UA-199656512-1
top of page

"#বঙ্গে_নবজাগরণের_নায়ক_চৈতন্যদেব ( #পর্ব ০১) ক্রমশঃ চলিবে ৷"


********#প্রবন্ধ******** ^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^❤ #বঙ্গে_নবজাগরণের_নায়ক_চৈতন্যদেব *❤️ ~~~ ~~"(#পর্ব_০১)"~~~~~~

"সম্পাদনা;-সনৎমিত্রঠাকুর !"

~~~~~~~


*** "'#ঊনিশ_শতকের পাশ্চাত্যমুখী নব—জাগরণ শুধু শিক্ষিত বাঙালী ও শহরকেন্দ্রিক ছিল ; অার চৈতন্যযুগের চৈতন্যময় অান্দোলন অাপামর বাঙালীজনের মধ্যে পরিব্যাপ্ত সর্বাত্মক বৈপ্লবিক চেতনার প্রথম এবং সার্থক উন্মেষ ৷ ইতিহাস বলছে , বাঙালী চিত্তের বহু বহু শতাব্দী ধ'রে সঞ্চিত ক্লেদকলুষকে হরিচরণাশ্রিত প্রেমের বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল অমিত সুদর্শনতনু ও বিশাল পুরুষাকারসম্পন্ন এই জনগণমন-অধিনায়কের বিপ্লব ৷ বাংলার প্রথম এই রুদ্রসম—তেজস্বী মহাবিদ্রোহীর কণ্ঠেই সার্থক উদ্ গীত হয়ে উঠেছিল যুগ যুগ ব্যাপী লাঞ্ছিত, নিপিড়ীত ও অবহেলিত মানবাত্মার প্রতিবাদের ভাষা—নাম—সংকীর্তন ৷ কায়েমি_স্বার্থ—সর্বস্ব বিরুদ্ধবাদীদের সকল অাপত্তির কোলাহলকে ছাপিয়ে , অত্যাচারী শাসকের সকল নিষেধাজ্ঞাকে স্তম্ভিত ক'রে, অাকাশ—বাতাস মুখরিত হয়ে উঠেছিল বাংলায় প্রথম এই সার্থক সাম্যের গান"'*৷



"'#ইতিহাস_স্বীকার করেছে , তথাকথিত বাঙালী জাতিকে অধঃপাতে তলিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষার জন্য যেমন "কোমলে কোমল ও কঠোরে কঠোর" এক মহামানবের প্রয়োজন ছিল , অভাবিত ভাবেই , তেমনই এক কল্পনাতীত মহামানবিক সত্তা নিয়েই অাবির্ভূত হয়েছিলেন এই প্রথম সমাজ—সংস্কারক ৷

ঐতিহাসিকের মূল্যায়ন—ব্রাহ্মণকুলজাত এই অসীম—বিক্রমী যোদ্ধার কল্যাণেই বাঙালী জাতি সেদিন সর্বাত্মক অবক্ষয়ের অাক্রমণকে প্রতিহত করতে পেরেছিলই শুধু নয় , অরক্তক্ষয়ী সংগ্রামে সামুহিকভাবে বিজয়ীও হয়েছিল৷

ইতিহাসের চুড়ান্ত সমীক্ষা—"শ্রীচৈতন্যের সমাজদর্শন বা পলিটিক্যাল ফিলসফি তাঁর প্রায় সমসাময়িক খ্রিষ্টীয় অান্দোলনের (মার্টিন লুথার) কথা মনে করিয়ে দেয় ৷ মনে_করিয়ে দেয় বামপন্হার অারেক পুরোধা ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের মন্তব্য....মহামতি মার্কস তো সরাসরি শ্রীচৈতন্যের গণ অান্দোলন (তথা শ্রেণীযুদ্ধ)—কে সমর্থন জানিয়ে বলেছিলেন , জাতপাতের বিরুদ্ধে সংগ্রামী উদারনীতির প্রবক্তা শ্রীচৈতন্য একজন সাচ্চা রিফরমার ৷



'#শ্রীচৈতন্যের_বৈষ্ণব অান্দোলনে যেমন অস্পৃশ্যতা ইত্যাদি ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা হয়েছে , তেমনই নারী জাতিকে দেওয়া হয়েছে এক বিশেষ সস্মান ৷ এই অধিকারে হঠাৎ করেই স্ত্রীজাতির সামাজিক মর্যাদা ও শিক্ষার পথ খুলে গিয়েছিল ৷

"'মহাত্মা_গান্ধীর সত্যাগ্রহের শিক্ষা শ্রীচৈতন্যের অহিংস—পন্হায় শত্রুবিজয়ের ফসল ....স্বামী বিবেকানন্দের কণ্ঠে শ্রীচৈতন্যেরই প্রতিধ্বনি—'নীচজাতি , মূর্খ , দরিদ্র , অজ্ঞ , মুচি , মেথর , তোমার রক্ত , তোমার ভাই ইত্যাদি ইত্যাদি"'*৷

শ্রীচৈতন্য_মহাপ্রভু, এমনই এক মহান ব্যক্তিত্ব,তাঁর নামানুসারে বাংলা সাহিত্যে চৈতন্যযুগ নামে এক নবজাগরণের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা, তা-ই সমগ্র বাংলার মানুষকে অাকৃষ্ট করেছে চৈতন্যমহাপ্রভুর জীবন-দর্শন উপলব্ধি করার অভিলাষে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ বাংলা ভাষাকে অায়ত্ব করেছে ৷



#কবি_নজরুল_ইসলাম শ্রীচৈতন্যদেবের গুণ গেয়ে বলেছেন—

"বর্ণচোরা ঠাকুর এ রসের নদীয়ায়, তোরা দেখবি যদি অায় অাবার কেউ বলে তায় গৌরহরি, কেউ অবতার বলে তায় ॥

কবি_সত্যেন্দ্রনাথ_দত্ত তার "অামরা" কবিতায়—

"ঘরের ছেলের চক্ষে দেখেছি বিশ্বভূপের ছায়া ৷ বাঙালির হিয়া অমিয় মথিয়া নিমাই ধরেছে কায়া ॥

বাঙালির অমৃতময় হৃদয় হরণ করে যে কায়া ধারণ করেছে, তা হলো নিমাই, যার হৃদয় কমলের চেয়েও কোমল ৷

বিশ্বকবি_রবীন্দ্রনাথ_ঠাকুর

