UA-199656512-1
top of page

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে নিয়ে অপপ্রচারের জবাব

সম্প্রতি অনিতা দেবশর্মা তর্করত্ন নামক এক মহিলা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে নিয়ে যাচ্ছেতাই রকমের জঘন্য অপপ্রচার চালিয়েছেন। তার সেসকল অপপ্রচার এই আর্টিকেলে খন্ডন করা হল।


ree

প্রথমেই তিনি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কে হত্যা করা হয়েছে বলে মহাপ্রভুর ভগবত্বা খন্ডন করতে চেয়েছেন। তিনি লিখেছেন “শুনতে পাওয়া যায়, চৈতন্যদেব জগন্নাথদেবের মুর্তিতে লীন হয়ে গেছিলেন। কিন্তু চৈতন্যদেবের পরিধেয় কাপড় ঐ জগন্নাথ দেবের শরীরে বেঁঝে ছিল। এখানে শঙ্কা হতে পারে যে, রাক্ষস জগন্নাথদেব এত লম্বা শরীর বিশিষ্ট চৈতন্যদেবকে গিলে খেলেন অথচ তাঁর পরিধেয় কাপড়কে খেলেন না। বলা বাহুল্য, ভগবানে লীন হয় মন প্রাণ ; শরীর কখনও ভগবানে লীন হয় না। শরীর যদি ভগবানে লীন হতো, তবে সাধু মহাপুরুষদের দেহ পৃথিবীতে দাহ করতে হতো না। চৈতন্যদেবকে পুরীতে হত্যা করা হয়েছিল ; এবং শরীর নিখোঁজ করার অভিপ্রায়ে প্রচার করা হলো চৈতন্যদেব, জগন্নাথের মুর্তিতে লীন হয়েছেন।”


➤ মহাপ্রভুকে হত্যা করা হয়েছিল এরূপ কোন প্রকৃষ্ট প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। এখন আপনাদের অনুমান সত্য হলেও মহাপ্রভুকে হত্যা করা হয়নি।


মহাভারতে দেখা যায় জরা নামক ব্যাধ শ্রীকৃষ্ণকে তীরবিধ্ব করে এবং তখন ভগবান অন্তর্হিত হন এবং লিঙ্গপুরাণে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দেহাবশেষ দাহ করার ঘটনাও পরিলক্ষিত হয়। তাহলে আপনি কী একে হত্যা বলবেন। ভগবানকে কী হত্যা করা যায়? কখনোই না। অলৌকিক ঘটনার প্রতি শ্রদ্ধাবিহীন লোক প্রশ্ন তুলবে এটিই স্বাভাবিক। এজন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এরূপ লীলা করে অন্তর্হিত হয়েছিলেন।


ঠিক তেমনি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু হলেন স্বয়ং ভগবান। কাজেই তাকে কেউ খুন করতে পারে না। পুরীতে তাকে হত্যা করার মতো ঘটনা ঘটলেও তাকে জাগতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কোন সুযোগ নেই। কারণ ভগবান গীতায় বলেছেন,


জন্ম কর্ম চ মে দিব্যমেবং যো বেত্তি তত্ত্বতঃ।

ত্যাক্ত্বা দেহং পুনর্জন্ম নৈতি মামেতি সোঽর্জুন।।


পদার্থ

জন্ম- জন্ম

কর্ম- কর্ম

চ- এবং

মে- আমার

দিব্যম্- দিব্য

এবম্- এভাবে

যঃ - যিনি

বেত্তি- জানেন

তত্ত্বতঃ - যথার্থভাবে

ত্যক্ত্বা- ত্যাগ করে

দেহম্- বর্তমান দেহ

পুনঃ - পুনরায়

জন্ম- জন্ম

ন- না

এতি- প্রাপ্ত হন

মাম- আমাকে

এতি- প্রাপ্ত হন

সঃ - তিনি

অর্জুন- হে অর্জুন!


