)


এই শ্লোক থেকে বোঝা যায় যে ভক্তির দ্বারা বেদ অধ্যয়ন না করেও ভগবানকে পাওয়া যায়।


সৎসঙ্গেন হি দৈতয়া যাতুধানা মৃগাঃ খগাঃ।

গন্ধর্বাপ্সরসো ননাগঃ সিদ্ধাশ্চারণগুহ্যকা।।

বিদ্যাধরা মনুষ্যেযু বৈশ্যাঃ শূদ্রাঃ স্থ্রিয়োঽস্ত্যজাঃ।

রজস্তমঃপ্রকৃতয়ন্তস্মিংস্তস্মিন্ যুগে যুগে।।

বহবো মৎপদং প্রাপ্তাস্ত্বাষ্ট্রকায়াধবাদয়ঃ।

বৃষপর্বা বলির্বাণো ময়শ্চাথ বিভীষণঃ।।

সুগ্রীবো হনুমানৃক্ষো গজো গৃধ্রো বণিক্পথঃ।

ব্যাধঃ কুব্জা ব্রজে গেপ্যাো যজ্ঞপত্যুস্তথাপরে।।


প্রত্যেক যুগেই রজো এবং তমােগুণাশ্রিত বহু জীব আমার ভক্তবৃন্দের সঙ্গলাভ করে থাকে। সেইভাবে, দৈত্যগণ, রাক্ষসেরা, পশুপাখি, গন্ধর্ব, অপ্সরা, সর্পেরা, সিদ্ধগণ, চারণেরা, গুহ্যকেরা এবং বিদ্যাধরগণ, তাছাড়া, বৈশ্য, শূদ্র, নারী এবং অন্যান্য নিম্নশ্রেণীর মানুষেরাও আমার পরমধাম লাভ করে থাকে। বৃত্রাসুর, প্রহ্লাদ মহারাজ এবং তাঁদের মতাে অন্যেরাও আমার ভক্তসঙ্গের মাধ্যমে আমার ধাম প্রাপ্ত হয়েছে, তাছাড়া বৃষপর্ব, বলি মহারাজ, বাণাসুর, ময়দানব, বিভীষণ, সুগ্রীব, হনুমান, জাম্ববান, গজেন্দ্র, জটায়ু, তুলাধার, ধর্মব্যাধ, কুজা, বৃন্দাবনের গােপীগণএবং যজ্ঞানুষ্ঠানকারী ব্রাহ্মণদের পত্নীগণও সেইভাবে উদ্ধার লাভ করেছে। ( শ্রীমদ্ভাগবত ১১/১২/৩-৬)


তে নাধীতশ্রুতিগণা নোপাসিতমহত্তমাঃ।

অব্রতাতপ্ততপসঃ মৎসঙ্গান্মামুপাগতাঃ।।


যে সকল মানুষদের বিষয়ে আমি উল্লেখ করেছি, তারা মনােযােগ সহকারে বৈদিক শাস্ত্রাদি চর্চা করেনি, তারা মহা মুনিঋষিদেরও আরাধনা করেনি, কিংবা নিষ্ঠাভরে ব্ৰত সাধনাদিও করেনি। শুধুমাত্র আমার সঙ্গে এবং আমার ভক্তমণ্ডলীর সঙ্গলাভের মাধ্যমে তারা আমাকে লাভ করেছিল। (শ্রীমদ্ভাগবত ১১/১২/৭)


অর্থাৎ, মনযোগ সহকারে বেদ অধ্যয়ন না করেও সাধুসঙ্গের প্রভাবে ভগবানকে লাভ করা যায়। 


তো এই সকল শ্লোক থেকে স্পষ্টভাবেই বোঝা যায়, ভক্তিমূলক সেবার মাধ্যমে যা সম্ভব তা শাস্ত্রধ্যয়ন, তপস্যা আদি কোন ধর্মীয় আচারের মাধ্যমেই সম্ভব নয়। আর এই সত্যই প্রতিপন্ন হয়েছে শ্রীমদ্ভগবগীতায়,