বলেন—"অামাদের বাঙালির মধ্য থেকেই তো চৈতন্য জন্মেছিলেন, তিনি তো বিঘা-কাঠার মধ্যে বাস করতেন না, তিনি তো সমস্ত মানবকে অাপনার করে নিয়ে ছিলেন, তিনি বিস্তৃত মানবপ্রেমে বঙ্গভূমিকে জ্যোতির্ময়ী করে তুলে ছিলেন ৷"***


***#চৈতন্যসম্ভব_এর_কথায়--চৈতন্যের মধ্যে বিপ্লবী খুঁজে পায় জনঅান্দোলনের জয়ধ্বনি অার রক্ষণশীল খুঁজে পায় অাধ্যাত্মিকতার সর্ব্বোচ্চ শিখর ৷ নাস্তিক এই অান্দোলনে মানব অস্তিত্বের অবলম্বন খুঁজে পায় অার অাস্তিক এই অান্দোলনে পায় ঈশ্বরের বিভূতি৷ একাধিক কমুনিষ্ট নেতা চৈতন্যদেবের মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন গৌড়বঙ্গের প্রথম কমিউনিষ্ট, অার গান্ধি স্বয়ং খুঁজে পেয়েছিলেন মধ্যযুগের প্রথম অহিংস অান্দোলনের নজির ৷ চৈতন্যস্মরণে রত হন যুক্তিবাদী থেকে ভাববাদী, পণ্ডিত থেকে অজ্ঞ ৷ তাঁর নামে গৌরাঙ্গ বলে উদ্বাহু তুলে প্রায় সকলে নৃত্য করেছে ৷ ব্রাহ্মণ অার অার চণ্ডাল এই চৈতন্যদেবের অান্দোলনে পরস্পরের হাত ধরে নৃত্য করেছ ৷ চৈতন্যদেবর নামে এই অান্দোলনে কবির সঙ্গে অকবির অাঁতাত হয়, কেজোর সঙ্গে অকেজোর মিত্রতা হয় ৷ এই অান্দোলন সমস্ত গৌড়বঙ্গীয়ের মহামিলনমেলা ৷ গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম প্রকৃতপক্ষে বাঙালি জাতির অভিজ্ঞান ৷



#যে_নবদ্বীপে চৈতন্যদেব অবতীর্ণ, সে নবদ্বীপ তখন ভারত শ্রেষ্ঠ, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সার স্বত পীঠস্থান ৷ জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শনচর্চায় নবদ্বীপের শ্রেষ্ঠত্ব অনস্বীকার্য ছিল ৷ মধ্যেযুগের অন্ধকারে নবদ্বীপের এই সুতীব্র অালোকচ্ছটাকে বঙ্কিমচন্দ্র বাঙালির প্রথম রেনেসাঁস অাখ্যা দিয়েছিলেন ৷ অামাদিগেরও একবার সেদিন হয়েছিল ৷ অকস্মাৎ নবদ্বীপে চৈতন্যচন্দ্রোদয় ; তারপর রূপ-সনাতন প্রভৃতি অসংখ্য কবি ধর্ম্মতত্ত্ববিৎ পণ্ডিত ৷ এদিকে দর্শনে রঘুনাথ শিরোমণি, গদাধর, জগদ্বীশ ;স্মৃতিতে রঘুনন্দন এবং তৎপরগামিগণ ৷ অাবার বাংলা কাব্যের জলোচ্ছ্বাস ৷ বিদ্যাপতি, চণ্ডিদাস, চৈতন্যদেবের পূর্বগামী , কিন্তু তারপরে চৈতন্যদেবের পরবর্ত্তিনী যে বাংলা কৃষ্ণবিষয়িণী কবিতা, তা অপরিমেয় তেজস্বিনী, জগতে অতুলনীয়া; সে কোথা হতে ? অামাদের রেনেসাঁস কোথা হতে ?

কোথা হতে সহসা এই জাতির অই মানসিক উদ্দীপ্তি হল ?


সেযুগের_ভারতে সার্বভৌম বোধকরি শ্রেষ্ঠতম পণ্ডিত-দার্শনিক-নৈয়ানিক, পরে তিনি পুরীতে চলে যান ৷ এবং নীলাচলেও মহাপ্রভুর (চৈতন্যদেবের) অাগমনের জমি প্রস্তুত হয় ৷ চৈতন্যদেবের অান্দোলন পাণ্ডিত্বের বিরোধী নয়, কিন্তু অবভাস প্রশ্রয় দেয় না ৷ চৈতন্যদেবের ভক্তি অান্দোলন ঋজু ও স্পষ্টবক্তা, সেজন্য নব্যন্যায়ের দাঁতভাঙা পাণ্ডিত্যকে পাষণ্ডী অাখ্যা দেওয়া হয়, চৈতন্যদেবের অান্দোলন জ্ঞানমার্গের বিরোধী নয়, তবে সহজিয়া লোকায়ত চেতনা বরাবরই জ্ঞানমার্গের নামে অবভাসের যথেচ্ছাচারের বিরোধী ৷ কারণ চৈতন্যদেবের উথ্বান বাঙালির মধ্যযুগের প্রথম জনঅান্দোলন , অার অবভাসের প্রধান উদ্দেশ্য গণমানুষকে বিভ্রান্ত করা ৷



#চৈতন্যদেবের অান্দোলন *বনমালীর পরজন্মের রাধা* হওয়ার অান্দোলনও বটে ৷ সেজন্য এই অান্দোলন পুরুষতান্ত্রিকতাকে সমূলে অাঘাত করে ৷ সহজিয়া সাম্যের চেতনা শুধু তাত্ত্বিক স্তরে নয়, ব্যবহারিক স্তরেও ছিল ৷ অসংখ্য নারী, অসংখ্য অব্রাহ্মণ গুরুপদে অাসীন হয়েছেন গৌড়ীয় বৈষ্ণব অান্দোলনে, এই অান্দোলনের মধ্যে স্থানে স্থানে ব্রাহ্মন্যবাদী পুরুষতান্ত্রিক ঝোঁক সত্ত্বেও ৷ মোটামুটিভাবে বলা যেতে পারে প্রচলিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী চৈতন্যদেবের চারশত নব্বই জন পরিকরের মধ্যে দুইশত উনচল্লিশ জন ছিলেন ব্রাহ্মণ, সাঁইত্রিশ জন বৈদ্য(ঈশ্বরপুরী, চৈতন্যদেবের প্রথম জীবনীকার মুরারীগুপ্ত, দু'জনেই বৈদ্য) উনত্রিশজন কায়স্থ, ষোলজন স্ত্রীলোক, ও দু'জন মুসলমান ৷ অর্ধেকের বেশি অব্রাহ্মণ ৷ নিত্যানন্দপ্রভুর সময় হতে সহজিয়ারা বৈষ্ণব অান্দোলনের অংশীদার হয়েছিলেন, তাঁদেরকেই জাত বোষ্টম বলা হয়, কারণ তাঁরা সহজিয়া ছিলেন বলে জাতপাত মানতেন না, ফলে জাতপরিচয় ছল না ৷ এই কথা অনস্বীকার্য যে সমাজে যাঁরা অাউটকাস্ট,তাঁদের দৃঢ়ভাবে একসূত্রে গ্রন্থিত করেছল বৈষ্ণব ভক্তি অান্দোলন ৷


