"#ময়নাডালে_মহাপ্রভু !" "(#পর্ব_০৩)" ক্রমশঃ চলিবে ৷
- sanatmitrathakur
- Nov 23, 2020
- 3 min read
Updated: Nov 24, 2020
"#ময়নাডালে_মহাপ্রভু !"
"(#পর্ব_০৩)"
#নৃসিংহবল্লভ_যে_মঙ্গল ঠাকুরের দীক্ষা নিয়েছিলেন সেই মঙ্গল বৈষ্ণব থেকে কি করে মঙ্গল ঠাকুর হলেন সেই বিষয়ে অালোকপাত করা যাক—
#মঙ্গল_ঠাকুর_মাত্র তিনজন বৈষ্ণবকে দীক্ষা দেন ৷ ময়নাডাল নিবাসী প্রাণনাথ অধিকারী ও নৃসিংহবল্লভ মিত্র ঠাকুর এবং বর্দ্ধমান জেলার কাঁকড়া গ্রাম নিবাসী শ্রী পুরুষোত্তম চক্রবর্তী ৷
"#অমোঘ_পণ্ডিত_হস্তিগোপাল_চৈতন্যবল্লভ ৷ #শ্রীযদু_গাঙ্গুলি_অার_মঙ্গল___বৈষ্ণব ॥" (ঠচৈ:চ:-১/১২/৮৬)"
#পণ্ডিত_গদাধর
গোস্বামীর অন্যতম ও শেষ শিষ্য এই মঙ্গল বৈষ্ণব ৷ মঙ্গল বৈষ্ণবের অাদি নিবাস মুর্শিদাবাদ জেলার কীরিটকোনা গ্রাম ৷ এই কীরিটকোনা গ্রাম '৫১'টি মহাপীঠের একটি ৷ সতী মস্তক হতে পতিত কীরিট অর্থাৎ চূড়া এই গ্রামকে ধন্য করেছিল ৷ অাজও এই গ্রামে দেবী কীরিটিশ্বরীর মন্দির বর্তমান ৷ এই গ্রামে এক চ্যাটার্জ্জী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মঙ্গল চ্যাটার্জ্জী ৷ বাড়িতে গৌরগোপালের ও শালগ্রাম শিলার নিত্য সেবা ৷ যথারীতি বার বছর বয়সে বালক মঙ্গলের উপনয়ন হয় ৷ উপনয়নের পরই তাঁর মনে
বৈরাগ্যের উদয় হয় ৷ বালক মঙ্গল বিষয়-অাশয় ত্যাগ করে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়লেন ৷ সঙ্গে নিলেন অারাধ্য গৌরগোপাল মূর্তি ও শালগ্রাম শিলা ৷ গঙ্গার তীর ধরে গৌরগোপালকে বক্ষে ধরে অাগলে হাঁটতে হাঁটতে বালক মঙ্গল উপস্থিত হলেন ভরতপুর গ্রামে এই ভরতপুর গ্রাম গৌর পার্ষদ পণ্ডিত গদাধর ঠাকুরের শ্রীপাট ৷ এখানেই গদাধর পণ্ডিতের সঙ্গে মিলিত হন বালক মঙ্গল ৷ বালকের অভূতপূর্ব ভক্তি-প্রেমে মুগ্ধ হয়ে হন গদাধর পণ্ডিত, এবং তাঁকে মন্ত্রে দীক্ষিত করেন ৷ মঙ্গল বৈষ্ণব হলেন গদাধর পণ্ডিতের সহচারী ৷ এর পর-পরই গদাধর পণ্ডিত চলে গেলেন শ্রীধাম নবদ্বীপে , অপরদিকে যুগলমন্ত্রে দীক্ষিত মঙ্গল বৈষ্ণবের হৃদয় প্রেমে ভক্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল ৷
#তিনি_ভরতপুর
হতে অাবার হাঁটতে শুরু করলেন দক্ষিণ মুখে এবং উপস্থিত হলেন বর্দ্ধমান জেলার কান্দরা গ্রামের দক্ষিণে কিছু দূরে রাঢ়ীপুর গ্রামে ৷ তখন এই রাঢ়ীপুর গ্রাম ছিল সম্পূর্ণ জঙ্গলে ঢাকা নিরালা যা বৈষ্ণবদের সাধন ভজনের উপযুক্ত ৷ রাঢ়ীপুরে জঙ্গলে একটি ছোট্র পর্ণ-কুটীর তৈরী করে সেখানেই অারাধ্য গৌরগোপাল ও শালগ্রাম শিলা প্রতিষ্ঠা করে সাধন ভজনে মঙ্গল বৈষ্ণব নিজেকে সম্পূর্ণ নিয়োজিত করলেন ৷ ভিক্ষান্ন দ্বারা নিজের ও গৌরগোপালের সেবা সম্পন্ন করতে থাকেন ৷ এভাবেই দিন অতিবাহিত হয় ও বছরের পর বছর কেটে যায় ৷
#সর্ব্বনিয়ন্তা_গৌরহরির
কি ইচ্ছা মঙ্গল বৈষ্ণবের জীবনে এলো এক নতুন দিক ৷