মাং হি পার্থ ব্যপাশ্রিত্য যেঽপি স্যুঃ পাপযোনয়ঃ।

স্ত্রিয়ো বৈশ্যাস্তথা শূদ্রাস্তেঽপি যান্তি পরাং গতিম্।।


হে পার্থ! যারা আমাকে বিশেষভাবে আশ্রয় করে, তারা স্ত্রী, বৈশ্য, শূদ্র আদি নিচকূলে জাত হলেও অবিলম্বে পরাগতি লাভ করে। (শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৯.৩২)


এর থেকে স্পষ্টই বোঝা যায় ভগবদসেবার মাধ্যমে অচিরেই ভগবানকে লাভ করা যায়। আর স্ত্রী ও শুদ্র বিশেষত স্ত্রীলোকের স্বভাজাত কর্মই হলো সেবা। কাজেই এর মাধ্যমে সহজেই তারা ভগবানকে লাভ করতে পারেন। যা বেদবিদ ব্রাহ্মণের পক্ষেও সুলভ নয়। সে বিষয়ে ভাগবতমে বলা হয়েছে,


শব্দব্রহ্মণি নিষ্ণাতো ন নিষ্ণায়াৎ পরে যদি।

শ্রমস্তস্য শ্রম ফলো হ্যধেনুমিব রক্ষতঃ।।


কেউ হয়তো সমস্ত বৈদিক শাস্ত্রে পারদর্শী হতে পারেন, কিন্তু তিনি যদি পরমেশ্বরকে (শ্রীকৃষ্ণকে) উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন, তা হলে তাঁর শাস্ত্রজ্ঞান দুগ্ধদানে অক্ষম গাভীর মতোই অর্থহীন। তিনি ভারবাহী পশুর মতোই শাস্ত্রের বোঝা বহন করেন। (শ্রীমদ্ভাগবত ১১/১১/১৮)


শাস্ত্রজ্ঞানশূণ্য স্ত্রী-শূদ্রাদির পক্ষে জ্ঞানযোগের সাহায্যে মুক্তিলাভ সম্ভবপর নয়। কিন্তু ভক্তিযোগ জাতিবর্ণনির্বিশেষে সকলের জন্যই সুখসাধ্য। ভাগবত ধর্মের এটাই বিশেষত্ব। এতে জাতিভেদ-জনিত কোন অধিকারভেদ  নেই। পরমেশ্বর ভগবানকে লাভ করার জন্য ভক্তিমূলক সেবাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। সেবিষয়ে ভাগবতমে বলা হয়েছে,


নৈতে গুণা ন গুণিনো মহদাদয়ো যে

সর্বে মনঃপ্রভৃতয়ঃ সর্বদেবমর্ত্যাঃ।

আদ্যন্তবন্ত উরুগায় বিদন্তি হি ত্বা-

মেবং বিমশ্য সুধিয়ো বিরমন্তি শব্দাৎ।।


জড়া প্রকৃতির তিন গুণ (সত্ত্ব, রজ এবং তমােগুণ), এই তিন গুণের অধিষ্ঠাতৃ দেবতাগণ, পঞ্চ স্থূল তত্ত্ব, মন, দেবতা, মানুষ, কেউই আপনাকে জানতে পারে না, কারণ তারা সকলেই জন্ম মৃত্যুর অধীন। সেই কথা বিবেচনা করে, প্রকৃত জ্ঞানবান ব্যক্তিরা ভগবদ্ভক্তির পন্থা অবলম্বন করেন। এই প্রকার জ্ঞানবান ব্যক্তিরা বেদ অধ্যয়ন থেকে বিরত হয়ে ভগবদ্ভক্তিতে যুক্ত হন। (শ্রীমদ্ভাগবত ৭/৯/৪৯)