#বৈষ্ণব_অান্দোলন প্রায়শ অাউটকাষ্টদের ক্ষমতায়ন, ক্ষতবিক্ষত মানুষদের শুশ্রূষালয়,

অাহত মানবসত্তার বাস্তব অাশ্রয় ৷ সেটাই অবশ্য ধর্মের প্রধান উদ্দেশ্য, মার্ক্সের ভাষায়ঃ অাত্মাহীন জগতের অাত্মা, হৃদয়হীন জগতের হৃদয়, নির্যাতিত মানুষের দীর্ঘশ্বাস, জনতার ওষুধ ৷ ঐহিক অাবিলতা থেকে উত্তরণ চাইছিলেন যারা, যাঁরা অন্যরকম মানুষ, যাঁরা বিপ্লবী,ভূতগ্রস্ত, তাঁদের অনক দীর্ঘশ্বাস মন্থন করে এই চৈতন্যসম্ভব ঘটেছিল ৷


#বাঙালির_হিয়া_অমিয়_মথিয়া নিমাই ধরেছে কায়া," সত্যেন দত্ত যথার্থই বলেছেন ৷ তবে বাঙালির অসীম বেদনা মন্থন করেও চৈতন্যসম্ভব ঘটছিল ৷ অার্যাবর্তের হাতে অাক্রান্ত, ইসলামের হাতে অাক্রান্ত, পরুষতান্ত্রিকতার হাতে অাক্রান্ত, বিস্মৃতির হাতে অাক্রান্ত, নালন্দা বিক্রমশীলা পুড়ে যাওয়ার অাগুনে অাক্রান্ত, মধ্যযুগের অনিবার্য মহাঝঞ্ঝায় অাক্রান্ত বাঙালির বেদনা, বাঙালির ক্রমশঃ কোনঠাসা হয়ে যাওয়ার বেদনা, এঅভাবে অনেক বেদনার বারুদ ঐকসঙ্গে জমে চৈতন্য বিস্ফোরণ ঘটেছিল ৷



*#সাংখ্য_অাশ্রিত_গীতার সেই শ্লোক বারবার স্মরণ করি—


"'যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত ৷ অভ্যুথ্বানম্ধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্ ॥ পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্ ৷ ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে ॥"'


***#চৈতন্যদেবের_সমাজের অভ্যন্তরিণ ক্ষেত্রে কর্মকাণ্ডের কথা জানা যায়;-অসত্য,অন্যায় সমাজে পরিব্যপ্ত হলে সমাজের বাহ্যিক ক্ষেত্রে তার শোধন বা পরিবর্ত্তন প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে ৷

কিন্তু মানুষ নিয়েই তো সমাজ ৷ সেই মানুষের অন্তর যদি কলুষিতই থাকে,তাহলে অসত্য- অন্যায়ের প্রতি তার সহজ টান কেউ অাটকাতে পারে না ৷ অার অসত্য অন্যায়ের সংসর্গে তার দ্বারা সমাজও কলষিত হয় ৷ যুগ যুগ ধরে মানব অতহাস এই তথ্যই দিচ্ছে ৷ তবে এই ইতিহাসের সঙ্গ পারম্পর্য রক্ষা করে অারেকট তথ্যপূর্ণ ইতহাস চল অাসছে ৷ যখনই সামাজিক গ্লানি পূর্ণমাত্রায় দেখা দিয়েছে,তখনই কোন না কোন সুনির্দিষ্ট কিংবা অারও একটু গভীরভাবে বলল সচিহ্নিত মানুষ নজের জীবন উসসর্গ করে সমষ্টি-জীন নিষ্কলুষ করবার সাধনায় মেতে উঠেছেন ৷ তখন, তাঁদেরই হাত ধরে সমাজের সর্বক্ষেত্রে ছুটে এসেছে নবজাগরণ (রেনেসাঁ)৷ সমষ্টির কাছে তাঁরা হয়ে উঠেছন সমাজ সংস্কারক, কোন কোনও ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশী মহামানব ৷ যে মহামানব জন-মানসকে যত বেশী পরিমাণে সুপ্রভাবিত করে জন-জীবন-শৈলী পবিত্রতর করতে পেরেছেন,তিনি মানুষের মাঝে, মানুষের কাছে তত বড় মহামানব, অতিমানব, অতিমানব কিংবা লোকোত্তরমানবরূপে রূপায়িত হয়েছেন ৷


*#সমাজ_সংশোধনের এই প্রক্রিয়া দুই ধারায় প্রবহমান হয় ৷ *এক বাহ্যিক ধারা ৷ *দুই অভ্যন্তরিণ ধারা ৷ সমাজের যেখানে যেখানে কলুষতা, গ্লানি বা দুর্নীতি, সেখানে সেখানে উপযুক্ত সংশোধনাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সমাজ গ্লানি মুক্ত করার প্রক্রিয়া হল প্রথম পর্য্যায়ের, এ কাজ প্রধানতঃ এবং প্রথাগতভাবে রাজা, রাজকর্মচারী অথবা রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধিগণেরই করণীয় ৷ কিন্তু তাঁরাও তো মানুষ তার উর্দ্ধে কিছু নন , তাই তাঁদেরকে নিয়ে সমাজের গ্লানি অপসারণে তখন পূর্ণ ভূমিকায় প্রকটিত হন সার্থক সমাজ সংস্কারক ৷ এ গেল বাহ্যিক ক্ষেত্রে সমাজ পরিবর্তন ৷ এক্ষেত্রে অাইনী বা শাস্তির ভয়ে অাপাতত সংশোধিত বা পরিবর্ত্তিত মানুষজন অাবারও কলুষতানুকুল পরিস্থিতির ব্যবহারে এবং অাপন স্বভাবজাত কারণে দুর্নীতি পরায়ণ হতে পারেন ৷ বাহ্যিক সমাজ সংশোধনের প্রাঙ্গনে এই এক বিরাট ফাঁক বা ত্রুটি ৷ তাই সমাজবিজ্ঞানীগণের চিন্তাভাবনায় এই প্রক্রিয়া সার্ব্বিক বা সর্ব্বাত্মক নয় ৷



*#এবার_সমাজের_অভ্যন্তরিণ