ভাবার্থ

হে অর্জুন! যিনি আমার এই প্রকার দিব্য জন্ম ও কর্ম যথাযথভাবে জানেন, তাহাকে আর দেহত্যাগ করিবার পর পুনরায় জন্মগ্রহণ করিতে হয় না, তিনি আমার নিত্যধাম লাভ করিয়া থাকেন। (শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৪.৯)


কাজেই মহাপ্রভু যেহেতু স্বয়ং ভগবান সেহেতু তিনি কখনো খুন হইতে পারেন না। তিনি কেবল এরূপ ঘটনাকে উপলক্ষ্য করে অন্তর্হিত হয়েছিলেন। মহাপ্রভু যে স্বয়ং ভগবান তার বহুবিধ শাস্ত্রপ্রমাণ রয়েছে। নিচে দুটি লিংক দেয়া হল।




এরপর তিনি লিখেছেন, “চৈতন্যদেব শৈব মতাবলম্বী ছিলেন এবং তিনি অদ্বৈতবাদীও ছিলেন।” ➤ ইহা সর্বৈব একটা বানোয়াট স্বকপোলকল্পিত মনোপ্রসূত বাক্য লেখকের। যদিও ইহা সর্বশাস্ত্র ও সর্বজনবিদিত ভগবান শ্রীচৈতন্যদেব স্বয়ং কৃষ্ণ। তিনি একদিকে যেমন আরাধ্য পরতত্ত্ব আবার অন্যদিকে কৃষ্ণোপাসনার লোকশিক্ষকও বটে। সর্বত্র তিনি কৃষ্ণভজনশিক্ষাকেই তাঁর পার্ষদবর্গের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। "কাঁহা মোর প্রাণনাথ মুরলীবদন.." আদি বাক্যে তাঁর প্রাণনাথ ইষ্টদেব যে একমাত্র মুরলীধর শ্রীকৃষ্ণই ; সেটা একজন শিশুরও অবোধ্য নয় !! 😂 কিন্তু সেটা লেখকের এখনো বোধগম্য হয় নাই। যদি বলেন, শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু শঙ্করাচার্য্যের সম্প্রদায়ে কেশব ভারতীর কাছে সন্ন্যাস দীক্ষা নেওয়ায় শঙ্করাচার্য্য অনুসারী ও অদ্বৈতবাদী ছিলেন, তাহলে এই যুক্তি খুবই অদ্ভুত, ভ্রান্তপূর্ণ ও হাস্যকর !! ★ মধ্বাচার্য্য অদ্বৈতবাদী অচ্যুতপ্রেক্ষ এর কাছে সন্ন্যাস নেন কিন্তু তিনি অদ্বৈতবাদ খণ্ডন করে শুদ্ধ দ্বৈতবাদই প্রচার করেন। ★ স্বয়ং শঙ্করাচার্য্যের পরম্পরাই দেখা যায়, সদাশিব—>বশিষ্ট ঋষি—>শক্তিমুনি —> পরাশর ঋষি—>#বেদব্যাস —>শুকদেব —>গৌড়পাদাচার্য্য —> গোবিন্দ ভগবৎপাদাচার্য্য —>#শঙ্করাচার্য্য দেখা যায় শঙ্করাচার্যের পরম্পরায় ব্যাসদেবকে। কিন্তু আশ্চর্যজনক এই যে শঙ্করাচার্য্য স্বয়ই ব্যাসসিদ্ধান্তকে মান্য করেন নি। জগৎ সৃষ্টির বিষয়ে ব্যাসদেব বলেছেন “আত্মকৃতে পরিণামাৎ" ব্রহ্মসূত্র (১.৪.২৬) যার অর্থ হয় ব্রহ্ম জগৎ রূপে পরিণত হয়। কিন্তু শঙ্কর বলেছেন জগৎ ব্রহ্মের বিবর্ত। ব্যাসের পরিণামবাদ ভুল বলে তিনি বিবর্তবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিষয়টিই লোকশিক্ষক শ্রীমন্মহাপ্রভু অদ্বৈতবাদী সার্বভৌম ভট্টাচার্যের নিকট তুলে ধরেন, "পরিণামবাদ ব্যাস সূত্রের সম্মত। অচিন্ত্যশক্তি ঈশ্বর জগদ্রূপে পরিণত।। ব্যাস ভ্রান্ত বলি সেই সূত্রে দোষ দিয়া। "বিবর্তবাদ" স্থাপিয়াছে কল্পনা করিয়া।। (চৈ.