UA-199656512-1
top of page

"#কীর্তনে_গৌরচন্দ্রিকা;— "(#পর্ব_অাট_পোষ্ট_২৫)"


"#কীর্তনে_গৌরচন্দ্রিকা;—


"(#পর্ব_অাট_পোষ্ট_২৫)"


#দুটি_লীলার_কথা_বলা_হয়

বৈষ্ণব পদাবলীতে-নবদ্বীপ লীলা ও বৃন্দাবন লীলা ৷ নবদ্বীপ লীলা হল গৌরাঙ্গ অর্থাৎ চৈতন্যদেব বিষয়ক, অার রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক হল বৃন্দাবন লীলা ৷ বৈষ্ণব পদাবলীর মূল হল বৃন্দাবন লীলা, এই বৃন্দাবন লীলা বুঝবার জন্য নবদ্বীপ লীলালার প্রয়োজন অাছে বলে মনে করেন ভক্ত বৈষ্ণবরা ৷ যেমন;-

"যদি গৌরাঙ্গ না হইত কী মেনে হইত কেমনে ধরিতাম দে ৷ রাধার মহিমা প্রেমরস সীমা জগতে জানাত কে॥"(বাসুদেব ঘোষ)

চৈতন্যদেবের অাবির্ভাবের পর থেকেই অনেক বৈষ্ণব কবি চৈতন্যদেবকে নিয়ে অজস্র পদ লিখেছেন ৷ গোবিন্দ দাস চৈতন্য পরবর্তী যুগের কবি, তিনি অনেক গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ রচনা করেছেন তার মধ্য থেকে অনেক পদই গৌরচন্দ্রিকা হিসাবে গাওয়া হয়ে থাকে ৷ যথা;-

"চম্পক শোন, কুসুম কণকাচল

জিতল গৌর-তনু-লাবনে রে ৷

উন্নত গীম সীম নাহি অনুভব

জগ-মোহন ভাল নিয়ে ॥"

এই পদটিতে চৈতন্যদেবের দেহ লাবন্যের বর্ননা অাছে ৷ তাঁর অার একটি পদ;-

"নীরদ নয়নে নীর ঘন সিঞ্চনে

পুলক মুকল অবলম্ব ৷

স্বেদ-মকরন্দ বিন্দু বিন্দু চূয়ত

বিকশিত ভাব কদম্ব ॥"

এই পদটিতে তিনি গৌরাঙ্গদেবের চোখ দুটিকে মেঘের সাথে তুলনা করেছেন এবং মেঘ থেকে যেমন বৃষ্টি ধারা বর্ষিত হয় গৌরাঙ্গদেবের চোখ দুটি থেকে যেন অনুরূপ অশ্রুপাত হচ্ছে ৷ বৃষ্টিপাতের ফলে বৃক্ষে বৃক্ষে যেমন মুকুল দেখা যায় গৌরাঙ্গদেবের দেহরূপ বৃক্ষ থেকেও ঠিক তেমনি ভাবরূপ মুকুল দেখা দিয়েছে ৷ অার তিনি অবিরত ভাবে মানুষের মধ্যে প্রেম বিতড়ন করলেও কবিবর যেহেতু তাঁর দর্শন পাননি,তাই তিনি নিজেকে বঞ্চিত ভেবেছেন;-

"অবিরত প্রেম-রতনফল বিতরনে

অখিল মনোরথ পুর ৷

তা কর চরণে দীনহীন বঞ্চিত

গোবিন্দ দাস বহু দূর ॥"

এইভাবে গোবিন্দ দাস তাঁর গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদের মাধ্যমে গৌরাঙ্গদেবের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেছেন ৷ চৈতন্য পরবর্তী অার এক কবি জ্ঞানদাসও গৌরাঙ্গসুন্দরকে নিয়ে অনেকগুলি গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ লিখেছেন, বৈষ্ণব কবি জ্ঞানদাসের গৌরাঙ্গদেব কৃষ্ণচিন্তায় এতটাই মগ্ন ছিল যে,

"চলিতে না পারে ক্ষণে পরে মূরছিয়া ৷" অার এক বৈষ্ণব কবি পরমানন্দও চৈতন্যদেবের শ্রেষ্ঠত্ব উল্লেখ করে লিখেছেন;-