ক্ষেত্রের পরিবর্ত্তনর কথায় অাসা যাক:-মানুষ দুর্ব্বার কুবাসনা স্বার্থন্ধতায় মোহগ্রস্ত হয়েই দুর্নীতির অাশ্রয় নেয় ৷ দুর্ব্বাসনা বা স্বার্থসিদ্ধি বাসনা জাগে তার মনে ৷ তারই বহিঃপ্রকাশ ঘট তার দুষ্ককর্মের মধ্য দিয়ে সমাজের নানান ক্ষেত্রে ৷ অতএব বিষয়টি মানসিক,মন অন্তরেন্দ্রিয় ৷ তাই বিষয়টিকে অান্তরিক বা অভ্যন্তরিন বিষয়ও বলা যেতে পারে ৷সুনির্দিষ্ট বা সুচিহ্নিত সেই বিশেষ মানব তখন মানব মনকে বুঝতে পারে এবং কলুষমুক্ত করার প্রজত্নে যত্নশল হন ৷ সত্য,ন্যায়,শুভ, মঙ্গলময়ী কামনা নিয়ে পরম-প্রেম পূর্ণ ব্যবহারে মানুষের কাছে গিয়ে মানুষকে প্রভাবিত করবার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন ৷ তাঁর প্রীতিতে,মাধূর্য্যে,সহজ-সরল মানবীয় ব্যবহারে মানব মন অালোড়িত হয় ৷ স্বাভাবিকভাবেই

কলুষিত চিত্তবৃত্তি হেতু স্বার্থসিদ্ধিতে মস্তবড় প্রতিবন্ধকতা রচিত হয়,তখন এক শ্রেনীর কাম প্রতিহত হলে ক্রোধ উৎপন্ন হয় ৷অার সেই ক্রোধ পুঞ্জীভুত হয়ে সুচিহ্নিত মহামানবের শরীরে অাঘাত হানে ৷ মানব ইতিহাসে এ বড় কালিমালিপ্ত এবং বেদনাদায়ক অধ্যায় ৷ কিন্তু মহামানব তো মানব দরদের মূর্ত্ত বিগ্রহ ৷ মানব কল্যাণার্থে তাঁর জীবন তো উৎসর্গৃকৃত ৷ তাই এই জাতীয় অাঘাত বা রক্তপাতে মহামানবের অভিযান স্তব্ধীভূত হয় না ৷ বরঞ্চ অারও বলবতী ও বলীয়সী হয় ৷ তখন ক্রমে ক্রেমে অাঘাতকারী-দেরও মন প্রাণ গলতে থাকে ৷ তাঁদের মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করতে থাকে , যার ফলস্বরূপ তাঁদের মনে জাগে অনুশোচনা ৷ অনুশোচনার অঙ্গারে জ্বলতে থাকা হৃদয় জুড়ানোর রাস্তা তাঁরা খুঁজতে থাকে ৷ মহামানবের পরশে ক্রমে নমনীয় হতে থাকে তাঁরা ৷ নিজিকে সোঁপে দেন মহামানবের কাছে ৷ একসময় তাঁদের তথা সমাজের প্রতিটি মানুষের মনে-প্রাণে মানবীয় গুণের ছোঁয়া লাগে ৷ পরশমণির পরশে লোহা যমন সোনাতে পরিণত হয় তদ্রুপ মহামানব-পরশমণির সংসর্গে কলুষিত মানব মন বিজ্ঞানসম্মতভাবে ধীরে ধীরে সবার অলক্ষে প্রকৃত মানবত্বগুণে সোনাতে রূপান্তরিত হয় ৷ সময়ান্তরে মানব মনে পূর্ণ মানবত্ব জাগ্রত হয় ৷ মহামানবের কাজ কিন্তু চলতেই থাকে ৷ সেই মহামানব এরপর জীবপ্রীতি বা মানবপ্রীতির মনস্তাত্বিক অালম্বন অর্থাৎ ঈশ্বর প্রীতির সঙ্গে মানব মনকে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন ৷ সমর্পিত প্রাণ পেয়ে এই অতিমানবীয় কাজটি তিনি সুসম্পন্ন করতে থাকেন ৷ স্বাভাবিকভাবেই তিনি কৃতকার্য্য হন ৷ সমাজ তখন দেবতুল্য মানবে সুশোভিত হয় ৷ অার মানুষের অন্তর কলুষ মুক্ত হয়ে গেলে অাপনা হতেই সমাজের সর্বক্ষেত্রে নিষ্কলুষতা প্রতিভাত হয় ৷ সামগ্রিক বা সর্বাত্মকভাবে তখনই সমাজ সংশোধিত, কলুষমুক্ত বা গ্লানিশূন্য হয় ৷ শুধুমাত্র বাস্তব বোধ দিয়ে কোন কালে,কোন যুগে এই অত্যাশ্চর্য্য কর্মযজ্ঞ সম্পাদিত হয় নি ৷ গঢ়ভাবে তাকালে দেখত পাব, এটা সম্ভব হয়েছে মানবের মন দিয়ে ভাব রাজ্যে প্রবেশ করে তা বিলোড়িত করতে পারলেই ৷



*#ইতিহাস_বলছে, সর্বস্তরের মানব মনের অভ্যন্তর স্থিত ভাব রাজ্যে অালোড়ন তুলেছিলেন যে মহামানব, অাতিমানব বা লোকোত্তর মানব তিনি চৈতন্যদেব ৷ তাই তাঁর এই অান্দোলনকে বলা হয় ভাবান্দোলন ৷ ভাব দিয়ে ভাবরাজ্যে প্রবেশ করে ভাব সমুদ্রে ঢেউ তোলা ৷ এ অতি অসাধারণ কাজ ৷ অার অতি অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ছাড়া এই অতি অসাধারণ কাজ অসম্ভব ৷ তাই ঐতিহাসিক তথ্যের থেকেও গৌড়ীয় বৈষ্ণব সাহিত্যে,ইতিহাসে এবং দর্শনে মূলতঃ স্থান পেয়েছে ভাবের কথা বা ভাবলোচনা ৷ সর্বত্রই ভাবের ছড়াছড়ি ৷ এই ভাবের সামর্থ্যে সন্দেহ করার কোন অবকাশ নাই ৷ তার কারণ, একমাত্র ভাবই পেয়েছে অাজ থেকে পাঁচ শতাব্দী অাগে কল্মষক্লিষ্ট মানুষকে, শুধু মানুষই নয় সস্মাননীয় বৈষ্ণবাচার্য্যে রূপান্তরিত করতে ৷ যার ব্যপ্তি ঘটেছিল সমগ্র বঙ্গে তথা ভারতবর্ষে ৷ অার এখন ঘটছে সমগ্র বিশ্ব ৷ নিরন্তর তার ব্যপ্তি ঘটে চলেছে ৷ (তখন তার উদাহরণ ছিল,জগাই-মাধাই, মলয় চাঁদ কাজী, ডাকাত,উগ্রক্ষত্রিয়, বীরহাম্বির সিং,ইত্যাদি ইত্যাদি, এখন পর্যন্ত অগণিত,অসংখ্য ভবিষ্যতে অারও,অারও )৷