চ, মধ্য, ৬/১৭০, ১৭২) "শঙ্কর দিগ্বিজয়" ৭ম পরিচ্ছেদ এ ও একটি কাহিনী আছে যে “শঙ্করাচার্য্য তার শিষ্যদের কাছে ব্রহ্মসূত্র ব্যাখ্যা করছিলেন তখন ব্যাসদেব এক ব্রাহ্মণের বেশে তাঁর সাথে ব্রহ্মসূত্র এর ওপর শাস্ত্রার্থ করেন। তার সাথে শঙ্করের বহু তর্ক, বাগ-বিতন্ডা হয়। শেষে ব্যাসের মত খন্ডণ করে আচার্য্য অদ্বৈতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। তখন ব্যাসদেব নিজ স্বরূপে এসে তাকে আশীর্বাদ করেন। " ব্যাসদেবের পরম্পরায় দীক্ষিত হয়েও শঙ্করাচার্য্য ব্যাসের মতের বিরোধী ছিলেন। সর্বসিদ্ধান্তসার সংগ্রহ গ্রন্থেও তিনি বৌদ্ধ, জৈন, পাশুপত, মীমাংসক, সাংখ্য, ইত্যাদি মতের সাথে বেদব্যাসের মতের ও খণ্ডন করেছেন। তেমনই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুও কাশীতে অদ্বৈতবাদী প্রকাশানন্দ সরস্বতীকে ও পুরীতে সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের কাছে অদ্বৈতবাদ খণ্ডন করেন। লেখক নিজ সুবিধা হাসিল করতে চৈতন্যচরিতামৃত শাস্ত্র কে ব্যবহার করেছেন কিন্তু তিনি যে আদৌও তা সম্পূর্ণরূপে অধ্যয়ন করেন নি, বা করলেও মহাপ্রভুর অদ্বৈতবাদ খণ্ডন কে বরাবরই এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন, তা একজন বিদ্বান শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত পাঠকের কাছে অবোধ্য নয়। তাই দেখা যাচ্ছে শঙ্করাচার্য্যের দশনামী সম্প্রদায় এ সন্ন্যাস গ্রহণ করেন বলেই চৈতন্য মহাপ্রভু কে অদ্বৈতবাদী সন্ন্যাসী, শঙ্করের মতের অনুসারী বলা ভুল। এরূপ মন্তব্যকারী নিশ্চয়ই আনন্দ গিরি রচিত শঙ্কর দিগ্বিজয় কে অস্বীকার করবেন না। [বি.দ্র: এখানে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যে অদ্বৈতবাদী নন, বরং তিনিও অদ্বৈতবাদ খণ্ডন করেছেন, সেটা বোঝাতেই শঙ্করাচার্যের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হয়েছে, এতে যদি পাঠক সমাজ ভাবে গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণ শঙ্করাচার্য্য বিদ্বেষী ; তাহা হবে সর্বৈব ভুল] তিনি আরও লিখেছেন, “তাঁকে হরিনাম প্রচার করতে বলা হয় ; কিন্তু তিনি দেখলেন যে, হরিনামের মধ্যে ওঙ্কার উপস্থিত নেই। তাই জন্য তিনি হরিনাম প্রচার করেন নি। হরিনাম প্রচার না করার অপরাধে চৈতন্যদেবকে হত্যা করা হয়।” ➤ আহা ! আষাঢ়ে গপ্পোর একশেষ। তিনি সর্বদাই হরিনামই প্রচার করেছেন। যার দৃষ্টান্ত চৈতন্যচরিতামৃত, চৈতন্যভাগবত আদি শাস্ত্রে এমনকি মহাপ্রভু সমসাময়িক গ্রন্থেও তা বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে। তাঁর