"গৌরাঙ্গের গুণে নাচিয়া গাইয়ারে

রতন হইল কতজনা ৷"

এরকমভাবে গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদগুলিতে গৌরাঙ্গদেবকে কখনও অকলঙ্ক পূর্ণচাঁদ,কখনও

কল্পতরু প্রভৃতির সাথে তুলনা করা হয়েছে ৷ অাবার কোন কোন বৈষ্ণব কবি গৌরাঙ্গের সন্ন্যাস গ্রহণে, নবদ্বীপ ত্যাগে শচীমাতা, বিষ্ণুপ্রিয়াসহ নবদ্বীপবাসীর দুর্দশার ছবি এঁকেছেন ৷ ফলে গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদের সমৃদ্ধি হয়েছে ৷

বৈষ্ণব পদাবলীর মধ্যযুগের বাঙলা সাহিত্যের এক বিশেষ ধারা হল;- রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা মাহাত্ম্য বর্ণনা ৷ এই পদাবলী বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের কাছে সাধন সঙ্গীত হিসাবে গণ্য ৷ অার গৌরাঙ্গ(চৈতন্যদেব) বৈষ্ণব ধর্মের ক্ষেত্রে একজন গুরুত্বপূর্ণ পূজ্য ব্যাক্তি ৷ বৈষ্ণব ভক্তরা তাঁকে রাধাকৃষ্ণের যুগল বিগ্রহ বলে মনে করতেন, তাঁরা মনে করতেন গৌরাঙ্গ(চৈতন্যদেব) ছিলেন "বহিরঙ্গে রাধা অার অন্তরঙ্গে কৃষ্ণ"৷ তাই বলা হয়েছে;-

"রাধাকৃষ্ণ একাত্মা দুই দেহ ধরি ৷

অনন্য বিলয়ে রস অাস্বাদন করি॥ সেই দুই এক এবে চৈতন্য গোঁসাই ৷ রস অাস্বাদিতে দোঁহে হৈল্য একঠাঁই॥"

চৈতন্যদেব ভক্তবৈষ্ণবদের কাছে অবতার রূপে পূজিত ৷ তাই বৈষ্ণব কবিরা রাধাকৃষ্ণের পাশাপাশি চৈতন্যদেবকে নিয়েও অনেক অনেক পদ রচনা করেছেন ৷ এই পদগুলিকে গৌরবিষয়ক পদ বলা হয় ৷ অার

'গৌরচন্দ্রিকা' শব্দের অর্থ 'উপক্রমণিকা', 'ভূমিকা' অথবা 'অারম্ভ'৷ কিন্তু শব্দটির অন্যভাবে তাৎপর্য গ্রহণ করা হয় বৈষ্ণব পদাবলীর ক্ষেত্রে ৷ 'চন্দ্রিকা' শব্দের অর্থ 'জ্যোৎস্না কিরণ' ধরলে এর একটি অর্থ পাওয়া যায় ৷ যেমন চন্দ্রের কিরণ অন্ধকার পৃথিবী অালোকিত করে, তেমনি চৈতন্যমহাপ্রভুর বন্দনাগীতিও রাধাকৃষ্ণের লীলাপ্রসঙ্গে অালোক পাত করে ৷

এছাড়াও এই সঙ্গীতে শ্রোতা ও গায়কের মালিণ্যও দূর হয় ৷ তাই গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ গাওয়া হয় বৈষ্ণব পদাবলীর মূল পালাকীর্তনের পূর্বে ভূমিকা হিসাবে, যার মাধ্যমে মূল পালাকীর্তনের বিষয় সম্পর্কে অাভাস পাওয়া যায় তাকেই গৌরচন্দ্রিকা বলে ৷ বৈষ্ণব পদাবলী মূলত লেখা হয়েছিল কীর্তনগানের মাধ্যমে রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলাকে জনমানসে ছড়িয়ে দিয়ে বৈষ্ণবধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ৷ বৈষ্ণব কবিরা রাধাকৃষ্ণের প্রেমের ক্রমবিকাশের ধারাকে পূর্বরাগ,অনুরাগ, অভিসার,মান, কলহন্তরিতা,মাথুর, ভাবসন্মেলন প্রভৃতি ভাগে ভাগ করেছেন ৷ কীর্তনগানের অাসরে এই সমস্ত পর্যায়ের কোন একটিকে গ্রহণ করে পালা হিসাবে গাওয়া হয় ৷ তবে মূল পালাকীর্তনের পূর্বে অনুরূপ ভাবমূলক গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ ভূমিকা হিসাবে গাওয়া হয় ৷ ভূমিকার এই পদটি শুনেই শ্রোতারা বুঝতে পারেন যে, মূল পালাকীর্তনের বিষয়বস্তু কি হবে ৷ এরূপ মূল পালাকীর্তনের সাথে ভাব সাদৃশ্যমূলক যে গৌরাঙ্গবিষয়ক পদগুলি মূল পালাকীর্তনের পূর্বে ভূমিকা হিসাবে গাওয়া হয় সেগুলিকেই গৌরচন্দ্রিকা বলা হয় ৷ যেমন;-