#চৈতন্যদেবের_বৈষ্ণব অান্দোলন সম্বন্ধে জানা যায়:-বৈষ্ণব অান্দোলন চৈতন্যদেব(১৪৮৬-১৫৩৩) প্রবর্তিত ধর্মীয় ও সামাজিক অান্দোলন, যা ভক্তি অান্দোলন নামেও পরিচিত ৷ তৎকালীন হিন্দু সমাজে প্রচলিত জাতিভেদ প্রথা এবং ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নদীয়ায় এ অান্দোলন গড়ে ওঠে ৷

বৈষ্ণব অান্দোলনের সূত্রপাত মূলত শুরু হয় চৈতন্যদেবের পূর্বে চণ্ডীদাস(১৪শ শতক) ও বিদ্যাপতির(অানুমানিক ১৩৭৪-১৪৬০)বৈষ্ণবপদ রচনার মধ্য দিয়ে; চৈতন্যদেব এতে নতুন মাত্রা যোগ করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে এটি একটি সামাজিক অান্দোলনে পরিণত হয় ৷ তখন এর নতুন নাম হয় গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম,যা সাধারণভাবে বাংলায় বৈষ্ণবধর্ম নামে পরিচিত ৷ হিন্দু সমাজে ভগবৎপ্রেম ও ভক্তিবাদ অাশ্রিত বৈষ্ণবধর্ম বিদ্যমান থাকলেও সুফি মতবাদের উদার মানবপ্রেম ও সাম্যনীতির অাদর্শ যুক্ত করে চৈতন্যদেব একে একটি নব্য ভাববাদী ধর্মমতের রূপ দেন ৷ তিনি রাধা-কৃষ্ণের জীবাত্মা-পরমাত্মার তত্ত্বকে গ্রহণ করে অচিন্ত্যদ্বৈতাদ্বৈতবাদের কথা বলেন ৷ কৃষ্ণের হ্লাদিনী বা অানন্দদায়িনী শক্তির মানবীরূপ হচ্ছে রাধা ৷ সুতরাং মূলে উভয়ে অদ্বৈত,কিন্তু দেহরূপে দ্বৈত; পুনরায় অদ্বৈত বা একাত্ম হওয়ার জন্যই তাঁরা মর্ত্যলীলা করেন ৷ প্রেম ও ভক্তি দিয়ে পরমাত্মাকে পাওয়া যায়; তাঁর সঙ্গে একাত্ম হওয়া যায় ৷ রাধাকৃষ্ণের প্রেমসাধনা একাত্ম হওয়ার সাধনা ৷ এজন্য তা 'দ্বৈতাদ্বৈত তত্ত্ব' নামে পরিচিত ৷ এ তত্ত্বের উপলব্ধি ও সাধনা সহজবোধ্য ও সহজসাধ্য নয় বলে একে 'অচিন্ত্য' বলা হয়েছে ৷***



*#গৌড়ীয়বৈষ্ণব_ও_পূর্বেরবৈষ্ণব

ধর্মের পার্থক্য;-(১) গৌড়ীয়-বৈষ্ণবধর্মে রাধাকৃষ্ণই মূল, কিন্তু পূর্বের বৈষ্ণবধর্মে বিষ্ণুকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ৷ চৈতন্য অাবির্ভাবের অাগেও কিছু ভক্তকবি রাধাকৃষ্ণ লীলা রচনা করেছিলেন, তবে তা সীমাবদ্ধ ছিল ৷ (২)গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মে রাধাকৃষ্ণের মিলিত তনু হিসেবে শ্রীচৈতন্যদেবের ভজন করা হয়, অাগে যা ছিল না ৷ (৩) গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের মূল হল সংকীর্তন, যা অাগের তুলনায় অালাদা ৷


*#বৈষ্ণবধর্মে_কীর্তন_প্রচলিত ছিল,চৈতন্যদেব পদযাত্রাসহ নামসংকীর্তন ও নগরকীর্তন প্রবর্তন করে এতে নতুনমাত্রা যোগ করেন ৷ ভক্তিভাবাশ্রিত নামসংকীর্তনে বৈষ্ণব অান্দোলন প্রাণবন্ত ও গতিশীল হয় ৷ এ কারণে বৈষ্ণব অান্দোলন 'ভক্তি অান্দোলন' নামেও অভিহিত হয় ৷ অাবার সার্বিকভাবে চৈতন্যদেবের অবদানের কথা স্মরণ করে একে 'চৈতন্য অান্দোলন'ও বলা হয় ৷ চৈতন্যদেবের এই অান্দোলনের প্রধান কারণ দু'টি; এক-স্বধর্ম ও স্বসমাজের সংস্কার সাধন এবং দুই-শাসক শ্রেণির ছত্রছায়ায় ইসলাম ধর্মের ক্রমবর্ধমান প্রভাব রোধ করা ৷ চৈতন্যদেব এক দিক বিরাজমান হিন্দু অভিজাতদের ম্লেচ্ছাচার রোধ করেন, অপরদিকে নামসংকীর্তনের মাধ্যমে সর্বসাধারণকে নব্য প্রেমধর্মে সমান অধিকার দেন ৷ এভাবে চৈতন্যদেব উচ্চ ও নিম্ন বর্গকে অভিন্ন ধর্মাচরণ ও ভাবাদর্শে পরস্পরর কাছে এনে এক অাত্মীয়ভাবাপন্ন হিন্দু সমাজ গড়ে তুলত চেয়ে ছিলেন ৷


*#চৈতন্যদেবের_সময়ে_হিন্দু সমাজের অবস্থা ছিল খুবই সঙ্কটজনক,সমাজে তখন বর্ণভেদ ও জাতিভেদ প্রথার কারণে অস্পৃশ্যতা, অস্পৃশ্যতার কারণে বৈষম্য এবং বৈষম্যের কারণে সামাজিক অনৈক্য বিরাজ করছিল ৷ উপরন্তু সতী প্রথা, কৌলীন্য প্রথা, বাল্যবিবাহ, জাতিচ্যুতি, প্রায়শ্চিত্ত ইত্যাদি সংস্কার হিন্দু সমাজকে নানাদিক থেকে অাড়ষ্ট করে রেখেছিল ৷ চৈতন্যদেব হিন্দু সমাজের এই অচলায়তন ভেঙে তাতে মানবতার নবপ্রাণ সঞ্চার করেন ৷

চৈতন্যদেবের কাছে কোনও জাতিভেদ,ধর্মভেদ,বা বর্ণভেদ ছিল না ৷ তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে প্রচার করেন, কৃষ্ণভক্তদের মধ্যে কোনও জাতিকুল বিচার নেই, সবাই সমান ৷ বৈষ্ণব অান্দোলনের মূল শক্তি এখানেই নিহিত ৷