অবতীর্ণের কয়েকটি উদ্দেশ্যের মধ্যে গোলোকের প্রেমধন শ্রীহরিনাম সংকীর্তন জগতে প্রচারও একটি উদ্দেশ্য। কলিযুগের যুগধর্ম হরিনাম সংকীর্তনকেই বিশেষভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। শুন শুন নিত্যানন্দ শুন হরিদাস। সর্বত্র আমার আজ্ঞা করহ প্রকাশ।। প্রতি ঘরে ঘরে গিয়া কর এই ভিক্ষা। বল কৃষ্ণ,ভজ কৃষ্ণ, কর কৃষ্ণ শিক্ষা।। ... হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরেরাম হরেরাম রাম রাম হরে হরে।। প্রভু কহে কহিলাম এই মহামন্ত্র। ইহা জপ গিয়া করিয়ে নির্বন্ধ।।... ( চৈতন্যচরিতামৃত) আদি পঁয়ার থেকে দেখা যায় তিনি সর্বত্রই হরিনামই প্রচার করেছেন। লেখিকা অবশ্য চৈতন্য চরিতামৃত মহাপ্রভুর মৃত্যুর ১৫০ বছর পরে রচিত এই কথা বলে চৈতন্য চরিতামৃত-কে অপ্রামাণিক প্রমাণ করার অপচেষ্টাও চালিয়েছেন। কাজেই তার জন্য আরও একটি প্রমাণ প্রদান করছি। শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভুর সমসাময়িক বিশিষ্ট নৈয়ায়িক সার্বভৌম ভট্টাচার্যের সাথে পুরীতে তার শাস্ত্রালোচনা হয়েছিল। অতঃপর সার্বভৌম ভট্টাচার্য শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নিকট নিজেকে সমর্পন করেছিলেন। তিনি মহাপ্রভুকে উদ্দিষ্ট করে ১০০ টি শ্লোক রচনা করেন, যা শ্রীচৈতন্য শতকম্ নামে পরিচিত। এই শ্রীচৈতন্য শতকমে বলা হয়েছে, বিষণ্ণ চিত্তান্ কলিপাপ ভীতান্ সংবীক্ষ্য গৌরো হরিনাম মন্ত্রং। স্বয়ং দদৌ ভক্তজনান সমাদিশেৎ কুরুষ্ব সংকীর্ত্তননৃত্য বাদ্যান্।। শ্রীশ্রীশচীনন্দন গৌরহরি কলিহত জীবদিগকে বিষণ্ণচিত্ত এবং পাপে কলুষিত ও ভীত দেখিয়া স্বয়ং হরিনাম মহামন্ত্র প্রদান করিয়াছেন এবং তাঁহার ভক্তগণকে নৃত্যবাদ্য সহিত হরিনাম কীর্ত্তন করিতে অভ্যস্ত করিয়াছেন। (শ্রীচৈতন্য শতকম্ ৬৪) শুধু তাই নয় শ্রীচৈতন্য শতকমের প্রতি পরতে পরতে সার্বভৌম ভট্টাচার্য বলেছেন যে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু হরিনাম প্রচার করেছেন। এখন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সমসাময়িক সার্বভৌম ভট্টাচার্যের বাক্যকেও লেখিকা কী অপ্রামাণিক বলবেন? এরপর তিনি লিখেছেন, “গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা চৈতন্যদেব নন। এটার প্রতিষ্ঠাতা বলদেব বিদ্যাভূষণ।” ➤ মূর্খের ন্যায় বক্তব্য। শ্রীল বলদেব বিদ্যাভূষণের আবির্ভাবের বহু পূর্বেই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু অচিন্ত্যভেদাভেদবাদ প্রচারের মাধ্যমে গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রীল বলদেব বিদ্যাভূষণপাদ সেই গৌড়ীয় বৈষ্ণব সিদ্ধান্ত "অচিন্ত্যভেদাভেদ" এর উপর বেদান্তসূত্রের গোবিন্দভাষ্য করে সম্প্রদায়কে বিশেষভাবে উজ্জীবিত করেন। এর অর্থ তিনি প্রতিষ্ঠাতা হয়ে গেলেন সেটা একটা ভুল ও বানোয়াট কথা। তিনি আরও লিখেছেন, “চৈতন্যদেব, অদ্বৈতাচার্য গোস্বামী, ও নিত্যানন্দ, এই তিনজন যে শৈব মতাবলম্বী ছিলেন, এটার প্রমাণ চৈতন্যচরিতামৃত থেকে দিতে পারা যাবে।” ➤ কিন্তু তিনি কোন রেফারেন্সই দেন নি। আর এই উদ্ভট থিয়োরি যে সম্পূর্ণ বানোয়াট সেটা আগেই দেখানো হয়েছে এবং চৈতন্যচরিতামৃত শাস্ত্রাদি পাঠ করলে যে কেউই সেটা বুঝতে পারবে। তিনি লিখেছেন, “নিত্যানন্দকে চৈতন্যচরিতামৃতে নিত্যানন্দ অবধূত বলা হয়েছে। অবধূত উপাধিটিও তান্ত্রিকদের উপাধি।” ➤ হ্যাঁ, অবধূত বলা হয়েছে। কিন্তু কি কারণে বলা হয়েছে সেটা লেখকের বোধগম্য নয়। তন্ত্রোক্ত শৈবাবধূত ( যাঁহারা পূর্ণাভিষেক অবধূত) এর সাথে নিত্যানন্দের অবধূত কে এক করে গুলিয়ে ফেলেছেন লেখক। অবশ্য এই মন্তব্য করার পিছনের প্রচ্ছন্ন কারণটিও যে বিদ্বান সমাজের অজানা নয় ! তাদের ধারণাটিই এমন যে, " নিতাইচাঁদ শ্রীকুলের সাধক ছিলেন, মাথায় জটা আর তাতে ত্রিপুরসুন্দরী, নর্মদেশ্বর এবং গলায় অনন্তশালগ্রাম নিয়ে ঘুরতেন।" [স্পষ্টীকরণঃ প্রামাণিক জীবনীসাহিত্য ও মহাজন পদাবলীতে সর্বত্র নিতাইচাঁদের চাঁচর কেশের বর্ণনা আছে। তিনি কখনো কখনো দণ্ড, কমণ্ডলু নিয়ে ঘুরতেন। মহাপ্রভু স্বপ্নে তাঁকে গদাধারী দেখেছিলেন। এছাড়া নিত্যানন্দ প্রভুর ত্রিপুরাসুন্দরী যন্ত্র ও নীলকন্ঠ শিব ওনাদের বংশের কুলদেবতা । নিত্যানন্দ প্রভুর অষ্টম পুর্বপুরুষ বৃষকেতু পন্ডিতের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এটি। তিনি শ্রীকুলের সাধক ছিলেন। নিত্যানন্দ প্রভুর ব্যক্তিগত সেবিত হলো অনন্তশালগ্রামজীউ , যা তিনি গন্ডকী হতে প্রাপ্ত হন] তাই তাঁকে এক তান্ত্রিকের কাতারে ফেলতে যাওয়া এক প্রকার বোকামি বৈ কিছুই নয়। নিত্যানন্দ স্বয়ং বলরাম। তিনি গুরুতত্ত্ব। শ্রীমন্মহাপ্রভুর লীলাপুষ্টিতেই তাঁর বিশেষ অবতরণ। তাঁর "অবধূত" উপাধিটি কোন তান্ত্রিকদের উপাধি নয়। "অবধূত" অর্থে যিনি এই জড় সংসারবন্ধনের ঊর্ধ্বে, যিনি নিত্য আত্মানন্দে নিমগ্ন। চতুঃআশ্রমের অধিভুক্ত নন যিনি অর্থাৎ কোনরূপ আশ্রমাদির অভিমানে আবদ্ধ না থাকায় তাঁকে শাস্ত্রে নিত্যানন্দ স্বরূপ বলা হয়েছে। তিনিই অবধূত। ভাগবতে অবধূত ব্রাহ্মণের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়া অবধূত শব্দের অর্থ যিনি বিধিনিষেধের অতীত। সাধারণ বিচারে অকরণীয় কার্য্যও অবধূত করে থাকেন। "অব" অর্থে