এরপরে প্রশ্ন আসে যে, তাহলে স্ত্রী ও শূদ্রের কী কোনপ্রকার শাস্ত্রজ্ঞানের প্রয়োজন নেই? উত্তর হলো শাস্ত্রজ্ঞান লাভের প্রয়োজন আছে। আর বেদজ্ঞান লাভের জন্য সকলেই সমানাধিকারী। কিন্তু, স্ত্রী- শুদ্রের তো বেদপাঠ অনুমোদিত নয়, তাহলে তারা বেদজ্ঞান লাভ করবে কীভাবে? স্ত্রী ও শুদ্রের বেদজ্ঞান লাভের পদ্ধতি হল এই যে, গুরুদেব তাদের উপমার মাধ্যমে, গল্পচ্ছলে, উপদেশ আকারে বেদজ্ঞান দান করবেন কিন্তু সরাসরি বেদমন্ত্র দান করবেন না। এছাড়া যেহেতু, স্ত্রী-শূদ্রগণ শ্রুতি হৃদয়ঙ্গম করতে পারবেন না সেহেতু ব্যাসদেব তাদের জন্য মহাভারত রচনা করে গিয়েছেন। যা পাঠের মাধ্যমে বেদের সকল জ্ঞান লাভ করা যায়।


স্ত্রীশূদ্রদ্বিজবন্ধুনাং ত্রয়ি ন শ্রুতিগোচরা।

কর্মশ্রেয়সি মূঢ়ানাং শ্রেয় এবং ভবেদিহ।

ইতি ভারতমাখ্যানং কৃপয়া মুনিনা কৃতম্।।


স্ত্রী-শূদ্র এবং দ্বিজোচিত গুণাবলীবিহীন  কুলোদ্ভূত মানুষদের বেদের তাৎপর্য হৃদয়ঙ্গম করার ক্ষমতা নেই, তাই তাদের প্রতি কৃপাপরবশ হয়ে মহর্ষি বেদব্যাস মহাভারত নামক ইতিহাস রচনা করলেন, যাতে তারা তাদের জীবনের পরম উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পারে। (শ্রীমদ্ভাগবত ১.৪.২৫)


আর এজন্যই শাস্ত্রে মহাভারতকে পঞ্চম বেদ বলা হয়েছে।


তবে এখন অনেকে প্রশ্ন করবেন যে, যদি  নারীদের বেদপাঠ নিষিদ্ধই হয় তাহলে বেদের নারী মন্ত্রদ্রষ্টারা কীভাবে মন্ত্রদ্রষ্টা হলেন?


তো বেদদ্রষ্টা হওয়ার জন্য বেদপাঠের দরকার পরেনা। নারী বেদদ্রষ্টাগণ ভক্তির দ্বারা বেদমন্ত্র দর্শনের যোগ্যতা লাভ করেছিলেন। কাজেই বেদ দ্রষ্টা নারী ঋষিদের দৃষ্টান্ত দেখিয়ে এটা প্রমাণ করা যায় না যে স্ত্রীলোকের বেদাধিকার আছে।


স্ত্রী-শুদ্রগণ ইতিহাস, পুরাণ, মহাভারত অধ্যয়নের মাধ্যমেই শাস্ত্রজ্ঞান লাভ করবেন। ইহাই শাস্ত্র এবং আচার্যগণের সিদ্ধান্ত।


জয় শ্রী রাধে!

হরে কৃষ্ণ!

 
 
 

Comments


Be Inspired
International Mula Gaudiya Sampraday Trust 

Write Us

For Any Assistance Or  Query Please Email Or Call To Us

Imgaudiyas@gmail.com

+918439217878

Vrindavan,Uttar Pradesh, India

  • Facebook
  • Facebook
  • YouTube Social  Icon
  • Whatsapp social icon
  • YouTube Social  Icon
  • Twitter Social Icon
  • instagram social icon
  • Facebook Social Icon

Success! Message received.

bottom of page