*#মধ্যযুগে_বিভিন্ন_বর্ণশ্রেণীতে বিভক্ত হিন্দু সমাজে চৈতন্যদেবের এই মতবাদ ছিল কল্পনাতীত ৷ তখন সমাজের উচ্চে ছিল ব্রাহ্মণ, অার নিম্নে ছিল শূদ্র ৷ ব্রাহ্মণ ও শূদ্রের সামাজিক সংস্কারের অধিকারে অাকাশ-পাতাল পার্থক্য ছিল ৷ তুর্কি বিজয়ের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারের কঠোরতা অারও বৃদ্ধি পায় ,এরূপ অবস্থায় ব্রাহ্মণ সন্তান চৈতন্যদেব- চণ্ডাল,মুচি, ম্লেচ্ছ,বৈশ্য,কায়স্থ,ব্রাহ্মণ সকল বর্ণের মানুষকে কৃষ্ণের প্রেমমন্ত্রে ডাক দিয়ে ঐক্যসূত্রে বাঁধার চেষ্টা করেন ৷ চৈতন্যদেব নিজে চর্চা করে অন্যকে শিক্ষা দিতেন ৷ চৈতন্যদেব জাতিভেদের কঠোরতা শিথিল করেন ৷ চৈতন্যদেবের কাছে শাস্ত্রের চেয়ে মানুষের জীবনর মূল্য ছিল অধিক ৷ চৈতন্যদেবের প্রেমভক্তিবাদে সমাজের সব স্তরের মানুষের সমাবশ ঘটছল ৷ এতে সামাজিক সচলতার লক্ষণ প্রকাশ পায় ৷ সেকালর বর্ণবাদী হিন্দু সমাজের প্রেক্ষাপটে বৈষ্ণবরা এ ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক চেতনার পরিচয় দেন ৷


*#শীর্ষস্থানীয়_বৈষ্ণব_গুরুদের মধ্যে নারীরও স্থান ছিল, নিত্যানন্দপ্রভুর পত্নী ও বীরভদ্রের বিমাতা জাহ্নবীদেবী বৈষ্ণব কেন্দ্র গড়ে তুলে ধর্ম প্রচার করেন, জাহ্নবীদেবী ভক্তদের চোখে 'ঈশ্বরী' রূপে খ্যাত ছিলেন ৷ খেতুরী উৎসবেও জাহ্নবীদেবী গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন ৷বিষ্ণুপুরের শ্রীনিবাস অাচার্যের কন্যা হেমলতা ঠাকুরানিও অনুরূপভাবে অাখরা পরিচালনা করেন, নাথপন্থায় মহাজ্ঞানের অধিকারিণী ময়নামতীও গুরুর অধিকার পান ৷ ধর্মপ্রচারে নারী ও পুরূষকে সমান অধিকার দিয়ে বৈষ্ণবগণ প্রগতিশীল সাংগঠনিক চেতনার পরিচয় দেন ৷


*#চৈতন্যদেবের ১৪৮৬-১৫৩৩ প্রভাবকাল মধ্যযুগের বাংলা ও বাংলা সাহিত্যের এক গৌরবময় ইতিহাস ৷ চৈতন্যদেবের যুগান্তকারী অাবির্ভাবের ফলে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতিতে যে নবজাগরণ দেখা দিয়েছিল,তা সুনিশ্চিতভাবেই সাহিত্যর গতিপথকেও প্রভাবিত করে ৷ প্রতিষ্ঠাপর্ব বাঙালি সংস্কৃতির দু'টি ধারার যে মিলন ঘটেছিল, এখানে তা কোমল ও ললিত ভাবধারায় সঞ্জীবিত হয় ৷ প্রেম ও ভক্তির ভাবরসপ্রবাহে বাঙালি নিজের মুক্তিমন্ত্র শুনতে পায় ৷ অন্যদিকে, রাজশক্তি হারিয়ে বাঙালি যে হীনমন্যতায় ভুগছিল, সে অবস্থার মৌলিক পরিবর্তন না ঘটলেও,ভাবের দিক থেকে চৈতন্যদেব বাঙালিকে উদ্ধার করেন ৷ অার এই কারণেই চৈতন্যদেব প্রবর্তিত এই ধর্ম অান্দোলন একটা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অান্দোলনও বটে ৷ এই অান্দোলনের ফলে বাঙালি জাতি তার অাত্মসস্মান ফিরে পায় ৷ পরাজিতের মনোভাব থেকে মুক্তি অার চিত্তের গভীর ভাব প্রবণতায় নতুন মূল্যবোধের অনুসন্ধান বাঙালির সংস্কৃতি চর্চায় গভীর প্রভাব বিস্তার করে ৷ রচনার প্রাচুর্য ও উৎকর্ষে বাংলা সাহিত্যের নব নব দিগন্ত উন্মোচিত হয় ৷ চৈতন্য সংস্কৃতি মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে ভাব ও রূপের বিশেষ পরিবর্তন সাধন করেছিল ৷ এই পরিবর্তনের দু'টি প্রধান দিক-প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ৷ প্রত্যক্ষ প্রভাবের অাবার দু'টি দিক- বৈষ্ণব পদাবলীর গৌরচন্দ্রিকা ও গৌরপদাবলী ধারা এবং চৈতন্যজীবনী সাহিত্য ৷ চৈতন্য সংস্কৃতির পরোক্ষ প্রভাব দেখা যায়-চণ্ডীমঙ্গল, মনসামঙ্গল, ও ধর্মমঙ্গল ধারার মঙ্গলকাব্য, রামায়ণ,মহাভারত,ভাগবত অনুবাদ সাহিত্য,শাক্তপদাবলী ও লোকসাহিত্য ৷