নীচ ও "ধূত" অর্থে যিনি পবিত্র করেন। নীচ বা অপবিত্র কে যিনি পবিত্র করেন, তাঁদের আচরণে সময় বিশেষ কদাচার দেখা গেলেও, তাঁরা নিত্যই শুদ্ধ বা পবিত্রই থাকেন। ( শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার "অপিচেৎ সুদুরাচারো" শ্লোক দ্রষ্টব্য ) অর্থাৎ এই অবতারে নিতাইচাঁদের উক্ত বৈশিষ্ট্যই দেখা যায়, তিনি আচণ্ডালে এমনকি জগাইমাধাই এর মতো পাপিষ্ঠ কেও প্রেমধন দান করে কৃতার্থ করেছেন। সেজন্যই শাস্ত্রে তাঁকে "অবধূত" বলা হয়েছে। সর্বশেষ মহাপ্রভু-কে শৈব প্রমাণ করার জন্য তিনি কিছু উদ্ধৃতি দিয়েছেন, শিবের গৌরব বুঝায়েন গৌরচন্দ্র। এতেক শঙ্কর প্রিয় সর্বভক্তবৃন্দ।। না মানে চৈতন‍্য পথ বোলায় বৈষ্ণব। শিবের অমান্য করে ব‍্যর্থ তার সব।। " আবার শ্রী শ্রী হরিভক্তি বিলাসে বলা হয়েছে -- মদ্ভক্ত শঙ্কর দ্বেষী-মদ্বেষী- শঙ্করপ্রিয়ঃ। উভৌ তৌ নরকঃ যাতো যাবচ্চন্দ্র দিবাকরৌ।। ➤ কিন্তু এগুলো দিয়ে কী মহাপ্রভু শৈব এমন কিছু আদৌ বোঝায়?😏 পুরাণাদিতে এমন বহুস্থানে দেখা যায় যে শ্রীকৃষ্ণ শিবকে নিজের সখা বলছেন, এবং তার প্রশংসা করছেন। তাই বলে তিনি শৈব মতাবলম্বী হয়ে গেলেন? কখনোই না। আর শ্রীকৃষ্ণই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (প্রমাণ আগেই দেয়া হয়েছ) কাজেই উপরের উদ্ধৃতিগুলো যেখানে শিবের গুণগান দেখা যাচ্ছে সেগুলো দিয়ে কখনোই এমনটা প্রমাণিত হয়না যে মহাপ্রভু শৈব মতাবলম্বী ছিলেন। সর্বশেষ তিনি লিখেছেন, “ওঁ ঈশানঃ সর্ব্ব বিদ‍্যানামীশ্বরঃ। সর্ব্বভূতানাং ব্রহ্মাধিপতি ব্রহ্মা শিবোমেহস্তু সদাশিব ওঁ।। " -- হরিভক্তি বিলাস 17/46 ➤ এখানে মূলত মালা সংস্কার বিষয়ে বলা হয়েছে। আর হরিভক্তিবিলাস পূর্বাপর অধ্যয়ন করলে দেখা যায় এখানে রুদ্রাক্ষের সংস্কার বিষয়ে কথিত হইয়াছে। লেখিকার অন্তত এটুকু জানা দরকার ছিল যে বৈষ্ণবগণ সাধারণত জপ রুদ্রাক্ষ নয় তুলসী, বেল, নিম্ব ইত্যাদি কাষ্ঠ কিংবা পদ্মবীজ মালায় জপ করে থাকেন। কাজেই তার এসকল কুযুক্তির কোনটাই ধোপে টেকার মতো নয়। ✒️ দেবাশীষ বিশ্বাস ✒️ Ⓒ︎𝐕𝐀𝐒𝐔𝐃𝐄𝐕𝐀𝐒𝐓𝐑𝐀

Comments


Be Inspired
International Mula Gaudiya Sampraday Trust 

Write Us

For Any Assistance Or  Query Please Email Or Call To Us

Imgaudiyas@gmail.com

+918439217878

Vrindavan,Uttar Pradesh, India

  • Facebook
  • Facebook
  • YouTube Social  Icon
  • Whatsapp social icon
  • YouTube Social  Icon
  • Twitter Social Icon
  • instagram social icon
  • Facebook Social Icon

Success! Message received.

bottom of page