#তৎকালীন বাংলার নবাব ছিলেন হুসেনসাহ৷
তিনি বিধর্মী হলেও হিন্দুধর্ম বিদ্বেষী ছিলেন না ৷ একদিন নবাব গৌরঅভিমুখে ফিরবার পথে কান্দরায় নবাবের পিপাসা পায় কিন্তু জলের সন্ধান না পেয়ে তিনি তৃষ্ণার্ত হৃদয়ে রাজধানী অভিমুখে রওনা দেন , কিন্তু কান্দরায় পুকুর খননের অাদেশ দিয়ে যান, এবং পুকুর খননের সময় সেখান থেকে উঠে এল রাধাবল্লভ মূর্তি, অার খবরও গেল নবাবের কাছে এবং নবাবের অাদেশে রাধাবল্লভের সেবাপূজোর ভার নেওয়ার জন্য কেউ রাজি থাকলে সেই ইচ্ছুক ব্যক্তিকে যথাসম্ভব জমি দান করা হবে এই বলে ঘোষণা করা হয় কিন্তু কেউ ইচ্ছা প্রকাশ না করায় নবাব অধিক চিন্তিত হন, কিন্তু ভক্ত বাঞ্ছা কল্পতরু গৌরহরি সর্ব্ব সঙ্কটের পরিত্রাতা স্বপ্নে নবাবকে মঙ্গল বৈষ্ণবের কথা অবহিত করলেন ৷
#পরদিন_প্রভাতেই নবাব দূত পাঠালেন মঙ্গল বৈষ্ণবের কাছে , এবং মঙ্গল বৈষ্ণবের কুটিরে স্থান পেল রাধাবল্লভ ৷ নবাবও প্রতিশ্রুতি মত জমি প্রদান করেন ৷ গৌরপ্রেমে পাগল মঙ্গল বৈষ্ণব নাম-কীর্তন সেবা পূজা ইত্যাদি নিয়ে দিনযাপন করতে থাকেন ৷
#সাময়িকভাবে সেবা পূজার ভার দিয়ে তিনি বৃন্দাবন গেলেন এবং বৃন্দাবন থেকে ফিরে এলেন ৷ সঙ্গে অানলেন বৃন্দাবন চন্দ্রের বিগ্রহ ৷
#তিনি_বৃন্দাবন_থেকে ফিরে এসে গৌরগোপাল, বৃন্দাবনচন্দ্র, ও রাধাবল্লভকে প্রতিষ্ঠা করলেন কান্দরা গ্রামে ৷ এই কান্দরা গ্রাম রাঢ়ীপুরের কাছেই অবস্থিত ৷
#নরহরি_চক্রবর্তী ভক্তি রত্নাকর গ্রন্থে লিখেছেন—
"#রাঢ়দেশ_কান্দরা_নামেত_হয় ৷
#তথায়_বসতি_মঙ্গলের_অালয়॥"
#সন্ন্যাস_গ্রহণের তিনদিন পর শ্রীচৈতন্যদেব বক্রেশ্বর দর্শন ও রাঢ়দেশ পরিভ্রমণের উদ্দেশ্যে কাটোয়া হতে যাত্রা শুরু করেন—
"#প্রভু_বলেন_বক্রেশ্বর_অাছেন যে বনে ৷ তথাই যাইমু মুঞি থাকিমু নির্জ্জনে॥#দিন_অবশেষে প্রভু এক ধন্য গ্রামে ৷ রহিলেন পুণ্যবন্ত-ব্রাহ্মণ-অাশ্রমে ॥" (চৈ:ভা:-১/৩)
#যাত্রাপথে_প্রভু ধন্য গ্রাম অর্থাৎ কান্দরা গ্রামে ও পুণ্যবন্ত ব্রাহ্মণ অর্থাৎ মঙ্গল অালয়ে এক রাত্রি বিশ্রাম করেন৷
শ্রীচৈতন্যদেব মঙ্গল বৈষ্ণবের ভক্তি প্রেমে মুগ্ধ হয়ে #ঠাকুর" উপাধি দান করলেন ৷ সেই হতে মঙ্গল বৈষ্ণব হলেন মঙ্গল ঠাকুর৷ শ্রীচৈতন্যদেব মঙ্গল অালয়ে যে স্থলে বিশ্রাম করেছিলেন অাজও কান্দরা গ্রামে সেই স্থলটি গৌরাঙ্গডাঙ্গা নামে বিদ্যমান ৷
#শ্রীচৈতন্যোত্তর যুগে এই কান্দরা গ্রাম বৈষ্ণব সাধন ভজনের পীঠস্থানে পরিণত হয়েছিল ৷ কারণ এই গ্রামেই শ্রীচৈতন্যোত্তর বৈষ্ণব কবি জ্ঞানদাস, শশীশেখর, গোকুলানন্দ, চন্দ্রশেখর, প্রভৃতি পদকর্তাগণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৷ অাজ এই বৈষ্ণব পদরেনু ধন্য গ্রামটি জ্ঞানদাসের নাম অনুসারে "#জ্ঞানদাস_কান্দরা" নামে পরিচিত ৷
(সূত্র "সংকীর্তন" পত্রিকা)
#জয়_শ্রীগৌহরি"





Comments