*#চৈতন্যদেবের_অাবির্ভাবে_যে ভাববিপ্লব এসেছিল,তার গভীর ছাপ পড়েছিল বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যে ৷ প্রাক চৈতন্যযুগে মানব-মানবীর পার্থিব প্রেমই ছিল রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক পদাবলীর মূল ভিত্তি ৷ কিন্তু চৈতন্যদেবের অাবির্ভাবের পর পার্থিব মানব-মানবীর প্রেম পরিণত হয় অপার্থিব রাধাকৃষ্ণ লীলায় ৷ নব জন্মান্তর ঘটে সমগ্র পদাবলী সাহিত্যের ৷ শুধু তাই নয় 'গৌরচন্দ্র' অর্থাৎ স্বয়ং চৈতন্যদেব(মহাপ্রভু)কে নিয়েও রচিত হয় পদাবলীর দু'টি বিশেষ শাখা-'গৌরচন্দ্রিকা' ও 'গৌরপদাবলী' বা গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ ৷ এই পদগুলি বৈষ্ণব সাহিত্যের নবতর সংযোজন ৷ তাই এককথায় চৈতন্যদেব প্রভাবে পদাবলী সাহিত্যে এক ব্যপকতর ও সূক্ষ্মতর পরিবর্তন দেখা যায় ৷ চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রত্যক্ষ ও সুপরিণত রূপ জীবনীসাহিত্যের মধ্যেই বিকশিত ৷ চৈতন্যদেবের দেবোপম চরিত্রকে ঘিরে বাংলা সাহিত্যে সর্বপ্রথম জীবনীসাহিত্য গড়ে ওঠে ৷ সূতরাং নবতর সংযোজনের পরিপেক্ষিতে এই সাহিত্যের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম ৷ বৃন্দাবন দাস তাঁর 'চৈতন্যভাগবত' গ্রন্থের মাধ্যম এই নতুন পথের দ্বার উদ্ঘাটন করেন৷ পরবর্তীকালে কৃষ্ণদাস কবিরাজের 'শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত' লোচনদাসের 'চৈতন্যমঙ্গল', জয়ানন্দের 'চৈতন্যমঙ্গল' প্রভৃতি চরিতসাহিত্যের এই শাখাটিকে সমৃদ্ধতর করে ৷ জীবনীসাহিত্যের এই উদ্বোধন পরবর্তীকালেও নব নব অাঙ্গিকে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে ৷



*#চৈতন্যযুগে_চৈতন্যদেবের অাচরিত প্রেমধর্ম ও চৈতন্যদেবের ত্যাগ-বৈরাগ্যপূত অাদর্শের দিব্যপ্রেরণা অাশ্চর্য শক্তিসঞ্চারে সমাজ মনে ও বহির্জীবনে স্বর্গ-মর্ত্যের ব্যাবধান ঘুচিয়ে বস্তু সমর্থনের অপূর্ব সুযোগ দিয়েছে ৷ ভাবজীবন ও কর্মজীবন দিব্যপ্রেমের প্রেরণাসাম্যে সমন্বয়ের অক্ষপথে একই লক্ষ্যবিন্দুকে প্রদক্ষিণ করেছে ৷ কি কাব্যের নন্দনকাননে, কীর্তনগীতির অমৃতনির্ঝরে, পূতচরিত কথায় মহিমার ক্ষেত্রে, লীলাস্মরনের অাধ্যাত্মিকতায়,দর্শনের প্রত্যয় প্রতিষ্ঠায়,ভাবসাধনার নিগূঢ় কল্পলোকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে চৈতন্যযুগে যে সুমহৎ প্রেরণার অভিব্যক্তি ঘটে, সত্যই তার তুলনা নাই ৷ চৈতন্যদেব(মহাপ্রভু)মাতৃভক্ত শিরোমণি ৷ তাঁর মাতৃভক্তি জীবের অাদর্শ-পরম শিক্ষার স্থল৷***


*** "'#কিন্তু_ইতিহাসের_বিচার তো অনেক পরের ব্যাপার ৷ ত্রেতাযুগের রঘুপতি বা দ্বাপরের যদুপতিকে নিয়ে ঐতিহাসিক অনুসিদ্ধান্তের সঙ্গে যেমন ভক্তহৃদয়ের বিশ্বাস মেলে না , ইতিহাসের মহাবিপ্লবী শ্রীচৈতন্য ও ভক্তহৃদয়ের পরমেশ্বর শ্রীচৈতন্যদেবেরও তেমনই পার্থক্য ৷ অথচ সত্যের নিরিখে দুটির কোনটিই উপেক্ষনীয় নয় ৷

বিশ্বাসেরও_বিশ্বাস্য ভিত্তি থাকে ৷ যেমন;— ভাগবতে বর্ণিত যশোদাদুলালের পৌরাণিক পৌরুষের কথা শুধুই শোনা গেছে বা পঠিত হয় ; কিন্তু ষোড়শ শতকের রূঢ় বাস্তবতায় শচীনন্দনের লীলা ও অবদান প্রত্যক্ষকারী মহাভাগ্যবান্ ব্যক্তিবর্গ সেই মুহূর্তে "' যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত ৷ অভ্যুথ্বানধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্ "' ॥ (#যখনই_ধর্মের গ্লানি এবং অধর্মের অভ্যুথ্বান হয় ,, সেই সময়েই অামি নিজেকে সাকাররূপে প্রকট করি দেহ ধারণ করি)—অঙ্গীকারের অমোঘত্ব নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করে নিতে ভুল করেন নি ৷


#অাসলে_অাজকের_মতো_এত বিচার—বিশ্লেষণের কোন প্রয়োজনই সেদিন হয়নি ৷ অাপন মনের উপলব্ধিজাত মন্ত্রকেই অভিজ্ঞতালব্ধ পরম বিশ্বাসে রূপান্তরিত করে নিয়েছিলেন তখনকার চৈতন্যভক্তগণ ৷ তাঁরা বিশ্বাস না করে পারতেন না—তিনি স্বয়ং কৃষ্ণ , দ্বাপর যুগের কৃষ্ণের মতো তিনি কৃষ্ণবর্ণ ছিলেন না , তিনি গৌরবর্ণ—গৌরাঙ্গ—গৌরহরি"'*যুগধর্ম_হরিণাম সংকীর্তনের মাধ্যমে তিনি ভগবৎপ্রেম প্রচার করেছেন এবং সুমেধাবান্ ব্যক্তিরা ভগবৎ—সাক্ষাৎ প্রাপ্তির এই সহজ পথ গ্রহণ করে ধন্য হয়েছেন"'*#ভক্তহৃদয়ে কোন সংশয়ই ছিল না—মৎস্য কূর্ম ইত্যাদি দশাবতারের যুগ অতিক্রান্তের পর সত্যই একদিন " একাদশতম" বিষ্ণু—অবতাররূপে এসেছিলেন এই নদের চাঁদ—ভারতপ্রদীপ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যদেব ৷



#বৈষ্ণব ও জাতবৈষ্ণব সম্বন্ধে