"অাজু হাম কা পেখলুঁ নবদ্বীপচন্দ ৷ করতলে করই বয়ন অবলম্ব॥" যদি মূল পালা

কীর্তনের পূর্বে এই পদটি গাওয়া হয় তাহলে দর্শকরা সহজেই বুঝে যায় সেদিন মূল পালাকীর্তনের পদ হিসাবে 'পূর্বরাগের' পদ গাওয়া হবে ৷ কারণ এই পদটিতে গৌরাঙ্গের 'কৃষ্ণচিন্তা' বিভোর রূপের প্রকাশ ঘটেছে-"করতলে করই বয়ন অবলম্ব"৷ অার এরূপ চিন্তার জন্য তার মধ্যে অস্থিরতা জেগে উঠেছে ৷ রাধার পূর্বরাগের ফলেও রাধার মধ্যে এরূপ ভাব বৈচিত্র দেখা দিয়েছিল ৷ অনুরূপভাবে মূল পালাকীর্তনের পূর্বে গৌরাঙ্গদেবকে নিয়ে লেখা;-

"হেদেরে নদীয়াবাসী কার মুখ চাও ৷ বাহু পসারিয়া গোরা চাঁদেরে ফেরাও॥" এই পদটি গাওয়া হলে দর্শকেরা সহজে বুঝে যান সেদিনের পালা কীর্তনের বিষয় হল 'মাথুর' ৷ কারণ শ্রীকৃষ্ণ কংস বধের উদ্দেশ্যে বৃন্দাবন ত্যাগ করে মথুরায় চলে গেলে বৃন্দাবনবাসীরও একই অবস্থা হয়েছিল ৷ সুতরাং;- বোঝা যাচ্ছে উপরের পদগুলি গৌরচন্দ্রিকার পদ ৷

বৈষ্ণব পদাবলীর গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদগুলি গৌরাঙ্গ অর্থাৎ চৈতন্যদেবকে নিয়ে লেখা হলেও সমস্ত 'গৌরাঙ্গবিষয়ক' পদই 'গৌরচন্দ্রিকা' নয় ৷ অার গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদগুলির মধ্যে যে পদগুলি মূল পালাকীর্তনের অাগে ভূমিকা হিসাবে গাওয়া হয় সেগুলিই হল 'গৌরচন্দ্রিকা' বিষয়ক পদ ৷ অর্থাৎ 'গৌরাঙ্গ বিষয়ক' পদ হল চৈতন্যদেবকে নিয়ে লেখা যে কোন পদ ৷ অার

'গৌরচন্দ্রিকা' হল চৈতন্যদেবকে নিয়ে লেখা অথচ মূল পালাকীর্তনের পূর্বে ভূমিকা স্বরূপ গাওয়া পদগুলি ৷

'জয় মহাপ্রভু'

 
 
 

Comentários


Be Inspired
International Mula Gaudiya Sampraday Trust 

Write Us

For Any Assistance Or  Query Please Email Or Call To Us

Imgaudiyas@gmail.com

+918439217878

Vrindavan,Uttar Pradesh, India

  • Facebook
  • Facebook
  • YouTube Social  Icon
  • Whatsapp social icon
  • YouTube Social  Icon
  • Twitter Social Icon
  • instagram social icon
  • Facebook Social Icon

Success! Message received.

bottom of page