*#ময়নাডালে_মহাপ্রভু !* (#সম্পাদনায়_সনংমিত্রঠাকুর)"(#পর্ব_০৪)" ক্রমশঃ চলিবে ।
- sanatmitrathakur
- Nov 23, 2020
- 3 min read
Updated: Nov 24, 2020
*#ময়নাডালে_মহাপ্রভু !*
(#সম্পাদনায়_সনংমিত্রঠাকুর)
"(#পর্ব_০৪)"
*#জন্মের_সময়_থেকেই নৃসিংহবল্লভের উপরে মহাপ্রভুর প্রভাব ছিল বলেই নৃসিংহবল্লভ মিত্র ঠাকুর সহজাত পারদর্শিতায় সঙ্গীতে বিশেষ করে মহাপ্রভুর নাম কীর্তনে নিজেকে উজাড় করে সুখ পেতেন।*
যেমন—
*#ব্রজনন্দকি_নন্দন_নীলমণি। হরিচন্দন-তিলক ভালে বনি ॥*
*শিখি-পুচ্ছক বন্ধনী বামে টলি ৷
ফুল-দাম নেহারিতে কাম ঢলি ॥
অতি কুঞ্চিত কুন্তল লম্বি চলি ৷
মুখ-নীল-সরোরুহ বেড়ি অলি ॥
ভুজ-দণ্ডে বিখণ্ডিত হেম-মণি ৷
নব-বারিদ-বিদ্যুত স্থির জনি ॥
অতি চঞ্চল লম্বিত পীত ধটি ৷
কল-কিঙ্কিনী-সংযুত ক্ষীণ কটী॥
পদ নূপুর বাজত পঞ্চরসে ৷
কিবা বেণু বেয়াপিত দিগদশে ॥
যোগী যোগ ভুলে মুনি-ধ্যান টলে৷
ধায় কামিনী কানন তেজি কুলে॥
গজ-সর্প-সঞে গিরিরাজ চলে ৷
সুখ রূপ ভুবিরুহ পুষ্প ফলে ॥
সুরাসুর লজ্জিত শান্তমনে ৷
পদ-সেবক দেব নৃসিংহ ভণে ॥*
#এটি_নৃসিংহবল্লভ বিরচিত একটি পদ ৷ এই কীর্তনই ছিল তাঁর কাছে সেবারই এক বিশিষ্ট অঙ্গ৷
(( #শ্রদ্ধেয়_ডঃ_বাদল_সাহা
"সংকীর্তন" পত্রিকায় "বাংলার কীর্তনগানে মহাপ্রভুর অবদান ও ময়নাডালের মিত্রঠাকুর বংশের আত্মনিবেদনের পারম্পর্য" প্রবন্ধে লিখেছেন তারই লেখার মধ্যখানের কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হল—
#কীর্তনগান_একটি সাহিত্যশিল্প ও লোকসাহিত্যের এক শক্তিশালী সদস্য ৷ সঙ্গীতরত্নাকরে বলা হয়েছে—"#গীতবাদ্যং তথা নৃত্যং ত্রয়ং সঙ্গীতমুচ্যতে"৷ গীত-বাদ্য এবং নৃত্য এই তিনের সন্মিলিত রূপই 'সঙ্গীত'৷
#গায়কের মধুর কণ্ঠশ্বর,তাল-লয়,বাদ্যের ঝংকার এবং পদগুলির সুমধুর উচ্চারণ ভঙ্গিমায় গান মরমে প্রবেশ করে শ্রোতা ও দর্শক মনে এক অপার্থিব আনন্দ দান করে ৷ এখানে আছে রূপ ও ভাব,ছবি ও সুর,প্রেমরস ও কাব্য এবং তাল ও আঁখরের বৈচিত্র্য ৷ মানব মনে আনন্দ দানের উদ্দেশ্য, সহিতত্ত্ব এর আদর্শ ৷ রাধাগোবিন্দের লীলাকাহিনী,মানবীয় সুখ-দুঃখ, মান-অভিমান,বিচ্ছেদ-বেদনা, মিলন-বিরহ আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে ৷ লীলাকথা শুনতে শুনতে শ্রোতা-দর্শক পৌঁছে যায় কাব্য-সাহিত্য-দর্শনের সিংহদুয়ারে ৷ কৃষ্ণকথার অমৃত স্রোতধারায় গণশিক্ষার সড়ক ধরেই এগিয়ে চলে গণচেতনা ৷ সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসার অম্লজানে পরিশুদ্ধ হয়ে সুস্থ সমাজ গঠণে সাহায্য করে ; মানুষ পায় প্রকৃত মানবতার সন্ধান ৷
#এই_কীর্তনগানের
মতো এমন অমূল্য ধন শ্রীচৈতন্যের হাত ধরেই গৌড়ভূমি হতে সারা ভারতে ব্যাপ্ত হয় ৷ আজও পুরীধামে খোল-করতাল সহযোগে যে কীর্তন শোনা যায় তার সূত্রপাত হয় শ্রীচৈতন্যের হাত ধরেই ৷ উত্তর থেকে দক্ষিণ ভারত সর্বত্রই ঐ গান জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ৷
*বীরভূমের বীরচন্দ্রপুরবাসী #শ্রীনিত্যানন্দ_মহাপ্রভু ছিলেন কীর্তন প্রচারের প্রধান সহচর ৷ মহাপ্রভু জানতেন তাঁর এই লীলা সহচরটিই বৈষ্ণব প্রেমধর্ম প্রচারের উপযুক্ত এবং যোগ্য ব্যক্তি ৷*
#তাই_তিনি আদেশ দিলেন— *এতেকে আমার বাক্য যদি সত্য চাও। তবে অবিলম্বে তুমি গৌড়দেশে যাও।।*
*#মূর্খ নীচ পতিত দুঃখিত যত জন। ভক্তি দিয়া কর গিয়া সবার মোচন ৷*
*#নিত্যানন্দপ্রভুর হাত ধরেই সারা বাংলায় বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারিত হতে শুরু করল ৷*
*#নিতাই_গুণমণি_আমার নিতাই গুণমণি। আনিয়া প্রেমের বন্যা ভাসাল অবনী ৷।*
#কাল বড় নির্মম,তার বিধানে জন্ম-মৃত্যু,উত্থান ও পতন ৷ সেই বিধানেই একদিন নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর মহাপ্রয়াণ ঘটল ৷ এগিয়ে এলেন নিত্যানন্দ-পত্নী জাহ্নবাদেবী ৷ মহান্ত পদে তিনি প্রতিষ্ঠিতা হলেন,তাই স্বাভাবিক কারণেই প্রয়োজন হয়ে পড়ল নব সংগঠনের ৷ এই সময় পরমবৈষ্ণব নরোত্তম ঠাকুর বৃন্দাবন থেকে ফিরে এলেন নিজ গ্রাম "খেতুরীতে" ৷ জাহ্নবাদেবীর নেতৃত্বে, রাজা সন্তোষের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং তৎকালীন সারা বাংলার খ্যাতনামা সব বৈষ্ণব পণ্ডিত,সাধক,গায়ক, বাদকদের উপস্থিতিতে একটি ধর্মসন্মেলন অনুষ্ঠিত হল খেতুরিতে ৷ এই সন্মেলনেই প্রথম বিধিবদ্ধ প্রণালীতে লীলাকীর্তনের প্রারম্ভে গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ গাওয়ার রীতি চালু হল,যাকে বলা হয় গৌরচন্দ্রিকা ৷ পরবর্তীকালে গৌরকীর্তনের একটি স্বাতন্ত্র্য পর্যায়ের সূচনা হল ৷ মূলত এগুলি চৈতন্য প্রভাবেরই প্রত্যক্ষ ফল ৷
*#খেতুরীর_বৈষ্ণব সন্মেলনটি বৈষ্ণবধর্ম বিশেষভাবে কীর্তনগানের উপর দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করল ৷*
#নরোত্তম ঠাকুর ছাড়াও এই সন্মেলনে যাঁরা অংশ গ্রহণ করেছিলেন তাঁদের অন্যতম ছিলেন, কান্দরার মঙ্গল ঠাকুরের শিষ্য #নৃসিংহবল্লভ_মিত্র_ঠাকুর,
মঙ্গল ঠাকুরের পৌত্র বদন ঠাকুর, জ্ঞানদাস মনোহর ; শ্রীখণ্ডের রঘুনন্দন প্রভৃতি বৈষ্ণব ভক্তবৃন্দ৷
#মহোৎসব থেকে ফিরে এইসব ব্যক্তিবর্গ নিজ নিজ অঞ্চলের ভাষা, সুর-তাল-লয় সহযোগে কীর্তনগানের আঙ্গিক গঠনের পরিবর্তন ঘটালেন,সৃষ্টি হল নানা ঘরানার ৷ তৎকালে খেতুরী গ্রামটি ছিল গড়েরহাট পরগণার অন্তর্গত,তাই নরোত্তম দাস প্রবর্তিত ঘরানাটির নাম হল *#গড়ানহাটী*৷
#আবার গড়ানহাটী ঘরানার সঙ্গে রাঢ়ের পশ্চিম প্রান্তের সঙ্গীতধারার মেলবন্ধনে সৃষ্টি হল আর একটি নতুন ঘরানার,যার প্রবর্তক *#ময়নাডাল_গ্রামের_মিত্রঠাকুর_বংশের_বিদগ্ধ_বৈষ্ণব_পণ্ডিত_ও_সঙ্গীতসাধক_নৃসিংহবল্লভ_মিত্র_ঠাকুর ৷*
তাঁর গুরুবাড়ি ছিল কান্দরা গ্রামে ৷
#তৎকালে এই গ্রামটি ছিল "মনোহরসাহী" পরগণার অন্তর্গত ৷ নৃসিংহবল্লভ মিত্র ঠাকুর প্রবর্তিত এই ঘরানার তাই নামকরণ করা হল *#মনোহরসাহী ৷*
(এ লেখাটি সংকীর্তন পত্রিকা হতে উদ্ধৃত )৷
*#জয়মহাপ্রভু"৷*





Comments