;— বাংলার ধর্মীয় জাতপাতের সংকটময় মুহূর্তে চৈতন্য মহাপ্রভুর অাবির্ভূত হয়েছিলেন ৷ ব্রাহ্মন্যবাদের এই সর্বনাশা জাতিভেদ প্রথা তথা অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে চৈতন্য মহাপ্রভু বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন ৷ প্রচার করলেন তাঁর উদার বৈষ্ণব মতবাদের ৷ এখানে ব্রাহ্মণ-শূদ্র-মেথর-মুচী বা হিন্দু-মুসলমান কোন জাত বিচার ছিল না ৷ তিনি স্বয়ং উচ্চ ব্রাহ্মণ হয়েও স্বর্ণকার,মালাকার, শঙ্খকার,গোয়ালা প্রভৃতি শূদ্র ও পেশা ভিত্তিক জাতিসমূহের লোকদের সঙ্গে ব্যাক্তিগত সম্পর্ক করলেন, তাদের কাছে টেনে নিলেন, বুকে জড়িয়ে ধরলেন ৷ তাইতো যবন হরিদাসও তাঁর ভক্ত হত পেরেছিলেন,তাঁকেও তিনি কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ৷ চৈতন্য মহাপ্রভুর কাছে সবাই ছিলেন সমান, সবাই মানুষ ৷ তাইতো তিনি বললেন;—


"চণ্ডালোপী দ্বিজশ্রেষ্ঠ হরিভক্তি পরায়ণ ৷ হরিভক্তি বিহীনশ্চ বিপ্রহপি শপচাধম্ ॥" অর্থাৎ—

একজন

চণ্ডালও দ্বিজ থেকে শ্রেষ্ঠ যদি তার মধ্যে হরিভক্তি থাকে, ঈশ্বরের প্রতি প্রেম থাকে ৷ অার কেউ যদি বিপ্র হয়ে জন্ম নিয়েও হরিভক্তি বিহীন হয় তাহলে সে অধম ৷


অাবার তিনি রণকণ্ঠে বললন;—


"কিবা বিপ্র কিবা নামী শূদ্র কেন নয় ? যেই কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা সেই গুরু হয় ॥"

#সে যুগের সাপেক্ষে

বিচার করলে, এই বানী কত বড় বৈপ্লবিক তা সহজেই বোঝা যায় ৷


#চৈতন্য মহাপ্রভুর লেখা বৈষ্ণব ধর্মের ওপর কোন বই পাওয়া যায় না ৷ বৈষ্ণব ধর্মের অাদর্শ কি, লক্ষ্য কি ? বৈষ্ণবদের অাচরণ কেমন হবে,বৈষ্ণব ভক্তির তাত্ত্বিক রূপটাই বা কী ? এসব ব্যাপারে মহাপ্রভুর লেখা প্রামান্য কোন তথ্য বা বই পাওয়া যায় না ৷


বৈষ্ণব ভক্তির তাত্ত্বিক রূপ বৃন্দাবনে পরিস্ফুট হয়েছিল ৷ যাঁদের নিরন্তর চেষ্টার ফলে "গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম" একটা বিশিষ্ট ধর্মীয় মতবাদরূপে প্রতিষ্ঠিত হয় তাঁরা বৃন্দাবনের ছয় গোস্বামীরূপে অাজও বিখ্যাত ৷ এঁরা হলেন সনাতন গোস্বামী, তাঁর ভাই রূপ গোস্বামী, তাঁদের ভাতুষ্পুত্র জীব গোস্বামী, গোপালভট্র গোস্বামী, রঘুনাথভট্র গোস্বামী এবং রঘুনাথ দাস গোস্বামী ৷


#বৃন্দাবনের গোস্বামীদের রচিত বৈষ্ণব ধর্ম গ্রন্থাবলী বাংলায় নিয়ে অাসেন শ্রীনিবাস অাচার্য, নরোত্তম দত্ত ও শ্যামানন্দ নামে তিনজন প্রভাবশালী বৈষ্ণব ৷ এঁরা এই বৈষ্ণব গ্রন্থগুলি প্রচারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় বৈষ্ণবদের নিয়ে "মহোৎসব" অনুষ্ঠানের অায়োজন করতে থাকেন ৷


#বৈষ্ণবদের সবচেয়ে বড় মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছিল খেতুরিতে ৷ এই খেতুরি মহোৎসবেই বৃন্দাবনে রচিত শাস্ত্রগুলি বাংলার "বৈষ্ণব শাস্ত্র" রূপে স্বীকার করে নেওয়া হয়, অার বৈষ্ণবদের অাচার-অাচরণ, ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির বধিমালা নির্দিষ্ট করে গৃহীত হয় ৷ ঐতিহ্য অনুসারে খেতুরীতেই গোস্বামীদের দ্বারা রচিত শাস্ত্র সর্ব বৈষ্ণব গ্রাহ্য হয়েছিল ৷ রাধাকৃষ্ণের যুগল মন্ত্রে চৈতন্যদেবের মূর্তিপূজার শুরু হয় ৷


বাংলার বিভিন্ন জাতির লোকেরা বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করেন, বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করার পর তাদের বলা হয় "জাত বৈষ্ণব"৷ এই জাত বৈষ্ণব ঐতিহ্য থেকে এটাই বলা যায় যে, চৈতন্যেদেবের কালে অদ্বৈতপ্রভু, নিত্যানন্দপ্রভু, বৈষ্ণব জগদীশ পণ্ডিত,বক্রেশ্বর,গদাধর পণ্ডিত, মানুষের জাতি পরিচয়কে প্রাধান্য দেন নাই ৷

"(তথ্য সংগ্রহ বিভিন্ন সূত্র)"

"জয় মহাপ্রভু !"

コメント


Be Inspired
International Mula Gaudiya Sampraday Trust 

Write Us

For Any Assistance Or  Query Please Email Or Call To Us

Imgaudiyas@gmail.com

+918439217878

Vrindavan,Uttar Pradesh, India

  • Facebook
  • Facebook
  • YouTube Social  Icon
  • Whatsapp social icon
  • YouTube Social  Icon
  • Twitter Social Icon
  • instagram social icon
  • Facebook Social Icon

Success! Message received.

bottom of page